বিশেষ প্রতিবেদক »
ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই ১৯৯৯ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছিলেন মীর ইফতি খাইরুল ইসলাম। কিন্তু ক্রিকেটার হতে পারেননি তিনি। তবে ক্রিকেটের বাইরে নেই, অাছেন জাতীয় দলের ট্রেইনার হিসেবে। ক্রিকেট নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন ক্রিকেট, ক্রিকেটার ও ট্রেইনারদের উত্থান পতন, পাওয়া না পাওয়া ও হতাশার গল্প। নিউজক্রিকেট২৪ এর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
নিউজক্রিকেটঃ আপনি একজন ক্রিকেটার ছিলেন। বয়সভিত্তিক দল গুলোতে খেলেছেন। বিকেএসপির ছাত্র ছিলেন। ন্যাশনাল লীগ খেলেছেন। সাধারণত এই অবস্থায় সবাই কোচিং এর দিকে ঝুকে থাকে। কিন্তু আপনি ট্রেইনার কেন হলেন?
মীর ইফতি খাইরুল ইসলামঃ প্রথমত জাতীয় দলে সবাই খেলবে এমনত না। তাছাড়া জাতীয় দলে সুযোগ না পেলে আর্থিক অনটনের একটা ব্যাপার থেকেই যায়। কিন্তু আমার স্বপ্ন, ধ্যান ধারণা ছিল ক্রিকেটের সাথে যুক্ত থাকার। তাই ২০০৪ এর দিকে রিচার্ড মেকিংসের অনুপ্রেরণায় আমি এই পেশায় যুক্ত হই। তাছাড়া দেবাশীষ স্যার আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমি ক্লাব ক্রিকেট, বয়সভিত্তিক সব লেভেলেই কাজ করেছি। জাতীয় দলেও কাজ করেছি। প্রথম কাজ আমায় দিয়েছিল মোহাম্মদ মিথু, ন গাজি ট্যাংক ক্লাবে। তাছাড়া এই পেশায় ভাল একটা আয়ের সুযোগ পেয়েছি। তাই এই দিকেই মনোনিবেশ করলাম।
নিউজক্রিকেটঃ একজন ট্রেইনার হতে হলে কি ধরণের দক্ষতা থাকা জরুরি?
মীর ইফতি খাইরুল ইসলামঃ একজন ট্রেইনার হতে হলে প্রথমত শারিরিক ও মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে। ভাল শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। শারিরীক শিক্ষা থেকে আসতে ভাল হয়। তাছাড়া সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল ঐ খেলার সাথে যুক্ত থাকতে হবে। ট্রেইনাররা শুধু ট্রেইনিং করায় তা না, একজন খেলোয়াড়কে বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে হয়।
নিউজক্রিকেটঃ পেশা হিসেবে এটি কতটুকু সুরক্ষিত?
মীর ইফতি খাইরুল ইসলামঃ সব পেশাই হল একটা যুদ্ধের ময়দান। এখানে টিকে থাকতে হলে যুদ্ধ করতে হবে। তবে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা, নিজের কাজটা ঠিক মত করা, খেলোয়াড়দের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা অনেকটা সাহায্য করে এই পেশায় টিকে থাকতে। তাছাড়া আমাদের দেশে পর্যাপ্ত ট্রেইনারের অভাব রয়েছে। আমার আন্ডারে ১০-১২ জন কাজ করছে। এখানে কাজের অনেক সুযোগ আছে, তবে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে হবে।
নিউজক্রিকেটঃ আপনি বিসিবিতে কাজ করছেন। সেখানে ট্রেইনারদের কাজের ধরণটা কেমন?
মীর ইফতি খাইরুল ইসলামঃ বিসিবিতে আমরা ৫ জন ট্রেইনার রয়েছি। তাছাড়া ডিবিশনাল ও অন্যান্য দিকেও বিসিবির ট্রেইনার রয়েছে। তবে সবার কাজের ধরণ এক রকম নয়। আমি মুলত স্ট্রেন্থ, ফিটনেস এগুলো নিয়ে কাজ করি।
নিউজক্রিকেটঃ কাজ করতে গিয়ে কখনো কোন সমস্যায় পড়তে হয়েছে কিনা?
