নিউজ ডেস্ক »
ওয়ার্ন, ম্যাকগ্রাদের বিপক্ষে ফতুল্লায় শতক করে নাম কুড়ানো, রয়েছে ওয়ানডে ক্রিকেটে এক বছরের হাজার রানের রেকর্ড, অমিত সম্ভাবনাময় শুরুর পরের গল্পটা বিষাদের! দল থেকে বাদ পড়া আবার ফিরে আসা। নানান চড়াই উতরাই দেখেছে শাহরিয়ার নাফীসের ক্যারিয়ার। জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেক হয় ২০০৫ সালের ইংল্যান্ড ট্যুরে। অভিষেকের পর থেকেই ব্যাটে আলো ছড়ানো নাফীস পরবর্তিতে এসে যেনো খেই হারিয়ে ফেলেন। তাই ২০১৩ সালের পরে আর তাকে জাতীয় দলে দেখা যায়নি। তবে ঘরোয়া লিগ চালিয়ে যাচ্ছেন এখনো। ফর্ম আর ফিটনেস যতদিন ঠিক থাকবে ততদিন পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যেতে চান এই ওপেনার।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে মাঠের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফ সবাই ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। আর এই অবসর সময়টাতে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সাথে নিজের বর্তমান ক্যারিয়ার, ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন ওপেনার শাহরিয়ার নাফীস।
নিউজ ক্রিকেটঃ বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনের লম্বা এই সময়টা কিভাবে অতিবাহিত করছেন?
শাহরিয়ার নাফীসঃ বর্তমানে এখন তো রমজান মাস, সেহেরী করে নামায পড়ে তারপর একটু ঘুমাই। এরপর ঘুম থেকে উঠি, ছোট একটা বাচ্চা আছে তো তাকে একটু সময় দেই। তারপর ফ্রেশ হয়ে কোরআন পড়ি নামায পড়ি। বিকালে বড় ছেলের সাথে একটু খেলাধুলা করি। বাসার কাজে একটু সহযোগিতা করি, এভাবেই সময় যাচ্ছে। আর রাতের দিক একটু ফিটনেসের কথা চিন্তা করে যতটুক সম্ভব শারীরিক কিছু ব্যায়াম করার চেষ্টা করি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস ১৩৮ এটা কিভাবে দেখেন আপনি?
শাহরিয়ার নাফীসঃ আমি এটুকুই বলবো এই ইনিংসটি আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। খেয়াল করলে দেখবেন তখনকার ঐ অস্ট্রেলিয়ার দলটা তাদের ইতিহাসের সেরা দল ছিলো। কারণ ঐই দলটাই সবাই সেরা খেলোয়াড় ছিলো। ম্যাগ্ররা, ওয়ার্ন, ব্রেট-লি, গেলেস্পি এরা ছিলো তখনকার অজি দলের বোলিং লাইন আপ। সেক্ষেত্রে তাদের বিপক্ষে আমি সেঞ্চুরিসহ ১৩৮ রানের একটা ইনিংস খেলতে পেরেছিলাম এটা মনে করলে এখনো আমার ভিতরে অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করে।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার প্রিয় লেখক কে?
শাহরিয়ার নাফীসঃ যখন স্কুল কলেজে পড়েছি তখন প্রমথ চৌধুরির বই পড়তাম। পরবর্তিতে হুমায়ন আহমেদের কিছু বই পড়েছি। সত্যি বলতে বই পড়তে আমি পছন্দ করি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনি যখন পুরোদমে জাতীয় দলের ক্রিকেটার ছিলেন তখন ইউনিভার্সিটিতে গেলে বন্ধু বা অন্যান্যরা কি আপনাকে আলাদা চোখে দেখতো?
শাহরিয়ার নাফীসঃ আসলে যখন আমি একেবারে দলে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলাম তখন আর ঐ ভাবে করে ক্লাসে যাওয়া হতো না। তবে সত্যি কথা বলতে ব্যাচের বন্ধুরা, বা অন্যান্য বিভাগের যারা ছিলো সবাই খুব সম্মান করতো আমাকে। শুধু বন্ধুরা না শিক্ষকরাও তখন আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন।
নিউজ ক্রিকেটঃ যদি ক্রিকেটার না হতেন তাহলে কোন পেশাকে বেছে নিতেন?
শাহরিয়ার নাফিসঃ এই উত্তরটা বলা অনেক কঠিন। যদি ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা না থাকতো তবে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যেতাম।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার আরো দুই ভাই ক্রিকেট খেলতেন এখনো কি তারা ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন?
শাহরিয়ার নাফিসঃ পেশাগত কারণে আমরা তিনভাই এখন ভিন্ন জায়গাতে রয়েছি। ওরা আমেরিকাতে রয়েছে চাকরি করছে পাশাপাশি এখনো এ্যামেচার লিগ টা চালিয়ে যাচ্ছে।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ক্যারিয়ারের পিছনে কার অবদান বেশি বলে আপনি মনে করেন?
শাহরিয়ার নাফীসঃ প্রতিটা খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারে শুরু থেকে তাদের বাবা-মার অনেক অবদান থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তেমনটাই ছিলো। এরপর ক্যারিয়ারে অনেক উত্তান-পতন হয়েছে, বেশ খারাপ সময়ও পার করেছি, দল থেকে ছিটকে গিয়েছি, এরপর আবার সামনের দিক আসতে সক্ষম হয়েছি। এই ভালো করে সামনের দিক ফিরে আসতে আমার স্ত্রীর অবদানটাই বেশি। কারণ ভালো বা খারাপ সবসময়ে সে আমার পাশে থেকে আমাকে বিশ্বাস যুগিয়েছে, মনোবল যুগিয়েছে, এখনো যোগাচ্ছে।
নিউজ ক্রিকেটঃ ধারাভাষ্য ব্যাপারটা কতটা উপভোগ করেন?
শাহরিয়ার নাফীসঃ আমি মনেকরি ভবিষ্যতে এটি আমার জন্য একটি ভালো কাজ হতে পারে। কারণ ১০ বছর বয়স থেকে আমি ক্রিকেট খেলছি। সেক্ষেত্রে যখন ক্রিকেট ছেড়ে দিবো তখন যদি সুযোগ আসে তাহলে অবশ্যই আমি ধারাভাষ্যে যোগদান করবো। আর আমারো ইচ্ছা ক্রিকেট ছাড়ার পরও ক্রিকেটের কোন বিষয়ের সাথে যুক্ত থাকতে। আর এই ধারাভাষ্য দেওয়া আমি খুব উপভোগ করি।
নিউজ ক্রিকেটঃ জাতীয় দলে ফেরার জন্য কি কোন পরিকল্পনা আছে?
শাহরিয়ার নাফীসঃ আসলে জাতীয় দল থেকে যখন আমি বাদ পড়ি তারপর ঘরোয়াতে ভালো পারফরমেন্স করেছি কিন্তু জাতীয় দলে আর সুযোগ হয়নি। বর্তমানে এখন ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে দল গঠন করবে আর সেই দলে আমি নিজেকে দেখি না, আর ওই ভাবে করে কোন চিন্তাও করিনা। তবে যতদিন ফর্ম বা ফিটনেস ঠিক থাকবে ঠিক ততদিন পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
নিউজ ক্রিকেটঃ দেশের মধ্যে আপনার প্রিয় ক্রিকেটার কে?
শাহরিয়ার নাফীসঃ আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
নিউজ ক্রিকেটঃ ক্যারিয়ারে অনেক ব্যাটিং পার্টনার পেয়েছেন সেক্ষেত্রে কার সাথে ব্যাটিং করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন?
শাহরিয়ার নাফীসঃ আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে জাবেদ ভাইয়ের সাথে ব্যাটিং করেছি। এরপর সাকিবের সাথে অনেক ম্যাচে পার্টনার হিসেবে ব্যাট করেছি। ওর আর আমার বেশ কিছু ভালো পার্টনারশিপ ও রয়েছে। আর ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ফজলে রাব্বির কথা বলতে পারি।
নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ব্যাটিং আইডল কে?
শাহরিয়ার নাফীসঃ ছোট বেলায় শচীন টেন্ডুলকারের খেলা দেখতাম। খুবই ভালো লাগতো তাকে। এরপর ব্রায়ান লারা, ম্যাথু হেইডেন এদেরকেও ভালো লাগতো।
নিউজ ক্রিকেটঃ ক্যারিয়ারে কোন বোলারের বল খেলতে আপনার সমস্যা মনে হতো?
শাহরিয়ার নাফীসঃ আমি মুত্তিয়া মুরালিধরনের কথা বলবো। কারণ ও এমন একজন বোলার ওর বলে মারলেও ওকে উইকেট দিতে হবে। এমনটা শুধু আমার ক্ষেত্রে না অনেক ব্যাটসম্যানেরই ওর বিপক্ষে খেলতে সমস্যা হতো।
নিউজ ক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের
পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
শাহরিয়ার নাফীসঃ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এবং একই সাথে নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের জানাই শুভেচ্ছা।