দল যেটা চাইবে আমি সেটাই করবোঃ নাসুম আহমেদ

দুর্জয় দাশ গুপ্ত »

গেল বিপিএলে নজর কাড়া পারফরম্যান্স দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। বয়সের দিক থেকে তাকে তরুণ বলার কোন উপায় নেই। ২০১৫ সালের বিপিএলে খেলেছিলেন সিলেটের হয়ে। এরপরে লম্বা বিরতি। গত বিপিএলে আবারো সুযোগ মিলেছিলো নাসুমের। খেলেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে। চট্টগ্রামের বিদেশি কোচ পল নিক্সন নাসুমকে ভাসিয়েছিলেন প্রশংসার সাগরে। আর এমন প্রশংসা পাওয়ার মত কাজও নাসুম করেছেন। পাওয়া প্লে’তে একজন স্পিনার হয়েও প্রায় প্রতি ম্যাচে করেছেন ২-৩ ওভার। রান বন্যার এই বিপিএলে নাসুমের কৃপণতা প্রশংসার দাবি রাখে অবশ্যই।

বিপিএলের এমন পারফরম্যান্সের পুরস্কারও পেয়েছেন নাসুম। ডাক পেয়েছেন টি-টোয়েন্টি দলে। যদিওবা জিম্বাবুয়ে সিরিজে অভিষেক হয়নি তার।

কোয়ারেন্টাইনের এই সময়টাতে সিলেটের নিজের বাসাতেই অবস্থান করছেন নাসুম আহমেদ। মুঠোফোনে পাওয়া গেলো তাকে। বর্তমান অবস্থা থেকে শুরু করে ক্রিকেটের আসার গল্প, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এসব কিছুই নিয়েই হলো বড়সড় আলোচনা।

পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।

নিউজক্রিকেটঃ কোয়ারেন্টাইন কেমন চলছে?

নাসুম আহমেদঃ খুবই বাজে (হেসে)। আসলে একটুও ভালো লাগছে না। সারাদিন ঘরে বসে থাকি। তারপর নামাজ পড়ার পর বিসিবি থেকে আমাদের কিছু ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে এগুলো করি। এভাবেই সময় কাটছে।

নিউজক্রিকেটঃ ফিট রাখছেন কিভাবে নিজেকে? আর এজন্য কি করছেন?

নাসুম আহমেদঃ আমি মনে করি নিজেকে ফিট রাখার জন্য মাঠে গিয়ে যে কাজ করি এর চেয়ে বেশি করতেছি এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে। আমার জিম, রানিং সবই হচ্ছে ঠিক মতো। নিয়ম মেনে কাজ করতে পারছি আমি। শুধু ব্যাট আর বল হাতে নিতে পারছি না। এছাড়া যা যা করার সবই করছি।

নিউজক্রিকেটঃ এবারে ক্রিকেটে আসার গল্পটা জানা যাক। আর কার সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন পরিবার থেকে?

নাসুম আহমেদঃ আসলে ক্রিকেটার হতে আমার পরিবার থেকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছে আমার বাবা। আমার বাবা একটা কথা আমাকে বলেছিলেন, ‘যদি মনে করো ক্রিকেটে কিছু করতে পারবে তাহলে এটা নিয়েই এগোতে থাকো। আর যদি মনে করি হবে না তাহলে পড়াশোনায় মন দাও।’ আমি ছোটবেলা থেকেই খেলা পাগল ছিলাম। বাবাকে বললাম আমি ক্রিকেট খেলবো। ২০০৫ সালে আমি শুরু করি। সিলেটেরই লোকাল একটা ছেলে শেহনাজ আহমেদ হুট করে একদিন আমার বাসায় এসে বললো নাসুম তোমাকে স্টেডিয়ামে যেতে হবে আর গেলে তোমার জন্য ভালো হবে। কিন্তু প্রথমে আমি মুখের উপর না করে দেই। কারণ আমার এলাকায় খেলা ছিলো। কিন্তু পরে কে যেন মনে করে বাবাকে বললাম আমাকে রিকশা ভাড়া দাও আমি স্টেডিয়ামে খেলতে যাবো। এরপর জেলা কোচ হাসান ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিলো আমাকে। এরপর উনিই আমাকে জেলা দলে সুযোগ করে দেন। যদিওবা স্কোয়াড ছিলো ২৫ জনের। কিন্তু আমি ছিলাম ২৬ নম্বর ক্রিকেটার। এরপর সেখানে গিয়ে পারফরম্যান্স দিয়ে সুযোগ করে নিয়েছি। অনূর্ধ্ব-১৩ দলে সুযোগ পেলাম। সেখান থেকে অনূর্ধ্ব-১৪-১৫-১৬ খেলার পরে অনূর্ধ্ব-১৮ দলে সুযোগ মিললো। অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার পাশাপাশি ম্যান অব দ্য সিরিজ হলাম। এরপর ফাস্ট ডিভিশনে সুযোগ আসলো ২০১০-১১ সালে। ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ খেলেছি। আমি বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে দেশের বাইরে অনেক ট্যুর করেছি। আর আল্লাহর রহমতে সব ট্যুরে ভালো পারফরম্যান্স করতে পেরেছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, ইংল্যান্ড সব জায়গাই ভালো বল করতে পেরেছি।

নিউজক্রিকেটঃ আপনি একজন স্পিনার। স্পিন বোলিংয়ে আপনার আদর্শ কে?

নাসুম আহমেদঃ আসলে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে যখন ছিলাম সেখানে জেলা দল গঠন করা হয় তখন এনাম ভাই (এনামুল হক জুনিয়র) একদিন ক্যাম্পে গিয়েছিলো। উনি মূলত স্পিনারদের নিয়ে কাজ করার জন্যই গিয়েছিলো। সেখান থেকেই আমি এনাম ভাইকে দেখতে দেখতে আমি উনাকে ফলো করতে শুরু করি। এরপর উনার সাথেই আমি ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলেছি। উনাকে দেখেই বড় হয়েছি। উনিই আমার আইডল। এছাড়া আমি বোলিং ভালো লাগে সাকিব ভাইয়ের (সাকিব আল হাসান)। তবে আমি এনাম ভাইয়ের সবকিছু ফলো করি। শুধু যে বোলিং সেটা না, উনার সবকিছুই আমি অনেক ফলো করি।

নিউজক্রিকেটঃ বিপিএলে বিদেশি কোচিং স্টাফদের থেকে কেমন সাপোর্ট পেয়েছেন?

নাসুম আহমেদঃ গত বিপিএলে আমি পল নিক্সনকে পেয়েছি হেড কোচ হিসেবে। সত্যি কথা বলতে খেলার সময়টাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাপোর্টের। ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেখানে সবাই সবসময় খেলা খেলতে পারে না। একটা ব্যাপার আমার খুব ভালো লেগেছে বিদেশি কোচরা প্লেয়ারদের খারাপ সময়টাতে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দেয়। ভালো সময়টাতে কম সময় দেয় কিন্তু খারাপ সময়টাতে প্রচুর সময় দিবে। এমনও হয়েছে একটা ম্যাচ কেউ খারাপ করেছে তখন উনারা বলেছেন গত ম্যাচে কি হয়েছে সেটা সবাই জানে। একটা ম্যাচ খারাপ যেতেই পারে। একজন ক্রিকেটারের জন্য এটা একটা বড় সাপোর্ট।

 

নিউজক্রিকেটঃ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কোচ পল নিক্সন আপনার অনেক প্রশংসা করেছিলেন। পাওয়ার প্লে’তে দারুণ বল করেছেন আপনি। পাওয়ার প্লে’তে বল করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিলো?

নাসুম আহমেদঃ আমি মনে করি এখানে কোন চ্যালেঞ্জ নেই। কে খেলতেছে, হার্ড-হিটার কিনা বা ব্যাটসম্যানের নাম কি এগুলো দেখার সময় নেই। আমাকে কোন জায়গায় বল করতে হবে, আমি কিভাবে তাকে আটকাবো সেটা আমাকেই ঠিক করতে হবে। আমি যদি বাজে বল করি তবে আমার উপর চড়াও হবে। তাই আমাকে ভালো বল করতেই হবে। দলে আমার একটা রুল ছিলো পাওয়ার প্লে’তে দুই-তিন ওভার বল করতে হবে। আমি সেটাই ঠিকমতো করার চেষ্টা করেছি। আর আমি উইকেটের জন্য বল করিনি। আমাকে বলা হয়েছিলো ব্যাটসম্যানকে আটকাতে আর আমি সেটাই করার চেষ্টা করেছি। ব্যাটসম্যান কি চায় সেটা সবসময় ফলো করেছি। ব্যাটসম্যান যেটা চাইবে সেটা যদি আমি না দেই তাহলে সে রান তুলতে পারবে না। এমন লক্ষ্য ছিলো আমার। তবে এর চেয়েও বড় লক্ষ্য ছিলো আমাকে ম্যাচ খেলতেই হবে। আর ম্যাচ খেলার জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমি সব করবো। এর কারণ হলো আমি অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছি না খেলতে খেলতে। তাই এ বিপিএলে আমার এমন লক্ষ্য ছিলো দল যেটা চাইবে আমি সেটাই করবো। আমি সফলও হয়েছি। আমার টিম ম্যানেজমেন্ট আর কোচিং স্টাফ খুব সাপোর্ট করেছে।

নিউজক্রিকেটঃ অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কেমন?

নাসুম আহমেদঃ রিয়াদ ভাইকে নিয়ে কি বলবো, আসলে বলার ভাষা নেই। রিয়াদ ভাই অসাধারণ একজন অধিনায়ক। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে এত সুন্দর কিছু সিদ্ধান্ত নেন যেটা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলার জন্য রিয়াদ ভাইয়ের অধিনায়কত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিওবা রিয়াদ ভাইকে সব ম্যাচে আমরা পাইনি। তবে বড় ম্যাচ গুলোতে রিয়াদ ভাইয়ের সিদ্ধান্তগুলো সময় উপযোগী ছিলো।

নিউজক্রিকেটঃ এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করছেন?

নাসুম আহমেদঃ আসলে আমি এর আগেও একটা সাক্ষাৎকারে আমি এটা নিয়ে কথা বলেছি। আমি তখনো বলেছিলাম এখনো বলছি যদি পারফর্ম করতে পারি তবে সুযোগ এমনিতেই আসবে। সবারই স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে দেশের হয়ে খেলার। আমি মনে করি না আমি আহামরি কিছু করে ফেলেছি। আমি একটা জিনিস সবসময় মাথায় রাখি আর সেটা হচ্ছে আমি খেলবো। যে পরিস্থিতিতেই দল আমাকে চাইবে সে সময় আমি নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর অবশ্যই পারফর্ম করে সুযোগ তৈরি করে নিতে চাই। এমন না যে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন আমার নেই, তবে সে জায়গায় যেতে হলে অবশ্যই আমাকে সেরাটা দিতে হবে। টি-টোয়েন্টি দলে আমি ডাক পেয়েছি, এখনো অভিষেক হয়নি। আমি আমার কাজটা করে যাবো। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

নিউজক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

নাসুম আহমেদঃ আপনাকেও ধন্যবাদ এবং একইসাথে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের সকল পাঠকদের জানাই অগ্রীম ঈদের শুভেচ্ছা।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »