শুভ জন্মদিন রশিদ খান

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

আজ ২০ এ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮ সালের এইদিনে আফগানিস্তানের নানগারহরে জন্ম হয় এক বালকের। তখনও কে ভেবেছিল এই ছেলেকে দেখে ব্যাটসম্যানদের বুকে কাপন ধরবে? কিছু বছর যেতে না যেতেই যুদ্ধে পালিয়ে রশিদ খানের পরিবার আশ্রয় নেন পাকিস্তানে। কিন্তু দেশ যতই বিপদে থাকুক দেশের মাটি যে খাটিই হয়। সেটা ভেবেই আবারও ফিরে যান আফগানিস্তান। নিয়মিত লাশের গন্ধে অভ্যস্ত হয়ে তার পরিবার।

যে দেশে ঘুম ভাঙে তলেবান-জঙ্গিদের বোমার শব্দে সেখান থেকেই উঠে এসেছেন হালের ব্যাটসম্যানদের ঘুম হারাম করা রশিদ খান।

দশ ভাইবোনের বড় পরিবার তাদের। ৭ ভাই ৩ বোন। আর ভাইদের সাথে টেপ পেচানো টেনিস বলে ক্রিকেট খেলেই ক্রিকেটের হাতে খড়ি তার। তার কব্জিবলের সাথে দুর্দান্ত লাইন লেংথ, সব মিলিয়ে এক দারুন লেগস্পিনার তিনি।

ছোট বেলা থেকে পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদিকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়া রশিদ খান অনেক সময় ছাড়িয়ে গেছেন আফ্রিদিকেও। আফ্রিদির মতই ব্যাট হাতেও বোলারদের বেধড়ক পিটুনি দিতে তার জুড়ি মেলা ভার। হোক সেটা সাদা পেশাক কিংবা রঙ্গিন, দ্রুত রান তোলাই যেন তার শেষ কথা। তাইতো তার ওডিআই, টি২০ তে স্ট্রাইকরেট যথাক্রমে ১০১.২৩ এবং ১২৪.২৪। টেস্ট ক্রিকেটেও তার স্ট্রাইক রেট ৯১.২৩ যা তার বাহু বলের সামর্থ্যের প্রমান যোগায়।

তবে তার আসল পরিচয় একজন ভয়ংকর লেগস্পিনার। কি নেই তার বলে? টার্ন, বাউন্স, গুগলি, নিখুঁত লাইন লেংথ আর কি চাই? একজন বিশ্বমানের বোলার হতে? আর এতেই মাত্র ১৭ বছর বয়সেই অভিষেক হয় রশিদ খানের। ২০১৫ সালের ১৮ই অক্টোবর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। অভিষেক ম্যাচেই কিপ্টে বোলিং এ নজর কারেন এই লেগী। ১০ ওভার বল করে মাত্র ৩০ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। আর সেখানেই শুরু আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অভিষেক সিরিজে ৪ ম্যাচে ৫ উইকেট নিলেও কিপ্টে বোলিং এ নজর কেড়েছিলেন রশিদ খান।

ওডিআইতে ভালো বোলিং এর ফল হিসেবে ঐ সফরেই টি২০ অভিষেক হয় তার৷ অভিষেক সিরিজটি মোটেই ভালো হয়নি তার। অভিষেক টি২০ সিরিজে ২ উইকেট পেলেও ২ ম্যাচে রান দিয়েছেন ২০ এবং ৪৫ রান।

টেস্ট ক্রিকেটে নবাগত দল আফগানিস্তান। দল খেলেছে মোটে ৩টি ম্যাচ। ৩ ম্যাচেই দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য বোলার ছিলেন রশিদ খান। সর্বশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে ছিলেন অধিনায়ক। সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে রেকর্ড গড়েন তিনি। ক্যাপ্টেন হিসেবেও বেশ সফলই বলা চলে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুই ইনিংসে ১১ উইকেট শিকার করেন রশিদ খান।

রশিদ খানের আন্তর্জাতিক ক্যরিয়ারঃ –
টেস্টঃ
ব্যাটিং-
ম্যাচঃ ৩, ইনিংসঃ ৫, রানঃ ১০৪, বলঃ ১১৪, সর্বোচ্চঃ ৫১, গড়ঃ ২০.৮, স্ট্রাইক রেটঃ ৯১.২৩, অপরাজিতঃ ০, চারঃ ১১, ছক্কাঃ ৪, শূন্য রানঃ ০, ফিফটিঃ ১, সেঞ্চুরিঃ নেই।
বোলিং-
ম্যাচঃ ৩, ইনিংসঃ ৫, রানঃ ৩৬০ বলঃ ৭৩৪, মেডেন ওভারঃ ২৩, উইকেটঃ ২০,গড়ঃ ১৮, ইকোনমিঃ ২.৯৪, স্ট্রাইক রেটঃ ৩৬.৭ ইনিংস বেস্টঃ ৬/৪৯, ম্যাচ বেস্টঃ ১১/১০৪, ৫ উইকেটঃ ৩, ১০উইকেটঃ ১।

ওডিআইঃ
ব্যাটিং-
ম্যাচঃ ৬৭, ইনিংসঃ ৫৩, রানঃ ৯০৩, বলঃ ৮৯২, সর্বোচ্চঃ ৬০, গড়ঃ ২০.৫২, স্ট্রাইক রেটঃ ১০১.২৩, অপরাজিতঃ ৯, চারঃ ৮১, ছক্কাঃ ২৮, শূন্য রানঃ ৪। ফিফটিঃ ৪, সেঞ্চুরিঃ নেই।
বোলিং-
ম্যাচঃ ৬৭, ইনিংসঃ ৬৪, রানঃ ২৩৩৩, বলঃ ৩৩৭৮, মেডেন ওভারঃ ২৬, উইকেটঃ ১৩১,গড়ঃ ১৭.৮১, ইকোনমিঃ ৪.১৪ স্ট্রাইক রেটঃ ৮৫.৭৯, বেস্টঃ ৭/১৮, ৫ উইকেটঃ ৪, ৪ উইকেটঃ ৪।

টি২০-
ব্যাটিং-
ম্যাচঃ ৪০, ইনিংসঃ ১৭, রানঃ ১২৩, বলঃ ৯৯, সর্বোচ্চঃ ৩৩,গড়ঃ ১৩.৬৭, স্ট্রাইক রেটঃ ১২৪.২৪, অপরাজিতঃ ৮, চারঃ ৮, ছক্কাঃ ৮, শূন্য রানঃ ৩, ফিফটিঃ নেই, সেঞ্চুরিঃ নেই।
বোলিং-
ম্যাচঃ ৪০, ইনিংসঃ ৪০, রানঃ ৯১৯, বলঃ ৯১২ মেডেন ওভারঃ ১, উইকেটঃ ৭৯,গড়ঃ ১১.৬৩, ইকোনমিঃ ৬.০৫, স্ট্রাইক রেটঃ ১১.৫৪,বেস্টঃ ৫/৩, ৫ উইকেটঃ ২, ৪ উইকেটঃ ৩।

রশিদ খানের উল্লেখযোগ্য বিশ্ব রেকর্ডঃ
১/ ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম ১০০ উইকেট শিকার করেন রশিদ খান। মাত্র ৪৪ ম্যাচেই তিনি এই মাইলফলক স্পর্শ করেন।

২/ টি২০ ক্রিকেটে চার বলে চার উইকেট নেওয়া প্রথম বোলার রশিদ খান। দ্বিতীয় লাসিথ মালিঙ্গা।

৩/ টেস্ট, ওডিআই এবং টি২০ সকল ফরমেটে ৫ উইকেট শিকার করা একমাত্র বোলার রশিদ খান।

৪/ সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক এবং সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট জয়ী অধিনায়ক রশিদ খান।

[ ১৯’ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ]

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »