দুর্জয় দাশ গুপ্ত »
নিজের অভিষেক ম্যাচেই দলের বিপর্যয়ে হাল ধরেছিলেন নাসির হোসেন। ৬৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে লম্বা সময়ের জন্য বাংলাদেশকে সার্ভিস দিবেন এমন আভাসই দিয়েছিলেন তিনি। খুব কম সময়ের মধ্যেই নাসির হয়ে উঠেন ভরসার প্রতীক, মিঃ ফিনিশার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও দলকে উজাড় করে দিতে থাকেন এই অলরাউন্ডার।
সবকিছু ভালোই চলছিলো তবে হুট করে বাঁধলো ঝামেলা। ব্যাটে রান নেই, পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ব্যতিক্রমী ব্যাপার উঠে আসলো সবার সম্মুখে।
নাসির মনে করেন ক্রিকেটে খারাপ সময় আসবেই। তাছাড়া তিনি যে জায়গায়টাতে খেলেছেন সেখানটায় একটানা ভালো করে যাওয়া অসম্ভব। আর দিনশেষে মানুষ কেবল রানটাই দেখে, পরিস্থিতিটা বুঝতে চায় না। একজন ক্রিকেটারের খারাপ সময়টাতে প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি সাপোর্টের। তবে এদেশে হয় উল্টোটা। সাপোর্টের বিপরীতে পেতে হয় ঘৃণা৷
মুঠোফোনে ক্রিকেটার নাসির হোসেনের সাথে হলো অনেক আলোচনা৷ শুরুতে কথা বলতে রাজি না হলেও পরে ঠিকই মনের গভীরে লুকিয়ে রাখা সকল অভিমান শুনিয়েছেন নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের প্রতিবেদক দুর্জয় দাশ গুপ্তকে। নাসির বিশ্বাস করেন ভালো করলে দলে পুনরায় সুযোগ মিলবেই।
পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।
নিউজক্রিকেটঃ ঈদ কেমন কেটেছে?
নাসির হোসেনঃ ঈদ পরিবারের সাথে কাটালাম। আল্লাহর রহমতে ভালোই কেটেছে বাসায়৷
নিউজক্রিকেটঃ করোনাভাইরাসের কারণে ক্রিকেট থেকে দূরে আছেন। ব্যাট বল স্পর্শ করতে পারছেন না। সময় কিভাবে কাটছে?
নাসির হোসেনঃ আমি বাসায় ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি এবং এখন বাইরে একটু রানিং করছি। তবে ব্যাটিং বা বোলিং কোনটাই শুরু করিনি এখনো। একজন কোচ আছে তাকে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। মাঠে গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে অনুশীলন করি।
নিউজক্রিকেটঃ জাতীয় দলে এসে নিজের জায়গাটা পোক্ত করার পর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। এখন দলের বাইরে। সময়টা কতটা কঠিন?
নাসির হোসেনঃ দলের বাইরের সময়টা কঠিন তো ভাই অবশ্যই। আপনি একটা জায়গায় গেলেন, পারফর্ম করলেন, অনেকদিন ছিলেন তারপর দলের বাইরে চলে আসলেন। চ্যালেঞ্জিং একটা জীবন এখন। তবে এটাও ঠিক কষ্ট করলে সেটা বৃথা যায় না। আমিও কষ্ট করে যাচ্ছি।
নিউজক্রিকেটঃ ফিনিশিংয়ে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করেছেন। ‘ফিনিশার’ তকমা পেয়েছিলেন৷ ফিনিশার হিসেবে পারফর্ম করা কতটা কঠিন?
নাসির হোসেনঃ আমি যে জায়গায় খেলেছি সে জায়গায় পারফর্ম করা মোটেও সহজ না। আমি শুরুর দিকে এই জায়গায় সফল হয়েছি, অনেকগুলো ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ক্রিজেও ছিলাম। তবে এই জায়গায় প্রতিদিন যে পারফর্ম করবো এমনটা না। এই জায়গাটায় নিয়মিত পারফর্ম করা বেশ কঠিন। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাটিং করতে হয়। যেকোনো কিছু হতে পারে তখন। চাপ থাকে অনেক। সে চাপকে জয় করে ভালো ফলাফল বের করে আনা চাট্টিখানি কথা না। আমি আমার কথা বলছি না। যে কারোও জন্য এই জায়গাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং।
নিউজক্রিকেটঃ দল থেকে বাদ পড়ার কারণ আপনার দিক থেকে যদি চিন্তা করেন।
নাসির হোসেনঃ আসলে কেন বাদ পড়লাম সেটা আমি বলা মুশকিল। সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচ যেটা খেললাম সে ম্যাচে ২৭ রান করেছি এবং বোলিংয়ে ১০ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছি। তবুও আমি বাদ পড়েছি। হয়তো বোর্ড আমার থেকে ভালো কাউকে এই জায়গায় চিন্তা করেছে। আমি আমার দিক থেকে সবসময়ই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
নিউজক্রিকেটঃ মুদ্রার উভয় পিঠই দেখেছেন৷ শেষ পর্যন্ত ‘ব্যাডবয়’ তকমা জুটলো। আপনার ক্যারিয়ারে এই শব্দটা কতটা প্রভাব ফেলেছে?
নাসির হোসেনঃ ক্যারিয়ারের উপর প্রভাব তো পড়েছেই। তবে আমি এখন এসব কথায় কান দেই না৷ কারণ যারা আমার সাথে মিশে বা মিশেছে তারাই জানে আমি কেমন৷ মানুষ কি মনে করলো না করলো এগুলো নিয়ে আমি চিন্তা করি না। আমি ক্রিকেট নিয়েই থাকতে চাই।
নিউজক্রিকেটঃ জাতীয় দলে বেশ কিছু তরুণ ক্রিকেটারের অভিষেকের পরেই আপনি জাতীয় দলে অনিয়মিত হতে থাকলেন। একটা সময় আপনার কাজটা সাব্বির রহমানকে দেওয়া হলো। তিনিও খুব একটা সফল হতে পারেন নি। কোন আক্ষেপ হচ্ছে কিনা?
নাসির হোসেনঃ আসলে আক্ষেপ তো হবেই ভাই। কে না চায় জাতীয় দলে সবসময় খেলতে। তবে আমি আমার কাজটা পুরোপুরি ভাবে হয়তো করতে পারিনি আর এজন্যই জায়গা হারিয়েছি। বাদ পড়ার পরে টেস্টে সুযোগ পেয়েছিলাম আবার তবে তখন একটা টেস্টে ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো করতে না পারায় আবার বাদ পড়ি। আসলে আমি কাউকে দোষ দিবো না বা বলবো না কারো জন্য জায়গা হারিয়েছি। আমি আমার ভুলেই বাদ পড়েছি।
নিউজক্রিকেটঃ আমাদের দেশে একটা ব্যাপার হলো ভালো করলে প্রশংসা আর একটু খারাপ করলেই সমালোচনা শুনতে হয়৷ এ দিকটা মাঠের ক্রিকেটে প্রভাব ফেলে কিনা?
নাসির হোসেনঃ অবশ্যই৷ একটা ব্যাপার হলো একটা ক্রিকেটার যখন তার সেরা সময়টাতে থাকে তখন খুব বেশি সাপোর্টের প্রয়োজন হয় না। সবচেয়ে বেশি সাপোর্টের প্রয়োজন হয় খারাপ সময়টাতে। আমাদের দেশে এ ব্যাপারটা উল্টো। অন্য দেশগুলোতে খারাপ সময়টাতেই বেশি সাপোর্ট পায় ক্রিকেটাররা কিন্তু আমাদের এখানে এটা নেই। আমি নিজেও সাপোর্ট পাইনি খারাপ সময়টাতে। এটা এমন একটা ব্যাপার সেটা একজন প্লেয়ারের পারফরম্যান্সের উপরে খুব বেশি প্রভাব ফেলে।
নিউজক্রিকেটঃ বর্তমানে মোসাদ্দেক সৈকত, মেহেদী মিরাজ, আফিফ হোসেনের মত ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে আপনার ভূমিকাটা পালন করে আসছেন। তাদের ঠেলে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়াটা কতটুকু চ্যালেঞ্জিং হবে?
নাসির হোসেনঃ আসলে আমি এভাবে চিন্তা করি না। কাউকে ঠেলে আসতে হবে এমন না। আমি যদি আমার কাজটা করতে পারি, যদি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি তবে অবশ্যই সুযোগ আমার আসবে। আর পজিশন যেটাই হোক না কেন আমি আমার খেলাটা খেলতে চাই। আমি বিশ্বাস করি যদি নিজের সেরাটা দিয়ে পারফর্ম করতে পারি তবে পজিশন নিয়ে চিন্তা করতে হবে না আমাকে। সুযোগ মিলবেই।
নিউজক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ৷
নাসির হোসেনঃ আপনাকে এবং নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের সকল পাঠকদেরও ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।