মীর ইফতি খাইরুল ইসলামঃ হ্যা, এটা সত্য যে কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ভাল কাজ করলে, সৎ থাকলে আপনার পিছনে লাগার লোক অভাব হবেনা। যেমন ধরেন, সবসময় কাজ করেছে একজন, কিন্তু ট্যুরে গিয়েছে আরেকজন।
নিউজক্রিকেটঃ জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ট্রেইনিং করানোর সময় বেগ পেতে হয়কি?
মীর ইফতি খাইরুল ইসলামঃ জাতীয় দলে যারা খেলে তারা অন্য লেভেলের। তারা নিজেরাই যথেষ্ট ফিট থাকার চেষ্টা করে। ফিটনেসের ব্যাপারে তারা খুবই অভিজ্ঞ। তাদের সাথে কাজ করা খুবই সহজ, যেমনটি আপনি জুনিয়র লেভেলে পাবেন না। তবে বিদেশি কোচদের থেকে আমরা দেশিরা কিছুটা বেশি সমস্যায় পড়ি।
নিউজক্রিকেটঃ সব লেভেলের খেলোয়াড়দের কি আপনি এরকম ব্যবহার করেন?
মীর ইফতি খাইরুল ইসলামঃ হ্যাঁ, আমাদের কাছে সবাই সমান, আমি ব্রায়ান লারা, ক্রিস গেইলের সাথেও কাজ করেছি। সবাইকে আমরা সমান চোখে দেখি। ফিটনেসের ক্ষেত্রে কেউ ছাড় পায়না। আমি সাধারণত ৩টা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি। একটা কাজ না করলে অন্যটা প্রয়োগ করি।
নিউজক্রিকেটঃ তরুণদের জন্য আপনার কি পরামর্শ?
মীর ইফতি খাইরুল ইসলামঃ যেহেতু আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাজের সুযোগ আছে, কিন্তু ভাল মানের ট্রেইনারের অভাব রয়েছে, সেহেতু তরুণদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তবে তারা যেন নিজেদেরকে ঠিকভাবে গড়ে তুলে এই পেশায় আসে, তাছাড়া খেলাটির সাথে যেন সম্পৃক্ত থাকে।
নিউজক্রিকেটঃ ট্রেইনিং ও ট্রেইনারদের নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? ঘরে বসে কেউ কি এই সুবিধা নিতে পারবে?
মীর ইফতি খাইরুল ইসলামঃ আমি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছি। বিডিট্রেইনারস.কম নামে। এখানে আমাদের অনেক ট্রেইনারা সম্পৃক্ত। আমরা হোম সার্ভিস দিয়ে থাকি। তাছাড়া অনেক ট্রেইনারদের আমরা কাজও দিয়ে থাকি। আমাদের পরিকল্পনা মতে আশা করছি আগামী ৫ বছরে আমরা এক হাজার ট্রেইনার তৈরি করব যারা কিনা বাসায় গিয়ে লোকদের ফিটনেস ট্রেইনিং করাবে। তাছাড়া আমাদের ট্রেইনাররা সব ধরণের খেলার সাথে যুক্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে। সাধারণ মানুষরা আমাদের ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করে ফিটনেস সেবা নিতে পারবে। তাছাড়া ফোন করেও আমাদের সেবা নিতে পারবে।
নিউজক্রিকেটঃ করোনা পরিস্থিতিতে কিভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায় এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি?
মীর ইফতি খাইরুল ইসলামঃ করোনা যেহেতু মহামারী আকার ধারণ করেছে,সেহেতু সবাইকে আমি বলব যেন ঘরে থেকে ফিটনেস ঠিক রাখার কাজ গুলো করেন সবাই। এতে শরীর মন দুটোই ভাল থাকবে।
বাংলাদশ সময়: ০৪:১১ পিএম
নিউজক্রিকেট২৪/এসএসপি/এসএমএস