নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
বিরাট কোহলি – বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের একজন রোল মডেল। ক্যারিয়ারের দুর্দান্ত সময় পাড় করছেন। মাঠের ক্রিকেটে যতোটা আগ্রাসী, বাস্তবে ততোটাই বন্ধুবাৎসল। এমনটাই দেখা গিয়েছে বেশ কয়েকবার। মাঠের ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ তার কাছে শুধুই প্রতিদ্বন্দ্বী, কোন ছাড় নেই৷ আর এ-র বাইরে আড্ডার সময়ে বন্ধুবাৎসল্য স্বভাবে সবার সাথে মজা করাই যার স্বভাব।
১৯৮৮ সালের ৫ নভেম্বর প্রেম ও সরোজ কোহলি দম্পতির সন্তান বিরাট কোহলি দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা পেশায় আইনজীবি ছিলেন। মা সরোজ কোহলি একজন গৃহবধূ। তার দুই ভাইবোন। ভাই বিকাশ কোহলি, বোন ভাবনা কোহলি।
বাবার সাথেই প্রায় সময় কাটাতেন কোহলি। ছোটকাল থেকেই খেলার প্রতি তার মারাত্মক রকমের ঝোঁক ছিলো। মাত্র ৩বছর বয়সেই হাতে ব্যাট নিয়ে বাবাকে বলতেন বোলিং করার জন্য। পাড়ার ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলতেন। সবাই মুগ্ধের মতো লক্ষ্য করতো তার প্রতিটা শট। ছেলের ক্রিকেট প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য বাবা ৯বছর বয়সেই ক্রিকেট কোচিং এ ভর্তি করিয়ে দেন। বিরাটের মতে, বাবাই তার এতদূর আসার পিছনে মূল কারিগর। একাডেমিক জীবনে রাজ কুমার শর্মা ছিলেন বিরাটের ক্রিকেট গুরু৷
২০০২ সালে দিল্লীর বিভিন্ন দলের জন্য খেলেন। এবং লি উমিগ্রা ট্রফি টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হন। তৎকালীন ভারতীয় বোলার আশিস নেহরা থেকে তিনি এ পুরষ্কার গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালে বিজয় মার্চেন্ট ট্রফি তে দুই ম্যাচে গড়ে ৪৭০ রান করে সবার নজরে আসেন। পরের বছরও দুর্দান্ত পারফরমেন্সে দিল্লিকে বিজয় মার্চেন্ট ট্রফি জেতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
ধারাবাহিক দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের দরুন ২০০৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে ভারতের অনুর্ধ্ব – ১৯ দলে সুযোগ পান। সব স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মাঝ পথে হঠাৎ ২০০৬ সালে ১৮ ই ডিসেম্বর বাবা প্রেম কোহলি ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান। বাবার মৃত্যুশোক কোহলি মেনে নিতে পারেন নি। কেননা বাবাই ছিলো তার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব। আর ক্রিকেটে সাফল্যের পিছনে বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি৷ বিরাট তখন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন।
শোক কিছুটা কাটিয়ে উঠার পর আবার আরো বেশি দায়িত্বশীলভাবে খেলা শুরু করেন। ২০০৮ সালে আইসিসি অনুর্ধ্ব -১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে তিনি দলের নেতৃত্ব দেন। একই বছরে শ্রীলঙ্কা সফরে ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পান। ২০১১ সালে অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে কোহলি অধিনায়ক নিযুক্ত হন । গ্রুপ পর্যায়ে তিনি ১৮৩ রান করেন এবং ওডিআই-তে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর করেন এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারার ১৫৬ রানের দীর্ঘ রেকর্ডটি ভাঙেন।
২০১৪ সালে তিনি টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত হন। একই বছরে অস্ট্রেলিয়ার সফরে তিনি চার টেস্টে মোট ৬২২ রান সংগ্রহ করেন। ২০১৫ সালে কিছুটা ফর্মহীনতায় ভুগলেও দ্রুত ফর্মে ফিরে আসেন৷ এবং টি-২০ ক্রিকেটে দ্রুততম ১০০০ রান পূর্ণ করার গৌরব অর্জন করেন। এরপর থেকে আর ফর্মহীনতায় ভুগতে হয়নি। দুর্দান্ত সব ইনিংস খেলে দলের অপরিহার্য ব্যক্তি হিসেবে দলকে অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন কোহলি ক্রিজে আসলেই ছুটে রানের ফোয়ারা। কোহলি মানেই বিপক্ষ দলের ত্রাস। বিপক্ষ দলের আতঙ্কের প্রতীক।
২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কে ইতি টেনে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন কোহলি ও বলিউড অভিনেত্রী আনুষ্কা শর্মা।
জন্মদিনের অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো বিরাট কোহলির প্রতি।