জাতীয় দলের বাইরের সময়টা বেশ কঠিনঃ জিয়াউর রহমান

দুর্জয় দাশ গুপ্ত »

জিয়াউর রহমান জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। দেশের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে তখনকার সময়ে জিয়ার মত একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার।

জাতীয় দলের হয়ে জিয়াউর রহমান খেলেছেন ৯ টা ওয়ানডে ম্যাচের বিপরীতে ১ টি টেস্ট। যেভাবে এসেছিলেন সেই ধারাবাহিকতা ছিলো না পারফরম্যান্সে। আর এজন্যই একটা সময় হারিয়ে যান তিনি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ঠিকই ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠছেন নিয়মিত। গেল বিপিএলেও শুরুর দিকে দল না পেলেও টুর্নামেন্টের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রামে ডাক পাওয়া জিয়া নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

এসব নিয়েই মুঠোফোনে ক্রিকেটার জিয়াউর রহমানের সাথে হলো অনেক আলোচনা। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক আক্ষেপের পাশাপাশি শুনিয়েছেন কিছু আশার কথাও।

পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকার হুবহু তুলে ধরা হলো।

নিউজক্রিকেটঃ সময় কিভাবে কাটছে?

জিয়াউর রহমানঃ বাসাতেই সময় কাটছে। পরিবারকে সময় দিচ্ছি। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে যাচ্ছি না।

নিউজক্রিকেটঃ ফিটনেস ধরে রাখতে কি করছেন?

জিয়াউর রহমানঃ বাসায় বসে ফিটনেস ধরে রাখা একজন ক্রিকেটারের জন্য খুবই কঠিন আমি মনে করি। তবু ঘরে বসে যেগুলো করা যায় সেগুলো করে যাচ্ছি। ব্যাট-বল স্পর্শ করতে পারছি না। কিন্তু তারপরেও যতটুকু করা যায় করে যাচ্ছি।

নিউজক্রিকেটঃ জাতীয় দলের বাইরে আজ অনেকদিন। জাতীয় দলের বাইরের সময়টা কেমন?

জিয়াউর রহমানঃ খুব ভালো একটা প্রশ্ন। জাতীয় দলে থাকলে একজন ক্রিকেটারের রুটিন বলেন, অনুশীলন বলেন সবকিছু একরকম থাকে আর জাতীয় দলের বাইরে থাকলে ব্যাপারটা অন্যরকম। মোট কথা জাতীয় দলে থাকা অবস্থায় সবকিছুই সুন্দর, আর জাতীয় দলের বাইরের সময়টা কঠিন। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোটা এতটা ভালো না। আগে আরো খারাপ ছিলো, এখন আগে চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এটা ঠিক যে দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। তবে আরো ভালো হতে হবে। এছাড়া অর্থনৈতিকও একটা ব্যাপার থাকে। জাতীয় দলে থাকলে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু দলের বাইরে থাকলে অবশ্যই এগুলো আপনার মাথায় আসবে। যেমন এখন প্রিমিয়ার লিগটা হচ্ছে না। অনেক ক্রিকেটারদের কিন্তু এখন এটা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে।

নিউজক্রিকেটঃ গত বিপিএলে প্রথমে দল পান নি। পরে সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করলেন।

জিয়াউর রহমানঃ আসলে আমরা যারা কয়েক বছর আগে জাতীয় দলে খেলেছি তাদের নিয়ে কিন্তু কেউ একটা মাথা ঘামায় না সবাই। এর কারণ হলো তরুণ প্লেয়ারদের প্রতি সবার আগ্রহ থাকে। যেমন নতুন একটা ছেলে ভালো করছে তাকে সবাই লাইম লাইটে নিয়ে আসে। কিন্তু এই ছেলেটা যদি খারাপ করে তবে সে আবার হারিয়ে যাবে, নিজেকে পুনরায় প্রমাণের সুযোগ খুব কমই পাবে। আমি মনে করি এজন্য অভিজ্ঞতার উপরে জোর দিতে হবে। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের যোগ্য সম্মান দিতে হবে। কারণ আমরা অনেকদিন খেলেছি, আমরা এখন বুঝি আমাদের কোন সময়ে কি করতে হবে৷

নিউজক্রিকেটঃ এখন ক্রিকেটে প্রতিযোগিতা দিনদিন বেড়ে চলছে৷ জাতীয় দলে পুনরায় ফিরতে হলে অবশ্যই খুব ভালো কিছু করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কি?

জিয়াউর রহমানঃ জাতীয় দলে ফিরতে তো সবাই চায়, আমিও চাই। আর এর জন্য নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রস্তুত রাখছি। এখন কথা হলো নিজেকে প্রমাণের সে সুযোগটা দিতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত ভালো খেলা একজন ক্রিকেটারকে এর পরের পর্যায়ে সুযোগ দিয়ে দেখতে হবে। পরিকল্পনা তো আছেই। এখন সুযোগের অপেক্ষায় আছি।

নিউজক্রিকেটঃ কোন ফরম্যাটে আগ্রহ বেশি?

জিয়াউর রহমানঃ একজন ক্রিকেটার হিসেবে তিনটা ফরম্যাটেই খেলতে পছন্দ করি। ঘরোয়া লীগগুলোতে সব ফরম্যাটেই নিজের সেরাটা দিয়ে পারফর্ম করার চেষ্টা করি।

নিউজক্রিকেটঃ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

জিয়াউর রহমানঃ আমি একটু আগেও বলেছি সব ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। আমারও একই স্বপ্ন। আর সেজন্য যা যা করতে হবে করে যাবো। প্রতিটা সিজন যখন শুরু করি তখন থেকেই একটা লক্ষ্য থাকে এই সিজনটাতে ভালো করবো। জাতীয় দলে সুযোগ পাবো কিনা সেটা অন্য ব্যাপার তবে ভালো খেলাটাই মূল লক্ষ্য থাকে আমার।

নিউজক্রিকেটঃ সিনিয়রদের ক্ষেত্রে দলে ফেরাটা খুব চ্যালেঞ্জিং কিনা?

জিয়াউর রহমানঃ আসলে আমি এভাবে চিন্তা করি না। সুযোগ পাবো কিনা সেটা বোর্ডের ব্যাপার, নির্বাচকদের ব্যাপার। আমার কাজ হচ্ছে ভালো খেলা, ফিটনেস ধরে রাখা। আমার হাতে এগুলো আছে৷ তাই আমি আমার হাতে যেগুলো আছে সেগুলো নিয়েই কাজ করতে চাই এবং সবসময় কাজ করি।

নিউজক্রিকেটঃ করোনার কারণে ক্রিকেটেও বেশ কিছ পরিবর্তন আসছে। সে ব্যাপারটা কিভাবে দেখছেন?

জিয়াউর রহমানঃ আমি এ ব্যাপারটা পজিটিভ ভাবেই দেখছি৷ কারণ করোনাভাইরাস আমাদেরকে কিছু ব্যাপার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে৷ যেগুলো আমরা আগে জানলেও গুরুত্ব দিতাম না কিন্তু এখন নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেগুলো ভালো ভাবেই করছি। এই দিক থেকে যদি চিন্তা করি তবে আমি মনে করি ক্রিকেটে এসব পরিবর্তন আসা জরুরী ছিলো৷ লালার কথা যদি বলি একজন বোলার মুখের লালা ব্যবহার করবে আর সেটা বাকি সবার হাতে যাবে। এ ব্যাপারটা এতদিন ধরে চলে আসছিলো তবে এখন পরিবর্তন হচ্ছে৷ অবশ্যই বোলারদের জন্য এটা কঠিন হবে মানিয়ে নেওয়া তবে আমি মনে করি এটা ভালোই হয়েছে।

নিউজক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

জিয়াউর রহমানঃ আপনাকেও ধন্যবাদ এবং নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের সকল পাঠকদের শুভেচ্ছা।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »