নিউজ ডেস্ক »
প্রায় এক যুগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কখনো দলে তার জায়গা পাকোপোক্ত হয়নি। ভালো করলে টিকে গেছেন আর খারাপ করলে জায়গা ছেড়েছেন। এভাবেই চলেছে তার ক্যারিয়ার। তিনিও এখন এসবে আর হতাশ হোন না বলেই যখনি দলে ডাক পেয়েছেন, সুযোগের সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। বলছিলাম ইমরুল কায়েসের কথা। দলের প্রয়োজন আর কম্বিনেশন মেলাতে নিজের পছন্দের পজিশন পর্যন্ত তিনি ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন পজিশনে খেলেছেন বহুবার। গেলোবারের এশিয়া কাপে দেশ থেকে দীর্ঘ ভ্রমণ করে পরেরদিন মাঠে নেমে দলের প্রয়োজনে ভিন্ন পজিশনে খেলে আফগানস্থানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সেই জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন। ২০১৫ খুলনা টেস্টে ইমরুল করেন ১৫০ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। তামিমের সাথে গড়ে তোলেন তখনকার ৩১২ রানের সেরা পার্টনারশিপ। যদিও সেই পার্টনারশিপ পরবর্তিতে সাকিব-মুশফিকের কাছে হাত বদল হয়েছে। ইমরুল কায়েস ১২ বছর ক্যারিয়ারের এই পর্যন্ত এসে রান করেছেন ৪৩৫২। বল খেলেছেন ৭২৯৯টি। চার মেরেছেন ৪৯২টি ছক্কা মেরেছেন ৫১টি। ফিফটি করেছেন ২০ টি সাথে সেঞ্চুরি করেছেন ৭টি।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে মাঠের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফরা সবাই ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। আর এই অবসর সময়টাতে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সাথে নিজের বর্তমান ক্যারিয়ার এবং ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন ওপেনার ইমরুল কায়েস।
নিউজ ক্রিকেটঃ বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনের লম্বা এই সময়টা কিভাবে অতিবাহিত করছেন?
ইমরুল কায়েসঃ সারাদিন পরিবারের সাথেই থাকছি। বাচ্চাদেরকে সময় দিচ্ছি। আর বিসিবি থেকে ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য কিছু কাজ দিয়েছে। বিকাল বেলায় বের হয়ে, বাসার পাশে একটা মাঠ আছে সেখানে সেই কাজ গুলো করার চেষ্টা করি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ক্যারিয়ারের বয়স তো প্রায় এক যুগের মতো, সেক্ষেত্রে দেখা গেছে আপনি সবসময় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন স্থায়ী হতে পারেননি কখনো এর কারণ কি?
ইমরুল কায়েসঃ এটার কারণ হয়তো পারফরম্যান্স। দেখা গেলো আমি ভালো পারফরমেন্স করতে পারিনি তখন দল থেকে বাদ পড়েছি। এর কিছুদিন পরই হয়তো আবার ভালো করে দলে এসেছি আবার খারাপ করেছি তখন দল থেকে আবার বাদ পড়েছি। ক্যারিয়ারে ত সবারই ভালো খারাপ সময় থাকে। সবসময় চেষ্টা করি ভালো কিছু করার।
নিউজ ক্রিকেটঃ একবার বাংলাদেশ দলের উইকেটের পিছনে আপনাকে দেখা যায়, সেইবার আপনি ৫টি ক্যাচ নিয়েছিলেন কেমন অনুভূতি হয়েছিলো তখন?
ইমরুল কায়েসঃ ওটা নিউজিল্যান্ডে হয়েছিলো, বেশ ভালো লেগেছিলো বিষয়টা, আর রেকর্ডের বিষয়টা কার না ভালো লাগে।
নিউজ ক্রিকেটঃ আজকে আপনার যে ক্যারিয়ার এটার পিছনে বড় অবদান কার?
ইমরুল কায়েসঃ আমার বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি। আমার বাবা চেয়েছিলো আমি যেনো একজন ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে উঠি। আমার ক্রিকেটের শুরু থেকেই বাবা আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে যেটা এখন খুবই মিস করি। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই মনে হয় আমার জীবন থেকে বড় একটা অংশ হারিয়ে গিয়েছে। সবসময়ের জন্য আমি যেকোন বিপদে পড়লে সবার আগে বাবাকে ফোন দিতাম। এখন বাবাকে খুবই মিস করি।
নিউজ ক্রিকেটঃ বিপিএলের অধিনায়কত্ব কেমন উপভোগ করেন?
ইমরুল কায়েসঃ কুমিল্লাতে থাকতে টিম ম্যানেজমেন্ট যখন আমাকে অধিনায়কের দায়িত্ব দিলো আমি প্রথম থেকেই চেষ্টা করেছি সব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে। আলহামদুলিল্লাহ সেই সিজনে চ্যাম্পিয়ন ও হয়েছিলাম। পরবর্তিতে শেষ সিজনে যখন রিয়াদ ভাই দলে ছিলো না তখনো আমার উপর অধিনায়কের দায়িত্ব আসে, আর আমি মনে করি সেটা আমি ভালোভাবেই সামলাতে পেরেছি। আর একটা কথা দলের অধিনায়ক হলে নিজে জন্য ও অনেক দায়িত্ব বেড়ে যায়।
নিউজ ক্রিকেটঃ সেলিব্রেটি জীবন কেমন উপভোগ করেন?
ইমরুল কায়েসঃ আসলে অনেক ভালো লাগে, কারণ এটা রঙিন চকচকা একটা জীবন। বিষয়টা এমন যে- যেভাবে এটা উপভোগ করতে পারে। তবে আমি সবসময় চাই একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে থাকতে। আমাকে ত মানুষ খেলার মাধ্যমেই চিনে, তাই আমি যখন মাঠে দেশের হয়ে খেলতে নামি সেটাই আমার কাছে অনেক গর্বের, অনেক আনন্দের একটা বিষয়।
নিউজ ক্রিকেটঃ ক্যারিয়ারে কোন বোলারের বল খেলতে বেশি সমস্যা হয়েছে?
ইমরুল কায়েসঃ আমি ডেইল স্টেইনের কথা বলবো। আমার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে স্টেইনের বল খেলতে একটু সমস্যা হতো। যদিও পরবর্তিতে এসে আমি আর তাকে সমস্যা মনে করিনি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আবার জন্মালে কি হতে চান?
ইমরুল কায়েসঃ একজন খাঁটি পবিত্র ঈমানদার ব্যক্তি হতে চাইতাম।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার প্রিয় ম্যাচ কোনটি?
ইমরুল কায়েসঃ ২০১৬ তে প্রথমবারের মতো টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচটি অনেক প্রিয় আমার। আর তাছাড়া পাকিস্তানের সাথে খু্লনা টেস্টটি ও প্রিয়।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনাকে যদি বলা হয় ওয়ানডেতে বিশ্বের সেরা দুইজন ওপেনারকে বেছে নিতে আপনি কাকে কাকে নিবেন?
ইমরুল কায়েসঃ রোহিত শর্মা এবং ডেভিড ওয়ার্নার। কারণ তারা দুজনই বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা দুই ওপেনার।
নিউজ ক্রিকেটঃ যদি ক্রিকেটার না হতেন তাহলে কি হওয়ার ইচ্ছা থাকতো?
ইমরুল কায়েসঃ আসলে ছোট বেলায় পাইলট হওয়ার অনেক ইচ্ছা ছিলো। সবারই ছোট বেলায় ত অনেক ধরণের ইচ্ছা থাকে। যদি ক্রিকেটে না আসতাম তবে পড়াশুনা করে পাইলট হওয়ার জন্যই চেষ্টা করতাম।
নিউজ ক্রিকেটঃ দেশের মধ্যে প্রিয় ক্রিকেটার কে?
ইমরুল কায়েসঃ মুশফিকুর রহিম। সে খুবই পরিশ্রমী একজন ক্রিকেটার। নিজের চেষ্টায় যে অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব মুশফিক সেটার উদাহরণ। তার ভিতরে পরিশ্রমের কোন গাফিলতি নেই।
নিউজ ক্রিকেটঃ এ বছর তো টি-২০ বিশ্বকাপ রয়েছে সেখানে বাংলাদেশের ভালো করার সম্ভাবনা কতটুকু দেখছেন?
ইমরুল কায়েসঃ আপাতত মাঠে খেলাটা আগে ফিরুক। তারপর না হয় সবকিছু দেখা যাবে। তবে আশাকরি ভালো কিছু করবে।
নিউজ ক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের
পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
ইমরুল কায়েসঃ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এবং একই সাথে নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের জানাই শুভেচ্ছা।