কার্ডিফে বাংলাদেশময় একদিন

চৌধুরী মোহাম্মদ ইমতিয়াজ »

‘মিলনি টু মোসাদ্দেক, ফোর রানস, বাংলাদেশ হেব ডান ইট! দে হেব ডান ইট এগেইন ইন কার্ডিফ’! কমেন্ট্রি বক্সে গলা ফাটিয়ে এমনটাই বলে উঠছিলেন ধারাভাষ্যকার। ততক্ষনে কার্ডিফ থেকে সাকিব, রিয়াদ, মাশরাফিদের গর্জন এসে ঠেকে মিরপুর হতে টিএসসি। ৯ জুন ২০১৭, আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির গ্রুপ পর্বের নবম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা দেশ। লাল-সবুজে আরো একবার রাঙায় সুফিয়া গার্ডেন স্টেডিয়াম।

কিউইদের দেওয়া ২৬৫ রানের টার্গেট ডিঙাতে স্কোরবোর্ডে ৩৩ রান যোগ হতেই নেই প্রথম চার ব্যাটসম্যান। ০, ৩, ৮, ১৪! তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান এবং মুশফিকুর রহিমের ব্যাটের আচরণ যথাক্রমে এইরূপ। মূলত ব্ল্যাকক্যাপস ফাস্ট বোলার টিম সাউদির বলেই কুপোকাত বাংলাদেশের টপ অর্ডার। তিন তিনজন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান দ্রুত গতির এই বোলার।

প্রতিপক্ষের কোমর ভেঙে হাওয়ায় গা ভাসাতে শুরু করে উইলিয়ামসনের দল। জয় ধরা ম্যাচে নিয়ম রক্ষার বল গুনে যাচ্ছিলেন। ক্রিজে সাকিব আল হাসানের সাথে ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নেশার ছাপ রিয়াদের চোখে-মুখে, হ্যাঁ জয়ের নেশা। ফুল হাতা কিট কনুই বরাবর তোলা। গ্যালারী প্রায় ফাঁকা বললেই চলে। টাইগার ভক্তদের কেউ কেউ বাসার দুয়ারে গিয়ে ঠেকতে পারে। লাল-সবুজের নিভে যাওয়া প্রদীপে আলো ফেরানোর লড়াই করছেন সাকিব-রিয়াদ, দাঁতে দাঁত চেপে সমানে লড়ে যাওয়া সৈনিক।

এর আগে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভার থেকে নিউজিল্যন্ডের সংগ্রহ ২৬৪ রান। তাসকিন, মোসাদ্দেকদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৮ উইকেটের বিনিময়ে এ রান জমা করতে সক্ষম হয় কিউইরা। তাসকিনের বলে আউট হওয়ার আগে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেছিলেন রস টেইলর। ইনিংসের অপর হাফসেঞ্চুরিটি আসে দলীয় অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ব্যাট থেকে। স্কোরবোর্ডে ছোট ছোট অবদান গাপটিল, জিমি নিশামদের।

পরে ২৬৫ রানের মামুলি টার্গেটে খেলতে নেমেই খেই হারিয়ে ফেলে টিম বাংলাদেশ। খাদে পড়ে যাওয়া জয়কে টেনে তোলার গুরুদায়িত্ব বহন করা দুই টাইগার সাকিব-রিয়াদ। পঞ্চম উইকেটে তাদের ২২৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিই মূলত বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নোঙর করায়। যেখানে সাকিবের অবদান তিনটে এক, ১১১! তিন অংক হতে ২ রান পিছিয়ে থাকা রিয়াদের ব্যাট থেকে আসে ৯৮। শেষ পর্যন্ত ১১৪ রান করে সাকিব থামলেও অপরাজিত ছিলেন রিয়াদ, পূর্ণ করেছিলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে শতক (১০২*)।

সাকিবের বিদায়ের পর উইনিং শটটি নিতে এটুকুন দেরী নেই বোলিংয়ে তিন উইকেট শিকার করা মোসাদ্দেকের। ইনিংসের ৪৮ তম ওভার করতে আসা এডাম মিলনির দ্বিতীয় বলেই গড়িয়ে বাউন্ডারি সীমানা পার করান তিনি। পাঁচ উইকেটের দুর্দান্ত জয় উদযাপনে ব্যাট নিয়ে দৌড় অপরপ্রান্তে থাকা রিয়াদের দিকে, ততক্ষনে রিয়াদের বুকে লেফ্টে যান মোসাদ্দেক। প্যাভিলিয়ন থেকে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে টাইগার শিবির। জয়ের আনন্দে বুক ফুলায় লাল-সবুজের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমী।

জয়ের পর ম্যাচসেরা হয়ে বাংলাদেশের মিস্টার অলরাউন্ডার শোনালেন ভিন্ন কথা, ‘আমরা রান তাড়া করতে চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম ৪০ ওভার ব্যাট করতে এবং কতদূর যেতে পারি।’ জেতার পরিকল্পনা না করলেও সেদিন আইসিসি টুর্নামেন্টে ম্যাচ জয়কে বড় কিছু বলে স্বীকার করেছিলেন। সাকিবের মতো টাইগারদের এই জয়কে চায়ের আড্ডায় বাংলাদেশের সেরা ওয়ানডে জয়গুলোর মাঝে ঠাই দিতে বাধ্য ক্রিকেটপ্রেমীরা।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »