সুদিনের অপেক্ষায় ক্রিকেটার শফিউল হায়াত হৃদয়

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

ক্রিকেটের প্রতি শফিউল হায়াতের আগ্রহ সেই ছোটবেলা থেকে। ক্রিকেটকে ভালোবেসে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। একজন ক্রিকেটার হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ হয় এখানেই।

স্বপ্ন পূরণের শুরুটা হয় ২০১৬ সালে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের। প্রথমবারের মত সুযোগ আসে যুব বিশ্বকাপ অর্থাৎ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার। আজকের ন্যাশনাল টিমের নিয়মিত মুখ মেহেদী হাসান মিরাজ, সাইফুদ্দিন, নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে ঐ বিশ্বকাপে ছিলেন হৃদয়ও। যদিও ম্যাচ খেলার খুব একটা সুযোগ আসে পান নি তবে একটি প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন মূল্যবান ৬৮ রান। আর মূল পর্বের একটি ম্যাচে সুযোগ পেয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে শেষের দিকে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ম্যাচ বাঁচানো ২১ রান।

তখনকার সময়ে যারা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খবর রাখতেন নিয়মিত তাদের কাছে শফিউল হায়াত হৃদয় খুবই পরিচিত এক নাম। যখনই সুযোগ এসেছে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন ব্যাটিং নয়তো বোলিংয়ে। মূলত ব্যাটসম্যান হলেও অনেক সময় দলের প্রয়োজনে বল হাতেও নিয়েছেন, সফলতাও এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের ক্রিকেটে একটা ইস্যু বারবার ওঠে আসছে আর সেটা হল আমাদের পাইপলাইনে প্রচুর ক্রিকেটার কিন্তু সঠিক পরিচর্যার অভাবে অনেক প্রতিভার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। এখন যদি উদাহরণ হিসবে এই ক্রিকেটারের কথাই ধরা যায় তাহলে দেখা যায়, যেখানে তার টিমমেটরা ন্যাশনাল হিরো হৃদয় সেখানে এখনো অবহেলিত।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) বিগত তিন বছর ধরে খেলছেন নিয়মিত। প্রথম বছর ভিক্টোরিয়ার হয়ে খেললেও পরের দুই বছর ধরে খেলছেন গাজী গ্রুপের হয়ে। ভিক্টোরিয়ার হয়ে ৯ ম্যাচ খেলার সুযোগ পান এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। আর ঐ সিজনে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন এই ক্রিকেটার। ভিক্টোরিয়ার হয়ে ৯ ম্যাচে করেন ৪০৬ রান প্রায়  ৪০ এভারেজে যেখানে ছিলো তিনটা অর্ধশতক। মূলত তার এই পারফরম্যান্সেই জন্যই পরের দুই সিজনের জন্য হৃদয়কে দলে ভেড়ায় গাজী গ্রুপ।

দলের বিপর্যয়ে দায়িত্ব নিয়ে বড় ইনিংস খেলার অনেক রেকর্ড আছে তার। যুব বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ম্যাচে দলের বিপর্যয়ে খেলেছিলেন ৬৯ বলে ৬১ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস। এছাড়া ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকা যুব দলের বিপক্ষে ৯৬ বলে ৮৩ রানের মূল্যবান এক ইনিংস খেলেন শফিউল।

এর পরে আরো কয়েক বছর চলে গেলেও এখন সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। এর পেছনে তার ব্যর্থতার চেয়েও বড় কারণ সুযোগ না দেওয়া আর সঠিক পরিচর্যার অভাব। নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে করছেন কঠোর পরিশ্রম। এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জিম আর প্র্যাকটিসে। লোকাল দুই কোচের অধীনে কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আর ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগে দল পেলেও ম্যাচ খেলার তেমন একটা সুযোগ আসেনি হৃদয়ের। তবে অবশ্যই সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দেবার জন্য প্রস্তুত আছেন তিনি।

শফিউল হায়াত বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য হতে পারেন এক লম্বা রেসের ঘোড়া। তার পারফরম্যান্স আর ফিটনেস এমনটাই বলে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিং আর ফিল্ডিং নিয়েও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। ২১ বছর বয়সী তরুণ এই ক্রিকেটার বিশ্বাস করেন এ দেশের ক্রিকেটকে দেবার মত অনেক কিছুই আছে তার মাঝে। তবে অপেক্ষা কেবল সেই সুযোগের। সুযোগ আসলে অবশ্যই হতাশ করবেন না। একটা সময় শফিউল হায়াত ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৫ এবং ১৭ দলের অধিনায়ক।

মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে প্র্যাকটিসের সুযোগ না পেলেও নিয়মিত প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকা এই ক্রিকেটারের স্বপ্ন একদিন এই ঘরের মাঠেই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়ানোর, প্রতিনিধিত্ব করা নিজের দেশের। হয়তো একদিন তার সেই স্বপ্ন পূরণ হবে। আর নিজের ক্রিকেট আইডল মাইকেল ক্লার্ক কিংবা বিরাট কোহলিদের মতই প্রতিপক্ষের বোলারদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠবেন শফিউল হায়াত হৃদয়। লোকাল দুই কোচ হুমায়ূন কবীর শাহিন ও নয়নের অধীনে কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত।

 

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »