দুর্জয় দাশ গুপ্ত »
একজন লেগ স্পিনারের আক্ষেপ বাংলাদেশ ক্রিকেটে দিনদিন যেন বাড়ছে। কবে মিলবে একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেগ স্পিনার এই প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা।
তবে লেগ স্পিনারের কথা আসলেই মনে পড়ে জুবায়ের হোসেন লিখনের কথা। দেশের ক্রিকেটের হাল হয়তো তিনিই ধরতে পারতেন। কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েও খুব বেশিদিন টিকে থাকতে পারেন নি। ২০১৪ সালের অক্টোবরে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক হয় লিখনের। এরপর ৯ মাসের ব্যবধানে ৬ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে ও ১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন জুবায়ের। এরপর জাতীয় দল থেকেই নয়, ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেও হারিয়ে যেতে বসেছেন জুবায়ের।
এবার জুবায়ের হোসেন লিখনের গল্প শুনেছে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কম।
পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।
নিউজক্রিকেটঃ ক্রিকেটের শুরু কিভাবে হয়েছিলো?
জুবায়ের হোসেনঃ আসলে ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিলো। আমার বড় ভাইয়ের ক্রিকেট খেলতো। তাদের দেখে আগ্রহ আরো বাড়তে থাকে। পরে নিজেও ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে যাই।
নিউজক্রিকেটঃ বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেই তো একটা সময় জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পেয়েছেন। প্রতিবন্ধকতা ছিলো কেমন একজন লেগ স্পিনার হিসেবে?
জুবায়ের হোসেনঃ প্রতিবন্ধকতা ছিলো অবশ্যই। আমি বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে অনূর্ধ্ব-১৪ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যন্ত খেলেছি। আল্লাহর রহমতে ভালো করেই একটা ভালো পর্যায়ে গিয়েছি। অনূর্ধ্ব-১৯ এ আমি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলাম। ক্রিকেট যখন শুরু করি তখন পরিবারের সমর্থন ছিলো না। কিন্তু পরে যখন ভালো করতে শুরু করলাম তখন থেকে একটু একটু সমর্থন পেয়েছি।
নিউজক্রিকেটঃ বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তখন চ্যালেঞ্জ কেমন ছিলো?
জুবায়ের হোসেনঃ আমি বাগেরহাটে খেলেছি। আবু হায়দার রনি, মোসাদ্দেক হোসেন, তাসকিন আহমেদ, লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত আমরা একসাথে খেলেছি। যদিওবা মিরাজ ও শান্ত আমার জুনিয়র তবে অনূর্ধ্ব-১৯ আমরা একসাথে খেলেছি। আমি যাদের নাম বললাম তারা সবাই এখন জাতীয় দলে খেলছে। কাজেই বুঝতেই পারছেন চ্যালেঞ্জ কেমন ছিলো। তবে একটা ব্যাপার হলো আমি পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে সামনের সারিতেই থাকতাম। আমার খুব একটা সমস্যা হয়নি।
নিউজক্রিকেটঃ আমাদের দেশে বড় একটা সমস্যা হলো ভালো মানের লেগ স্পিনারের অভাব। আপনি নিজে একজন লেগ স্পিনার। বাংলাদেশের হয়ে কয়েকটা ম্যাচ খেলেছেন। এ ব্যাপারটা আপনি কিভাবে দেখছেন?
জুবায়ের হোসেনঃ একটা সত্য কথা হলো যদি পারফরম্যান্স ভালো না থাকে তবে কোন জায়গায় কেউ সুযোগ দিবে না। তবে আমি যতদিন জাতীয় দলে খেলেছি আল্লাহর রহমতে ভালোই খেলেছি। একটা লেগ স্পিনারের কাজ হলো উইকেট নেয়া, প্রয়োজনে ব্রেকথ্রু এনে দিবে। আমি জাতীয় দলে যতটা ম্যাচই খেলেছি আমি আমার কাজটা করেছি। মুশফিক ভাইও (মুশফিকুর রহিম) বলছে, ‘তোর এই গুণটা ভালো। রিদমটা ধরে রাখার চেষ্টা কর।’ জাতীয় দলের শেষ টেস্ট যেটা খেললাম সেটায় তিন উইকেট পেয়েছিলাম। এরপর বাদ যখন পড়লাম তখন ঘরোয়া লিগে অনিয়মিত হয়ে পড়ি। যদি আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেললাম তবে পারফরম্যান্স আরো ভালো হতো। একজন প্লেয়ার শিখবেই ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আর জাতীয় দল গিয়ে যা শিখেছে তার পুরোটা দিবে। জাতীয় দল কিন্তু দেওয়ার জায়গা, শিখার না। আমাদের দেশে যা লেগ স্পিনার আছে তারা কেউই কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত না। এটা একটা বড় সমস্যা না। যদি ঘরোয়া ক্রিকেট না খেলে তাহলে তার ভুলটা ধরবে কিভাবে, শিখবে কিভাবে। তাই ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেলে তখনই কোয়ালিটি লেগ স্পিনার পাওয়া যাবে।
নিউজক্রিকেটঃ আপনার নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কিভাবে পরিকল্পনা করছেন?
জুবায়ের হোসেনঃ এখন খুব খারাপ একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। কেউই খেলায় নেই এখন। সবাই ঘরে বসে চেষ্টা করছে যতটুকু কাজ করা যায়। আমি ঢাকার বাইরে এখন, আমার এলাকায়। এখানে থাকায় একটা ভালো ব্যাপার হলো আমি কিছু কাজ করতে পারছি, জিমও করছি। ফাঁকা মাঠে আমি একা রানিং করতে পারছি। ব্যাট-বল নিয়ে অনুশীলন করা ছাড়াও আরো অনেক কিছু করার আছে আমাদের।
নিউজক্রিকেটঃ বোলিংয়ে আপনার আদর্শ কে?
জুবায়ের হোসেনঃ যখন ক্রিকেট শুরু করি তখন শেন ওয়ার্নের বোলিং ভালো লাগতো। তবে আমি ওয়ার্নের খেলা খুব বেশিদিন দেখতে পারি নি। এখন আমার ভালো লাগে চাহালের বোলিং। চাহালের অ্যাকশন আর কন্ট্রোল খুব ভালো।
নিউজক্রিকেটঃ স্থানীয় কোচদের কাছ থেকে কেমন সহায়তা পাচ্ছেন?
জুবায়ের হোসেনঃ স্থানীয় কোচ বলতে শাহীন ভাই আমাকে নিয়ে কাজ করেছে। উনাকে আমি সবসময়ই পেয়েছি। বাবুল স্যারের সাথেও আমি কথা বলেছি। উনি বলেছেন আমাকে নিয়ে কাজ করবেন। এছাড়া খালেদ মাহমুদ সুজন স্যারের সাথেও আমার কথা হয়েছে। উনিও আমাকে সময় দিবেন বলেছেন। তাদের সান্নিধ্য পেলে অবশ্যই অনেক কিছু শিখতে পারবো এবং আমার জন্য ভালো হবে।
নিউজক্রিকেটঃ বিদেশি কোচদের সাথে কাজ করার তো সুযোগ মিলছে না।
জুবায়ের হোসেনঃ আসলে জাতীয় দলের বাইরে থাকায় বিদেশি কোচদের সাথে কাজ করতে পারছি না। আমি মনে করি বোর্ড যদি এ ব্যাপারটা চিন্তা করে তবে আমাদের জন্য ভালো। আমি বলছি না জাতীয় দলে সুযোগ দিতে হবে এখনই যদি আমাদেরকে বিদেশি কোচদের সাথে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয় তবে আমরা আরো অনেক কিছু শিখতে পারবো।
নিউজক্রিকেটঃ ভবিষ্যৎ ভাবনা কি?
জুবায়ের হোসেনঃ আমি কোন ফরম্যাট নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করি না। আমি যখন জাতীয় দলে খেলেছি তখন টেস্টে ভালো করার পরে ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়েছি এরপর একটা টি-টোয়েন্টিও খেলেছি। আমি মনে করি ক্রিকেটের তিনটা ফরম্যাটেই খেলার সামর্থ্য আমার আছে। যদি বেশি বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই তবে আমার জন্য ভালো হবে।
নিউজক্রিকেটঃ মানসিকভাবে নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করছেন?
জুবায়ের হোসেনঃ ভাই আসলে আমি মনে করি আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতদিনে ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দিতো। লম্বা সময় ধরে আমি খেলতে পারিনি। কিন্তু আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়িনি। নিজের উপর আস্থা রেখেছি। এখন আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করেছি। আমি বিশ্বাস করি যদি পরিশ্রম করি তবে সেটার পুরস্কার পাবো। তাই এভাবেই এখন চিন্তা করছি।
নিউজক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
জুবায়ের হোসেনঃ আপনাকেও ধন্যবাদ এবং নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের জন্য শুভেচ্ছা।