ফ্ল্যাট উইকেটে ভালো বল করাই মূল লক্ষ্যঃ রাব্বি

কে এম আবু হুরায়রা »

পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি মূলত পর্দার আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন। ১২ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আছে উত্থান পতনের অনেক গল্প। জাতীয় দলে নিয়মিত হতে পারেন নি। আছেন আসা যাওয়ার মধ্যে। ৭ টেস্ট ম্যাচ খেলে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন নি ঠিকমতো। উইকেট নিয়েছেন ৮ টি। আর ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ৩৬ ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছেন ৩৫ টি।

কোয়ারান্টাইনের এই অবসর সময়টাতে মুঠোফোনে পাওয়া গেল পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বিকে। হলো অনেক আলোচনা। ক্যারিয়ারের পাশাপাশি দেশের ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক নিয়েও কথা হয়েছে তার সাথে।

পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকার হুবহু তুলে ধরা হলো।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ কোয়ারেন্টাইন কেমন কাটছে? বাসার ভিতরে ফিটনেস নিয়ে কিভাবে কাজ করেন?

কামরুল ইসলাম রাব্বিঃ ব্যান্ড ওয়ার্ক আছে। বিসিবি কিছু ব্যান্ড ওয়ার্কের এক্সারসাইজ দিয়ে দিছে। বিসিবির যে গ্রুপ আছে এতে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, ব্যান্ডওয়ার্ক থাকে এগুলো করতেছি। আর আমার নিজেরও কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ এবং ব্যান্ড ওয়ার্ক আছে এগুলোই করতেছি নিজের মত করে। এগুলো খুবই ভালো। প্রত্যেকটা প্লেয়ারের সবসময়ই এগুলো করা উচিৎ।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ মাঠের প্র্যাকটিস এবং ঘরের প্র্যাকটিসের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে৷ মাঠে প্র্যাকটিস বন্ধ থাকায় মানসিকভাবে কতটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে?

কামরুল ইসলাম রাব্বিঃ এ ধরণের সময় মানুষের অনেক মানসিক পরিবর্তন হয়। সাইকোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়। করোনা ঠিক হলেও কিন্তু মানুষের একটু পরপর হাত ধোয়ার অভ্যাস, হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে দূরে সরে যাওয়া, একসাথে আড্ডা না দেওয়া। এগুলো থেকে যাবে অনেকের ভিতরে। আর খেলোয়াড়দের এটা অনেকটা দূরে নিয়ে যাবে। অনেক খেলোয়াড় আছে যারা প্রাকটিস না করতে পারলে ঠিক থাকতে পারেনা। অনেকে আছে শুধু ন্যাচারাল যে প্রাকটিসের সময় প্রাকটিস করলো সে মাঠে গিয়ে খেলতে পারে। আবার অনেকে আছে তার জন্য অনেক বেশি অনুশীলন  দরকার হয়। ব্যক্তিগত অনুশীলনের দরকার হয়। এটা অনেক বেশী সমস্যা করবে৷ আপনি ১ মাস রানিং না করে চাইলেই রানিং করতে পারবেননা। ক্রিকেটে একটা কথা আছে যে, তুমি যেদির দৌড় ছেড়ে দিবা তোমার বার্ধক্য শুরু হয়ে গেলো। ঐদিন থেকে চাইলেও আর দৌড়াতে পারবানা। এখন বাসার ভিতরে আছি। হঠাৎ যেয়ে রানআপ নিয়ে বোলিং করা সমস্যা হবে৷ কারণ আমার হাড়, ফিটনেস সবকিছুরই পরিবর্তন হচ্ছে। আমার মতে হঠাৎই খেলা শুরু করা ঠিক হবেনা৷ ১ সপ্তাহ বা ১০ দিন প্রাকটিস করতে হবে। প্রথম ৪/৫ টা ম্যাচ সবার জন্যই একটু কঠিন হবে। সেখানে কেউ যেনো ভেঙে না পরে যে আমার ব্যাটিং হচ্ছেনা, আমার বোলিং হচ্ছেনা। এটা আবার ঠিক হয়ে যাবে। হ্যা, কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি করবে। এর জন্য সময় লাগবে। আপনি চাইলেই মাঠে গিয়ে ভালো করতে পারবেননা। সময় দিতে হবে।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ ডিপিএল এ যদিওবা মাত্র একটা রাউন্ড হলো৷ তো এবারের উইকেট কেমন দেখলেন?

কামরুল ইসলাম রাব্বিঃ ডিপিএলে অনেকটাই ব্যাটিং সহায়ক উইকেট থাকে। বিকেএসপি আছে ব্যাটিং সহায়ক। মিরপুরের উইকেট আবার স্পোর্টিং থাকে। কখন কি হবে বলা যায়না। তো বিকেএসপি থাকে পুরোটা ব্যাটিং সহায়ক। ফতুল্লা আবার বোলারদের জন্য ভালো। আগের থেকে এখন উইকেট ভালো। তিন দিন দেশের উইকেট ভালো হচ্ছে।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ আপনিতে ৭টা টেস্ট খেলেছেন। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আপনার আগ্রহটা কেমন।

কামরুল ইসলাম রাব্বিঃ দেখুন, আমি কিন্তু ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার পর জাতীয় দলে ডাক পাই। আমি কিন্তু এমন না যে টেস্ট সব সময় খেলতে চাই। হয়তোবা বোর্ড চাচ্ছিলো যে আমি টেস্ট খেলি। দীর্ঘ সময় বোলিং করার অভ্যাস আছে আমার। এটা দেখে বোর্ড ডিসিশন নিয়েছে যেহেতু ও লম্বা সময় বোলিং করতে পারে সেহেতু ওরে নিয়ে টেস্টের পরিকল্পনা করা যায়। তবে আমার কিন্তু ভালো পারফর্ম ওডিআই এবং টি২০ ক্রিকেটে। বিপিএল এবং প্রিমিয়ার লীগে আমি ভালো পারফর্ম করি। টেস্টে লম্বা সময় ধরে বোলিং করার বোলার কম বিধায় বোর্ড আমাকে নিয়ে পরিকল্পনা করেছিলো৷ আমার কাছে কোন ফরম্যাটই কঠিন নয়। আবার কোনটিই সহজ নয়। যে ভালো খেলতে পারে। আত্মবিশ্বাস আছে সে আল্লাহর রহমতে ভালো খেলতে পারে৷ তিন ফরম্যাটেই ভালো করার ইচ্ছে থাকে সব সময়ই। আলাদাভাবে কিছুই নাই।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ ঘরোয়া ক্রিকেটে আপনার প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে। তো জাতীয় দলে আসা কতটা চ্যালেঞ্জ বলে আপনি মনে করেন।

কামরুল ইসলাম রাব্বিঃ চ্যালেঞ্জতো অবশ্যই। যতদিন যাবে চ্যালেঞ্জ ততটাই বাড়বে। তবে আমার কাছে মনে হয় ঐরকম বোলার তৈরি হয়নি। নতুনরা সেভাবে না যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বলতে সেভাবে কেউ নেই। এখানে সুযোগের একটা ব্যাপার আছে। অবস্থানের ব্যাপার আছে। মনে করেন, আমি ম্যাচগুলো খেলেছি অস্ট্রেলিয়ার সাথে ইংল্যান্ডের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে তারপর ইন্ডিয়ার সাথে। আমি কিন্তু জিম্বাবুয়ের সাথে বা এভাবে দলের সাথে খেলিনি। আমার অভিষেক কিন্তু ইংল্যান্ডের সাথে আমার পারফর্ম করাটা চ্যালেঞ্জ বেশী। অনেক প্লেয়ার আছে যারা জিম্বাবুয়ের সাথে অভিষেক হইছে। ৫টা ৪টা উইকেট পাইলো। অভিষেকের একটা ব্যাপার আছে৷ আমার অভিষেক কিন্তু ইংল্যান্ডের সাথে হইছে। আমার প্রথম টেস্টে কিন্তু মাত্র ১৬ ওভার বল করছি। পরের টেস্টে ১ ওভারও বল করিনি। কারণ স্পিনিং উইকেট ছিলো। আমরা ম্যাচ জিতে গেছি। সাকিব ভাই আর মিরাজ ভালো খেলছে। অভিষেক কিন্তু আমার মিরাজ এবং সাব্বিরের একসাথে হইছে। সেখানে পারফর্ম কিন্তু মিরাজ করছে কারণ বাংলাদেশে অভিষেক হইছে তার৷ অনেকের অভিষেক হয় জিম্বাবুয়ে কিংবা বাংলাদেশ থেকে নিচু টিমের সাথে। এগুলোর ব্যাপার আলাদা। আসলে আমি সব বড় টিমের সাথে খেলছি। আমার চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি ছিলো। তাও আমি নিউজিল্যান্ডের সাথে খেলেছি ভালো পারফর্ম করেছি। আমার মনে হয়না বাংলাদেশের কোন বোলার এক্সট্রা অর্ডিনারী। কব হ্যা, কিছু বোলার খুব ধারাবাহিক পারফর্ম করছে৷ মাশরাফি ভাই ধারাবাহিক ভালো করে৷ মোস্তাফিজ ভালো করতেছিলো। শফিউল ভাইরে ভালো লাগে। ভালো করতেছে। কিন্তু যদি চিন্তা করেন ৩ ফরম্যারেই খুব ফিট, ভালো খেলতে পারে এরকম নেই। আমার কাছে ততটা চ্যালেঞ্জিং নয়। ভালো করলে আবার কামব্যাক করা যাবে৷

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ আপনিতো দেশে এবং দেশের বাইরে খেলেছেন। দেশে এবং দেশের বাইরের বোলিংয়ের মূল পার্থক্যটা কোথায়?

কামরুল ইসলাম রাব্বিঃ এখানে উচ্চতার ব্যাপার আছে। তাদের হাইট ভালো। তাদের স্ট্রেংথ ভালো থাকে। জিনেটিকালি তারা আমাদের থেকে স্ট্রং। আমাদের প্রাকটিস কন্ডিশনের ব্যাপার আছে। তাদের যেভাবে ছোট থেকে ট্রেনআপ করায় আমারা ওইভাবে ট্রেইন আপ হইনা। ইন্ডিয়া যেমন ফ্যাসেলিটি পায়। ওদের পেস বোলার দেখেন। যখন ইশান্ত শর্মা, ভুবনেশ্বর, নেহরারে বাদ দিবে তখন এরা কামব্যাক করছে। ওদের কি স্ট্রেংথ! ওদের ট্রেনিং ফ্যাসেলিটি সব চেঞ্জ করছে। আমাদের কিন্তু সেভাবে ফ্যাসেলিটি নাই। আমাদের ট্রেনার ১ বছর থাকে তারপর যখন আমাদের চেঞ্জ হওয়ার সময় তখন চেঞ্জ হয়ে যায়।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ আমাদের অনূর্ধ্ব -১৯ দল অনেক দেশের বাইরে সফর করেছে। আপনার কি মনেহয় আমাদের পেসারদের সেভাব ট্যুর করানো উচিৎ?

কামরুল ইসলাম রাব্বিঃ বাইরে খেলানোর দরকার নেই। ওদেরকে বেশি ম্যাচ খেলানোর দরকার। ওরা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট বেশী বেশী খেলতে পারলেই হলো। ওদের ট্রেনিং করাতে হবে আবাসিকভাবে ক্রিকেট একাডেমিতে রেখে। পেসার হান্ট করতে হবে৷ পেসার হান্ট থেকে ভালো পেসার তৈরি হয়। এভাবে পেস বোলার তৈরি করা যেতে পারে।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ আমাদের কন্ডিশনে যখন আমরা ফ্ল্যাট উইকেটে খেলি তখন কিন্তু একটা পেসারের কনফিডেন্স থাকেনা৷ তারপর যখন ভালো করে জাতীয় দলে আনা হয়। ২/৩ মাস খেলিয়ে আবার যখন বাদ দেওয়া হয় এই জিনিসটা থেকে বের হয়ে আসা উচিৎ কিনা কিংবা আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিজ্ঞ হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আনা উচিৎ।

কামরুল ইসলাম রাব্বিঃ আপনি একটা সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। আমার কথা হচ্ছে ফ্ল্যাট উইকেটে ভালো করতে হবে। পাকিস্তানের উইকেট ফ্ল্যাট। ওদের বোলাররা চিন্তা করে এই ফ্ল্যাট উইকেটে ভালো করতে হবে। তখন ওরা জোরে বল করার চেষ্টা করে৷ ফ্ল্যাট উইকেটে সুইং করাতে হবে তখন ওরা সুইং শেখে। তারপর ভালো উইকেট পেলেতো দুর্দান্ত করে। কারণ তাদের অভিজ্ঞতা আছে যে আমরা ফ্ল্যাট উইকেটেই ভালো করছি এখানে কোন ব্যাপারই না। এটা খারাপ না। একেকটা দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী বিভিন্ন উইকেট হয় যা আপনি চেঞ্জ করতে পারবেননা। একটা ছেলে ১ ম্যাচ ভালো খেলছে বলেই জাতীয় দলে নিয়া ক্যাপ্টেন বানিয়ে দাও এখানে ছেলেটারতো দোষ নয়৷ সেতো এর মত খেলছে এখন এর উপরে যে চাপটা দিবেন ও যখন পারবেনা তখন ওকে বাদ দিয়ে দিবেন। ওকে আর সুযোগ দিবেননা। ছেলেটার ক্যারিয়ার এখানেই থেকে গেলো। আমাদের উচিৎ ১টা ছেলে ভালো করছে ভালো। এটা কন্টিনিউ করো। পরের বছর ভালো করছে হ্যা, তুমি জাতীয় দলের কাছাকাছি আছো। তোমাকে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে তুমি ভালো খেলতেছো। এই ২/৩ বছর ভালো করলে এর মাছে এ-দলে চান্স পাবে ট্যুর করবে৷ ভালো অভিজ্ঞতা হবে ফিটনেসও ভালো হবে। বিসিএল,বিপিএল, ডিপিএল সব খেলতেছে। ৩ বছর ধারাবাহিক ভালো খেলতেছে। এসময় দেড়শো ম্যাচ খেললো ওর এভারেজ ভালো। অভিজ্ঞতা আছে। অনেক ম্যাচ বের করে আনছে। এই ছেলেটার এখন অভিজ্ঞতা হইছে তাকে সুযোগ দেওয়া উচিৎ। তখন তাকে সুযোগ দেওয়া উচিৎ। তবুও সেভাবে নয় যে অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাদের মাটিতে নামাইয়া দিলাম। না, তাকে বাংলাদেশে জিম্বাবুয়ের সাথে খেলান। পাকিস্তানের সাথে খেলান। দেশের বাইরে গেলেও কিছুদিন টিমের সাথে রাখতে পারেন। প্রথম ২টি সিরিজ খেলাটা দেখুক। নেটে ব্যাটিং করবে অভিজ্ঞতা হবে সাহসী হবে। তারপর আপনি খেলান। তখন ও ভালো খেলবে। এবাদতকে কিন্তু হাথুরাসিংহ বিভিন্ন যায়গায় নিয়ে গেছে। নিয়ে দলের সাথে রাখছে। ওরে টিমে নেটে বোলিং করাইতো। হাতুরা চলে যাওয়ার পরও দলের সাথে থাকতো। অনেকটা উন্নতি করছে ও। আগে প্রচুর শর্টবল করতো। অনেকটা ইম্প্রুভ করছে। ভবিষ্যতে ও ইনশাআল্লাহ ভালো করবে।

নিউজ ক্রিকেট ২৪ঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

কামরুল ইসলাম রাব্বিঃ আপনাকে এবং নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের সকল পাঠকদের জানাই ঈদের শুভেচ্ছা।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »