নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
আজ ৩০ অক্টোবর! বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম প্রাপ্তির দিন গুলোর একটি। ৭ বছর আগে ঠিক আজকের এইদিনে ক্রিকেটের জন্মদাতা ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো টেস্ট ফরম্যাটে দাপুটে ভাবে পরাজিত করে ইতিহাস রচনা করেছিল টাইগাররা।
মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের স্পিন ঘুর্নি ও তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কল্যানে ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো হারায় বাংলাদেশ।একই সাথে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজও ড্র করেছিল টাইগাররা। মিরপুর শেরে-বাংলা স্টেডিয়ামে তিন দিনেই তুলে নেওয়া অসাধারণ জয়টা ১০৮ রানের।
চট্রগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচে ইতিহাস গড়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছেও তীরে এসে তরী ডুবিয়েছিল বাংলাদেশ। জয়ের খুব কাছে গিয়েও ভাগ্যদেবতা সঙ্গ না দেয়ায় সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারতে হয় টাইগারদের। জয়ের খুব কাছে গিয়েও এইভাবে হেরে যাওয়াটা খুব আক্ষেপের ছিল টাইগার ক্রিকেটারদের জন্য। এইভাবে ম্যাচ হেরে সবার একটাই আক্ষেপ! ইংল্যান্ডকে হারানোর এমন সুযোগ কি আর পাবো?
হয়তো সাকিব, তামিম, মুশফিক, মিরাজদের মনের কথা গুলো ক্রিকেট ইশ্বর খুব মনযোগ দিয়ে শুনছিলেন। আর তাই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচে চরম নাটকিয়তায় ভরা ম্যাচে শেষ হাসি হাসিয়েছেন টাইগার বাহিনীকে।
চলুন সামান্য স্মৃতিচারণ করা যাক ঐতিহাসিক এই ম্যাচ জয়ের।
১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচে হোম অফ ক্রিকেট মিরপুরে ইংলিশদের মুখোমুখি হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দিনে দুর্দান্ত এক শতকের দেখা পান দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। প্রথম ইনিংসে তামিমের ১০৪ ও মমিনুলের ৬৮ রানের ইনিংস ব্যাতিত বলার মতো কোন স্কোর করতে পারেননি আর কোন ব্যাটসম্যান, যার ফলে প্রথম ইনিংসে ২২০ রানে থামে বাংলাদেশ। ইংলিশদের হয়ে বল হাতে মঈন আলীর শিকার ৫ উইকেট! এছাড়া
ক্রিস ওকস ও বেন স্টোকস নেন যথাক্রমে ৩ ও ২ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে টাইগারদের ২২০ রানের জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে মেহেদি হাসান মিরাজের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ২৪৪ রানে গুটিয়ে যায় ইংলিশরা। ফলে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ইংলিশরা পায় ২৪ রানের লিড। টাইগারদের হয়ে প্রথম ইনিংসে মিরাজের শিকার ৬ উইকেট, এছাড়া তাইজুল ৩ ও সাকিবের শিকার এক উইকেট।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইমরুল কায়েসের ৭৮, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৪৭ ও তামিম ইকবালের ৪০ রানের উপর ভর করে ২৯৬ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় মুশফিক বাহিনী। ফলে জয়ের জন্য সফরকারী ইংল্যান্ডের লক্ষ্যমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ২৭৩ রান। ২৭৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখায় ইংলিশ দুই ওপেনার।
উদ্বোধনী জুটিতে ১০০ রান তোলে অলিস্টার কুক ও ব্যান ডাকেট। বীনা উইকেটে ইংলিশদের দাপুটে ১০০ রানের উদ্বোধনী জুটি দেখে মনে হচ্ছিলো আরো একটি শোচনীয় পরাজয় অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। কেই বা জানতো ক্রিকেট বিধাতা এই ম্যাচের জন্য তুলে রেখেছেন চরম নাটকিয়তা! দলীয় ১০০ রানের মাথায় মিরাজের শিকারে পরিনত হয়ে ফিরে যান বেন ডাকেট। ব্যান ডাকেটের বিদায়ের সাথে সাথে কুক-ডাকেটের শত রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গে।
ডাকেট যখন আউট হয়ে ফিরে যান তখন ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন আর মাত্র ১৭৩ রান! আর হাতে আছে ৯ উইকেট। ক্রিকেটের জন্মদাতা ইংল্যান্ডের জন্য এটি মামুলি লক্ষ্যমাত্রা। কিন্তু ক্রিকেট ইশ্বরের চরম নাটকিয়তায় পুরো ম্যাচের চিত্র বদলে যায় একনিমিষে।মিরাজ-সাকিবের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১০০ রান থেকে মাত্র ৬৪ রান তুলতেই হাতে থাকা বাকী ৯ উইকেট হারিয়ে বসে ইংলিশরা। যার ফলে ১০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে ইংলিশদের বিধ্বস্ত করে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড বধের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।ইনিংসে প্রথম ইনিংসের মতো ৬ উইকেট শিকার করেন মেহেদি হাসান মিরাজ, আর সাকিব লুপে নেন বাকী ৪ উইকেট।
উল্লেখ্য টাইগারদের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম আনন্দঘন দিনটির চার বছর পূর্ন হয়েছে আজ।
২০১৬ সালের আজকের এইদিনে গোটা দেশকে জয়ের আনন্দে ভাসিয়েছিল ওরা ১১ জন।