সাজিদা জেসমিন »
জিম্বাবুয়ের ২০০০ এ-র আগেই টিম টার কথা অবশ্যই শুনে থাকবেন। মানে যারা ক্রিকেটে মোটামুটি আসক্ত। অনেকে খেলা দেখেছেন ও। তখন আমরা মোটামুটি ক্রিকেটে টিকে থাকা শিখতে শুরু করেছি। আমাদের সোনালি যুগের সবে শুরু৷ আকরাম-নান্নু-বুলবুল-সুমন ভাইদের হাত ধরে লাল-সবুজের পতাকা তখন বিশ্বমঞ্চে সবে উড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর জিম্বাবুয়ে তখন আমাদের বর্তমান দলের মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
তখন তারা মোটামুটি শক্তিমত্তায় অনেকটা এগিয়ে। এরপর কি হয়েছে মোটামুটি জানারই কথা। বর্তমানে দলটি একেবারে নড়বড়ে অবস্থানে। আর আমরা উড়ছি বিশ্বমঞ্চে। অর্থনৈতিক দিক থেকেও আমাদের বোর্ড সমৃদ্ধশালী। দুর্নীতির কড়ালগ্রাসে জিম্বাবুয়ে বোর্ড যখন তলানিতে, হারিয়েছিলো আইসিসির সহায়তাও। তখন এই টিমটা ক্রিকেটকে ভালোবেসে আবারো নতুন করে জেগে উঠার স্বপ্ন দেখছে।
তার মানে এই না যে, তারা একেবারে ফেলনা। তাদের অবশ্যই যোগ্যতা আছে। তারা প্রতিপক্ষের কাছে হারলেও লড়াই করার মানসিকতা তাদের আছে। আর এই মানসিকতা নিয়েই একসময় আমাদের ক্রিকেট এগিয়েছে। আমরাও ছিলাম তলানীর দল। আর এখন আমরা দল হারলে সমালোচনায় মেতে উঠি। তবে সে সুযোগটা আগে ছিলোনা।
আগে আমরা কোনভাবে ভালো খেলুক দল- এতেই ছিলাম সন্তুষ্ট। তখন আমরা(ঐ জেনারেশন) টিভি সেটের সামনে বসতাম শুধুমাত্র ভালো খেলা দেখার আশায়। কেউ ফিফটি করলো, বা উইকেট পেলো। আবার কেউ বাউন্ডারি মারলো। এতেই খুশি ছিলাম আমরা। এ-র বেশি প্রত্যাশা করিনি বলা চলে। তখন বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এশিয়ার ভারত-পাকিস্তান -শ্রীলঙ্কা।
আমাদের চোখে তখন এই এশিয় দলগুলোরই জয়গান ছিলো। আর বাংলাদেশের বেলায় যদি ২/৪টা বাউন্ডারিও আসে তাতে আমরা ছিলাম দারুণ খুশি। কেউ কোনভাবে একটা ফিফটি বা উইকেট পেলে পরিসংখ্যান ঘাটতে বসতাম কত তম হলো এটি। তখন আমাদের খেলোয়াড়দের বেতন ও নামমাত্র ছিলো।
আজ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন বিশ্বমঞ্চে লড়াই করার মানসিকতা রাখি। আমাদের মেয়েরা ৬০০টাকা বেতন নিয়েও এশিয়া কাপ জিতেছে। আমরা বিশ্বাস রাখি পুরুষ দলের মতো নারী দলও একদিন বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াবে। সবেতো শুরু। তারা এখন লড়াই করার মানসিকতা রাখে।
আমাদের অনূর্ধ্ব -১৯ টিম বিশ্বকাপ জিতেছে। প্রতিভাবান কিছু তরুণ আছে আমাদের। বিশ্বমঞ্চ দেখেছে টাইগারদের দাপট। লড়তে শিখেছে বাঘেরা হয়েছে প্রমাণিত। বিশ্বমঞ্চে উড়েছে লাল-সবুজের পতাকা। বেজেছে জাতীয় সংগীত। দেশের ক্রিকেট এগুচ্ছে।
শূন্য থেকে শুরুটা হয়েছিলো। আজ সামনের অগ্রযাত্রায় আমাদের যোগ হয়েছে অনেক সম্মান। তখন আমাদের মা-বাবারা ক্রিকেট বললে বলতো উচ্ছন্নে গেছে। আর এখন দেখা যায় ভোরে মা-বাবারা সন্তানকে একাডেমিতে ক্রিকেট প্রাকটিসে নিয়ে যায়। আমরা এগুচ্ছি। আমরা শিখছি।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া -ইংল্যান্ড -ভারত-নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোর রয়েছে ২০০বছরের মতো ক্রিকেট ইতিহাস। আর আমরা তার সিকিভাগ ও অভিজ্ঞতা অর্জন করিনি। তাই বলে এটা বলছি না সমালোচনা হবেনা। সমালোচনা হওয়া উচিত। তবে ট্রল নয়। আমরা আমাদের নিয়ে সমালোচনা করছি মানে বলতে হবে আমরা অবশ্যই এগিয়েছি। আর ভালো খেলতে শিখেছি বলেই আমরা সমালোচনা করার যোগ্য হয়ে উঠেছি৷ আগেতো সেটাও ছিলোনা।
সবশেষে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট হয়তো আবারো শূন্য থেকে শুরু করে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাঁরা বরাবরই আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। এই ছেলেগুলোর মধ্যে চেষ্টাটা আছে। তাঁরা করেও দেখাবে। আর সেই সাথে আমরাও এগুবো সামনে। লড়াই করতে শিখেছি। এবার লড়াইটা বিশ্বমানের করে নিতে হবে। একজন সাকিব আর পঞ্চ-পান্ডবের উপর নির্ভরশীল না হয়ে দল হয়ে উঠুক দুর্দান্ত একাদশ। শুভ কামনা। জয়তু বাংলাদেশ ক্রিকেট।