সাকিবনামা

https://scontent.fdac4-1.fna.fbcdn.net/v/t1.0-9/36386236_2027432020601594_1928619179817041920_n.jpg?_nc_cat=104&_nc_eui2=AeFY40879vpUlXD3TvLuwunYiYPt9keMWugjnmsYPL9A2_cQ-azY1GmWWQy36LFNFzNLAU2kdDYB9vV9Qwdjt7cfxuFbw0DGkcoiJ24B4pOm6Q&_nc_ht=scontent.fdac4-1.fna&oh=926e9b4229d9f6e3ffd66fe5510e3767&oe=5D672D33 »

মান্না চৌধুরী- শাহিন আফ্রিদির বলে আউট হয়ে যখন ফিরছেন তখন নামের পাশে মোটা দাগে লেখা ৬৪ রান। বিশ্বকাপে ৮ ইনিংস ব্যাটিং করে দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে পাঁচ ফিফটি! মাঝখানে এক ইনিংসে বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ হয়েছেন ৪১ করে। এ তো গেল উইলোর কীর্তি।

সাদা রঙের যে বলকে একের পর এক সীমানা ছাড়া করে কেটেছে স্বপ্নের কিছু দিনরাত, সেই বল নিজে হাতে নিতেই ব্যাটসম্যানদের জন্য হয়ে গেছে ধাঁধাঁর নাম! বাঁহাত ঘুরিয়ে নিয়েছেন ১১ উইকেট! এমন অবিশ্বাস্য কীর্তি বেন স্টোকস, হার্দিক পান্ডিয়া, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল কিংবা কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের নয়, আপনার, আমার সবার পরিচিত রাগী আর জেদী সাকিব আল হাসানের! সেই অনেকদিন থেকেই দেখে আসছি বর্তমানের নাম্বার ওয়ানকে। কিন্তু এত এত কীর্তির পরও তাঁকে নিখুঁত মনে হয়নি কখনো। ব্যাট আর বল নিয়মিতই হয়তো কথা বলেছে দেশের হয়ে কিংবা আইপিএল নামক ক্রিকেটের রঙিন দুনিয়ায়। তারপরও সাকিবে একজন যুবরাজ সিং বা ল্যান্স ক্লুজনারের ছবি আমি দেখিনি। না দেখার কারণও আছে অনেক। আজ একটা ভালো ইনিংস অথবা ভালো একটা স্পেল উপহার দিলেন তো কাল সিলেট কিংবা কক্সবাজারে লেগে গেল তাঁরই নামে পাগল কোন ভক্তের সঙ্গে! লেগে টেগে সেটা ফেসবুক, মিডিয়া হয়ে এমন ভাইরাল যে জাত যায় যায় অবস্থা! পরিস্থিতি সামাল দিতে কখনও কখনও স্যরি টরিও বলতে হয়েছে! এসব নিয়ে সাধারণে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক হয়, কথার লড়াই চলে চায়ের আড্ডায়। এই তো বিশ্বমঞ্চে যাওয়ার আগে দেশের শীর্ষ একটি দৈনিকে সাকিবকে নিয়ে সমালোচনায় গর্জে ওঠে তাঁর ভক্তকূল। সেই সমালোচনার লিখিয়ে যিনি, তাঁকে হুমকি পর্যন্ত শুনতে হয়েছে। চিন্তা করেন ভক্তদের বাড়াবাড়ি।

এসবে অবশ্য বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডারের কোন হাত নেই। সাকিবিয়ান নামে যে ফ্যান পেজ তাঁর অনুমতি হয়তো দিয়েছেন, কিন্তু তাই বলে ফ্যানদের তো আর যা ইচ্ছে তা করার কথা বলেননি। তারপরও সাকিবের উপর বাংলার কোটি মানুষের মতো আমারও বেশ রাগ হয়। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড কেন নিজেকে আটকে রাখতে পারেন না ধৈর্যের বাণে, কেন মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে মিলে না মাঠের বাইরের লড়াই! শচীন টেন্ডুলকারের মতো রানমেশিন যেখানে দুই লড়াইয়েই বিজয়ী, সত্যিকারের গ্রেট। শুধু কি টেন্ডুলকার, দুই-একটা ব্যতিক্রম বাদে ভদ্রলোকের খেলা বলে পরিচিত ক্রিকেটে তো একাল,সেকালের সবাই মোটামুটি নিস্কলুষ, বিতর্কের উর্ধ্বে। সাকিবের বেলায় অবশ্য অন্যরকম কিছুও যে ঘটেনি তা নয়। নিজে নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে বিতর্কিত হয়েছেন ঠিক, আবার এমনও তো হয়েছে- ষড়যন্ত্রের জাল! তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ফেসবুক নামের অলস মেশিনে জুড়ে দেয়া হয়েছে মিথ্যার বেসাতি! কখনও তাঁকে জড়িয়ে, কখনও বা তাঁর জীবনসঙ্গীনি শিশিরকে জড়িয়ে! এসব নির্লজ্জ্ব ষড়যন্ত্র কিন্তু বাইরের কেউ করেনি, করেছে এদেশেরই কিছু ঘৃণিত মানুষ। সাকিব অবশ্য এসবে কান না দিয়ে জবাব দিয়েছেন সোজা ব্যাটে, হুক, পুলে কিংবা ভয়ংকর সব ডেলিভারিতে।

বাংলাদেশ ধীরে ধীরে সব ক্ষেত্রে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। মানুষের জীবনমান হয়ত আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত, পদ্ধা সেঁতু, মেট্রো রেলের মতো দৃশ্যমান উন্নয়নে আগামীর বাংলাদেশের ছবি দেখছে নতুন প্রজন্ম। তারপরও বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশ তো এখনও বাস করে দারিদ্রের নীচে। প্রকাশ্যে কুপিয়ে মানুষ হত্যা হয়, মাত্রা বাড়তে বাড়তে এখন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে! শত সমস্যার এই দেশের কেউ বিশ্ব দরবারে নিজেকে মেলে ধরলে সেটা বিরাট ব্যাপার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লড়াই, সংগ্রাম আর রাজনীতির কারণেই হয়েছেন বিশ্বমুখ। তাঁর সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ তো এখন বিশ্ব ঐত্যিহ্যেরই অংশ। মেধা, প্রঙ্গায় তিনি বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাস্ট্রের জন্ম দিয়েছেন ভয়ডরহীন থেকে। আরো অনেকেই হয়তো অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখে প্রশংসা কুড়িয়েছেন বিশ্ব দরবারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো এমন পাহাড়সম উচ্চতায় আর কে পৌছেছেন কোন কালে? ক্রিকেটের সাকিব আল হাসান যেন আমাদের ক্রীড়া মানচিত্রের বঙ্গবন্ধু! একটুও কি বাড়িয়ে বলা হলো। আমি নিশ্চিত এ নিয়ে ঝড় উঠবে। ঝড় উঠলেও অবাক হওয়ার কি আছে। এ দেশে বঙ্গবন্ধুকেও তো জাতির জনক মানতে চায় না অনেকে! দেশনির্মাতাকে নিয়ে নানা কটুক্তি করে মূর্খতার অহংবোধ দেখিয়ে! সেখানে সাকিব আল হাসানের অর্জন বেশিদিন বেঁচে থাকবে সেটা আশা করাই বোকামি।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »