একজন রিকি পন্টিং এর গল্প

গাজী নাসিফুল হাসান »

ক্রিকেট বিশ্বে যত কিংবদন্তি ক্রিকেটার রয়েছেন যাদের গল্প ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে সবাই গল্প করবে, ক্রিকেটের সফলতার সাথে যাদের নাম উঠে আসবেই তাদের মধ্যে একজন অষ্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং। ক্রিকেট হচ্ছে রেকর্ডের হাতছানির এক খেলা। এই ক্রিকেটে প্রতিনিয়ত কত শত রেকর্ড হয় এবং চোখের সামনেই সেই রেকর্ড ভেঙে যায়। আর এই রেকর্ড ভাঙ্গা গড়ার খেলার খেলোয়াড়রা এটির কারিগর। আর রিকি পন্টিং অনেক রেকর্ডের অধিকারী। ১৪৩ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র ৩৩ জন ব্যাটসম্যানের রয়েছে শততম টেস্ট খেলার মাইলফলক। আবার ৩৩ জন সৌভাগ্যবান ক্রিকেটারদের মধ্যে মাত্র ৬ জন সৌভাগ্যবান ক্রিকেটারের রয়েছে শততম টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড। যাদের মধ্যে রয়েছে রিকি পন্টিং এর নাম। শুধু তাই ই নয় ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে নিজের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড। আজকের এই ফিচারে থাকছে রিকি পন্টিং এর সকল আদ্যোপান্ত।

পুরো নাম রিকি থমাস পন্টিং তবে রিকি পন্টিং নামেই সকলে বেশি চেনে। তাকে অনেকে পান্টার নামেও ডাকে। ১৯৭৪ সালে ১৯শে ডিসেম্বর তাসমানিয়া প্রদেশের লন্সেসটনে গ্রেইম ও লরেইন দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেন রিকি পন্টিং। চার ভাই বোনের মধ্যে রিকি পন্টিং সবার বড়। রিকি পন্টিং এর বাবা ছিলেন একজন তাসমানিয়ার ক্লাব ক্রিকেটার। তিনি অষ্ট্রেলিয়ার রুলস ফুটবল দলে খেলেছেন। রিকি পন্টিং এর মা লরেইন ছিলেন রাজ্যের ভিগোরো চ্যাম্পিয়ন। রিকি পন্টিং এর মামা হচ্ছেন সাবেক অষ্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার গ্রেগ ক্যাম্পবেল। প্রথমদিকে পন্টিং এর পরিবার তাসমানিয়ার প্রসপেক্ট এলাকার ৪.১ কিলোমিটার দূরে সিটি সেন্টারের দক্ষিণাংশে বসবাস করতেন। পরবর্তীতে তারা শ্রমজীবীদের এলাকা হিসেবে পরিচিত ৬ কিলোমিটার দূরে সেন্ট্রাল লন্সেসটনের উত্তরাংশে নিউনহ্যাম এলাকায় স্থানান্তরিত হন। ১৯৯৫-২০১২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন পন্টিং। তিনি ২০০৪-২০১১ সাল পর্যন্ত অজিদের টেষ্ট দল ও ২০০২-২০১১ পর্যন্ত অজিদের ওয়ানডে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি মোট ৩টি বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার। আর দুটো বিশ্বকাপে তিনি নিজেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাকে ক্রিকেট বোদ্ধারা ভারতের শচীন টেন্ডুলকার, ওয়েষ্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারার সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে মনে করেন।

বাবা গ্রেইম ও মামা গ্রেগ ক্যাম্পবেল এর উৎসাহ ও উদ্দীপনায় ক্রিকেটের হাতেখড়ি ঘটে পন্টিং এর। পন্টিং এর বয়স যখন ১১ বছর তখন তিনি ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে মোব্রের অনুর্ধ্ব-১২ দলের হয়ে খেলতে নামেন। ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে তাসমানিয়ায় বার্ষিক নর্দান জুনিয়র ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। পাঁচদিন ব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় পন্টিং চারটি সেঞ্চুরি করেন। এই সেঞ্চুরি করার পর বিখ্যাত ব্যাট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কোকাবুরা রিকি পন্টিং এর সাথে প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তি করেন। যখন এই চুক্তি হয় তখন পন্টিং ৮ম গ্রেডে পড়াশোনা করতেন। এরপর এক মাসের ব্যবধানে অনুর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে মাঠে নামেন রিকি পন্টিং। আগের বারের মতো এবারো একইভাবে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখেন পন্টিং। চূড়ান্ত দিনে তিনি জোড়া সেঞ্চুরি করে সকলের মনযোগ আকর্ষণ করে প্রমাণ করে দেন তার ক্রিকেটীয় দক্ষতা। নর্দার্ন তাসমানিয়ান স্কুলস ক্রিকেট এসোসিয়েশন এর সাবেক প্রধান টেড রিচার্ডসন তার সাফল্য তাকে এ স্তরে ডেভিড বুনের সাথে তুলনা করেছিলেন।

একটি বিষয় হয়তো সবার জানা নেই সেটি হচ্ছে পন্টিং কিন্তু ফুটবলও খেলেছিলেন। তার খেলোয়াড়ী জীবনের অন্যতম অংশ হচ্ছে অষ্ট্রেলিয়ার রুলস ফুটবল। তিনি ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শীতকালে জুনিয়র ফুটবলে নর্থ লন্সেসটনের হয়ে খেলেছিলেন। এটি তার জন্য সম্ভাব্য খেলা ছিলো। তবে নর্থ লন্সেসটনের হয়ে অনুর্ধ্ব-১৭ দলে খেলার সময় এক গুরুতর ইনজুরি হয় পন্টিং এর যার ফলে তার বাহু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে পন্টিং আর কোনো প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে খেলতে নামেননি। ১৯৯০ সালে পন্টিং তার দল বছরের বিদ্যালয় জীবন শেষে লন্স বেসরকারি বিদ্যালয় স্কচ ওকবার্ণ কলেজের গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে কজ করেন। ১৯৯১ সালে নর্দার্ন তাসমানিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন পন্টিংকে অ্যাডিলেডের অষ্ট্রেলিয়ান ইন্সটিটিউট অব স্পোর্টস ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণ এর জন্য পাঠায়। পন্টিং এর প্রশিক্ষণ এর সময়কাল ছিলো ২ সপ্তাহ তবে সেই দলের কোচ ১৭ বছর বয়সী পন্টিং এর খেলা দেখে এতই মুগ্ধ হন যে তার এই প্রশিক্ষণ পুরো দু’বছর পর্যন্ত নিয়ে যান। একাডেমির কোচ রড মার্শ বলেছিলেন তিনি পন্টিং এর মতো ক্রিকেটার আর একটিও দেখেননি। ১৯৯২ সালে পন্টিং তাসমানিয়ার পক্ষে পার্থের অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে অভিষেকের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। পন্টিং শেফিল্ড শিল্ডে খেলা সর্বকনিষ্ঠ তাসমানিয়ান ক্রিকেটার এর মর্যাদা পান। শেফিল্ড শিল্ডে তিনি মোট ৩৫০ রান করেন যা তাকে অষ্ট্রেলিয়া অনুর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দেয়।

ঘরোয়া ক্রিকেট ও অনুর্ধ্ব-১৯ দলে সাফল্য পেলেও পন্টিংকে জাতীয় দলে খেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৫ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চারদেশীয় ওয়ানডে প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক ঘটে পন্টিং এর। একই বছরেই তার টেস্ট অভিষেক হয়। ঘরের মাঠে সফররত অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় পন্টিং এর। অভিষেকেই সকলের নজর কাড়েন পন্টিং। ৯৬ রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেও তিনি দেখিয়ে দেন তিনি লম্বা লেসের ঘোড়া। প্রথম টেস্টের পর তিনি নির্বাচকদের আস্থাভাজন হয়ে উঠলেন। প্রথম দিকে তাকে ৬ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করানো হলেও পরবর্তীতে তাকে প্রমোশন দিয়ে সরাসরি ৩ নম্বর পজিশনে জায়গা করে দেয়া হয়। পন্টিং এর টি-২০ অভিষেক ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সালে অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে। সেই ম্যাচে ছিলেন রিকি পন্টিং।

খেলোয়াড় রিকি পন্টিং থেকে অধিনায়ক রিকি পন্টিং এর অভিষেক হতে সময় লাগে ৭ বছর। ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু করা ক্যারিয়ারে ২০০২ সালে এসে প্রথম অধিনায়কত্বের গুরুদায়িত্ব পালন পন্টিং। ২০০২ সাল থেকেই মূলত এই পন্টিং এর নেতৃত্বাধীন এক ভিন্ন অষ্ট্রেলিয়াকে প্রত্যক্ষ করতে থাকে ক্রিকেট বিশ্ব। ২০০২ সালের ২২শে মার্চ অধিনায়ক রিকি পন্টিং এর অভিষেক ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাবার পর থেকেই নিজেকে আরো মেলে ধরতে শুরু করেন পন্টিং। অধিনায়কত্ব পাবার পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে অষ্ট্রেলিয়াকে চ্যাম্পিয়ন করেন। এরপর ২০০৪ সালে অষ্ট্রেলিয়ার আরেক বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ টেষ্ট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। স্টিভ ওয়াহ এর অবসরের পর নিশ্চিতভাবেই টেস্ট দলের অধিনায়কত্বের গুরুদায়িত্ব উঠে আসে রিকি পন্টিং এর কাঁধে। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপ জয়। তেমনি টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ অ্যাশেজ সিরিজ জেতেন পন্টিং। ২০০৫ সালের অ্যাশেজ ও ২০০৬ সালের অ্যাশেজেও জয় পায় পন্টিং এর নেতৃত্বাধীন অষ্ট্রেলিয়া।

তবে যদি কেউ ভেবে থাকেন পন্টিং শুধু সফল তাদের একটু বলে রাখা দরকার। ক্যারিয়ার এর শুরুতে ভালো করলেও ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ এর দিকে মাঠের বাইরে বিতর্কিত কাজ করে আলোড়ন তৈরি করেছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৯৮ সালে ভারত সফরে কলকাতার এক নাইট ক্লাবে দাঙ্গাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন পন্টিং। পরে টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে কড়াভাবে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু পন্টিং সতর্ক না হয়ে ১৯৯৯ সালে সিডনিতে আবারো মাতলামি করে সংবাদমাধ্যমে আসেন। তবে উঠতি বয়সে রক্ত গরম হয়ে এ কাজগুলো পন্টিং করেছিলেন তবে পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং নিজেকে একটু একটু করে শুধরে নিয়েছেন বলেই আজ তিনি এতদূর অবধি আস্তে পেরেছেন। আজ সে অষ্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত।

২০০২ সালে পন্টিং অষ্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হবার আগে পন্টিং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম অ্যাসাইন্মেন্টা ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেই সিরিজে তিনি অধিনায়ক ও ব্যাটিং দু দিক দিয়েই দক্ষতার পরিচয় দেন। পরবর্তীতে তো আর থেমে থাকতে হয় নি। স্টিভ ওয়াহ এর কাছে থেকে টেষ্ট দলের দায়িত্ব বুঝে নেবার পর শেষ হয় অষ্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ এর যুগ। শুরু হয়ে যায় রিকি পন্টিং এর যুগ। একটি জায়গায় অবশ্যই পন্টিং বাকি সবার চেয়ে আলাদা। যেখানে শচীন, লাথা, গাঙ্গুলিরা অধিনায়কত্বের ভাড়ে নিজের আসল খেলায় মনোনিবেশ করতে পারে না সেখানে এই পন্টিং ছিলেন ভিন্ন। তিনি অধিনায়ক হিসেবে দলকে যেমন সাফল্য এনে দিয়েছেন তেমনিভাবে নিজের ব্যাটিংটাকেও একেবারে ভালোভাবে চালিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। বলতে গেলে অধিনায়ক নির্বাচিত হবার পর তার ব্যাংকের ধার আগের চেয়ে আরো দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছিল। ২০০২-২০০৫ সাল অবধি রানের হিসাব করলে সেরা। ব্যাটসম্যানে শীর্ষে আসবে রিকি পন্টিং এর নাম। অষ্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে রিকি পন্টিংকে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পরই সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে ধরা হয়।

এবার একটু রান বিশ্লেষণে আসা যাক। প্রথমে ওয়ানডে দিয়েই আসে যেহেতু ওয়ানডে দিয়ে পন্টিং এর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়। রিকি পন্টিং ৩৭৫টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন তার মধ্যে ৩৬৫টি ইনিংসে ব্যাট করেন। যার মধ্যে অপরাজিত ছিলেন ৩৯টি ইনিংসে। ৪২.০৩ গড় ও ৮০.৩৯ স্ট্রাইক রেটে পন্টিং আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে মোট ১৩৭০৪ রান করেছিলেন। তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৬৪। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন- ৮২টি ও সেঞ্চুরি করেছেন ৩০টি। বাউন্ডারি মেরেছেন ১২৩১টি ও ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন ১৬২টি। ওয়ানডেতে মাঝে মধ্যে বোলিং করে উইকেট নিয়েছেন ৩টি এবং ফিল্ডিং এ বেশ পারদর্শী ছিলেন পন্টিং। তিনি ওয়ানডেতে মোট ১৬০টি ক্যাচ ধরেছিলেন।

 

পন্টিং ১৬৮টি টেস্ট ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন তার মধ্যে ২৮৭টি ইনিংসে ব্যাট করেছিলেন। টেস্টে ৫১.৮৫ গড় ও ৫৮.৭২ স্ট্রাইক রেটে মোট রান করেছিলেন ১৩৩৭৮ রান। টেষ্টে তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান হচ্ছে- ২৫৭ রান। তিনি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন- ৬২টি ও সেঞ্চুরি করেছিলেন ৪১টি ও ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন ৬টি। বাউন্ডারি মেরেছেন- ১৫০৯টি ও ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন- ৭৩টি। টেষ্টে বোলিং এ ৫টি উইকেট নিয়েছিলেন পন্টিং এবার ফিল্ডিং এ তিনি ১৯৬টি ক্যাচ ধরেছেন।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খুব কম খেলেছেন এই ব্যাটসম্যান। ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন পন্টিং যার মধ্যে ১৬টি ইনিংসে ব্যাট করেছিলেন পন্টিং। দুটি ইনিংসে ছিলেন অপরাজিত। ২৮.৬৪ গড় ও ১৩২.৭৮ স্ট্রাইক রেটে পন্টিং মোট ৪০১ রাজ করেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ- ৯৮ রান। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন- ২টি। বাউন্ডারি মেরেছেন- ৪১টি ও ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন- ১১টি। ফিল্ডিং এ ক্যাচ ধরেছেন- ৮টি।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে পন্টিং মোট ২৮৯টি ম্যাচ খেলেছেন যার মধ্যে ৪৯৪টি ইনিংসে মাঠে নেমেছেন পন্টিং। অপরাজিত ছিলেন ৬২টি ইনিংসে। ৫৫.৯০ গড়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে মোট ২৪১৫০ রান করেন পন্টিং। তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিলো ২৫৭ রান। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন- ১০৬টি ও সেঞ্চুরি করেছেন- ৮২টি। বোলিং এ উইকেট পেয়েছেন ১৪টি ও ক্যাচ ধরেছেন ১৯৫টি।

অষ্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার দিক দিয়ে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন স্টিভ ওয়াহ ও পন্টিং। দুজনেই ১৬৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলার গৌরব অর্জন করেন। ওয়ানডেতেও সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড পন্টিং এর- ৩৭৪টি। অষ্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ( ৭৭ ) অধিনায়কত্বের রেকর্ড রিকি পন্টিং এর। এছাড়া ওয়ানডেতে অষ্ট্রেলিয়ার হয়ে অধিনায়ক হয়ে সবচেয়ে বেশি ২২৯টি ম্যাচে অধিনায়কত্বের রেকর্ড পন্টিং এর। অষ্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ( ১৯৬টি ) ধরার রেকর্ড পন্টিং এর। একই রেকর্ড ওয়ানডেতেও। ওয়ানডেতেও অষ্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ( ১৫৯টি ) এর রেকর্ড পন্টিং এর। টেস্টে ক্রিকেটে অষ্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান ( ১৩৩৭৮ ) এর রেকর্ড পন্টিং এর। একই রেকর্ড ওয়ানডেতেও বিদ্যমান রেখেছেন পন্টিং। ওয়ানডেতেও অষ্ট্রেলিয়ার হয়ে শীর্ষ রান সংগ্রাহক পন্টিং। অষ্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে ও ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক এই রিকি পন্টিং। এছাড়া টেস্ট ও ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ডের অধিকারী এই রিকি পন্টিং।

রিকি পন্টিং টি-২০ ক্রিকেট বেশি খেলেননি। ২০০৯ সালেই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে চলে যান। ওয়ানডে ও টেস্ট আরো অনেকদিন চালিয়ে যান। ২০১২ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি ব্রিসবেনে ভারতের সাথে ওয়ানডে খেলার পর আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন পন্টিং। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে অবসর নেবার সিদ্ধান্ত নেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেবার মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পার্থের অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭ বছর পর ২০১২ সালে সেই পার্থে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অবসর নেন টেস্ট থেকে। রিকি পন্টিং ৩৭ বছর বয়সে টেস্ট থেকে অবসর নেন। তবে চাইলে আরো অনেকদিন ক্রিকেটটা চালিয়ে যেতে পারতেন তবে তার অবসরের ঘোষণা ছিলো যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টের আগে টেস্ট পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা অপেক্ষা করছিলেন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের জন্য। মূলত অবসরের আগে তার সাম্প্রতিক ফর্ম ততটা ভালো যাচ্ছিলো না। আর সে কারণে সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো বেশ। তবে তিনি চেয়েছিলেন অ্যাশেজ সিরিজ খেলে অবসরে যেতে। তবে হঠাৎ করেই দিয়েছেন তার অবসরের ঘোষণা। আর তার অবসর টেস্ট ম্যাচের মাধ্যমে তিনি ছুঁয়ে ফেলেছিলেন অষ্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ টেস্ট খেলার স্টিভ ওয়াহর রেকর্ডটি।

অষ্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তি ক্রিকেটার এর নাম রিকি পন্টিং। ক্রিকেট ও অষ্ট্রেলিয়া যতদিন থাকবে ততদিন এই রিকি পন্টিং এর নাম উচ্চারিত হবে। তার মতো লিজেন্ড ক্রিকেটার পেয়ে অষ্ট্রেলিয়া ক্রিকেট অবশ্যই ধন্য। তার রয়েছে রেকর্ডের ফুলঝুরি। আরো কিছুদিন ক্রিকেট খেললেও হয়তো আরো অনেক রেকর্ডের অধিকারী হতে পারতেন। তবে তিনি যা করে রেখে গিয়ে তাতে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »