শীঘ্রই মাঠে ফিরতে চান মোশাররফ হোসেন রুবেল

জাকির মামুন »

৯ মার্চ ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়ানডে ফরম্যাটে অভিষেক হয় বাঁহাতি অর্থোডক্স বোলার মোশাররফ হোসেন রুবেলের৷ জাতীয় দলে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার ছিলেন তিনি৷ ক্লাবভিত্তিক দল ছাড়াও ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলেন এই অভিজ্ঞ বোলার৷ গত বছরে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হন তিনি৷ ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হসপাতালে সফল অস্ত্রোপচার হয় রুবেলের৷ পুরোপুরি সুস্থ হতে ২০টি রেডিওথেরাপি ও ৬টি কেমোথেরাপি নিতে হয় তাকে৷ কিছুদিন পর পরই ছুটে যেতে হয়েছে সিঙ্গাপুরে৷ অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে। ক্রিকেটার ছাড়াও তিনি একজন ব্যাংকারও বটে ৷

নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার, ব্যাংকিং পেশা , ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিভিন্ন বিষয়, নিজের বর্তমান লক্ষ্যসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে  খোলামেলা কথা বলেছেন আমাদের প্রতিবেদক জাকির মামুনের সাথে৷ তার চুম্বক অংশটুকু হুবহু তুলে ধরা হলো৷

নিউজক্রিকেট২৪:  কেমন আছেন? হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে কিভাবে সময় পার করছেন?

মোশাররফ হোসেনঃ  আলহামদুলিল্লাহ্‌।  ভালো আছি। ফিটনেস ঠিক রাখতে কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করছি। আর পরিবার কে বিশেষ করে বাচ্চাকে সময় দিচ্ছি।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ  কিছুদিন আগে ব্রেন টিউমারের অপারেশন হয় আপনার । সবার দোয়ায় অপারেশন ও সফল হয়। এখন কোনো সমস্যা অনুভব  করছেন কিনা?

মোশাররফ হোসেনঃ  না। আল্লাহর রহমতে ভালই আছি। ডাক্তাররা যেভাবে চলতে বলেছেন, যে গাইডলাইন গুলো ফলো করতে বলছেন, সেভাবে চলছি।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ অসুস্থতার বিষয়টি আপনার মুখে শুনতে চাই। কেমন ছিলো ওই সময়ের দিনগুলো?

মোশাররফ হোসেনঃ যখন আমি কনফার্ম হই আমার ব্রেইন টিউমার তখন থেকে আমার ভিতর একটা খারাপ লাগা কাজ করতে থাকে। তবে আমি ভেঙ্গে পড়িনি। ওই সময়ের দিনগুলো  খুব বাজে ছিলো।  অনেক প্রতিকুলতা জয় করেই আমি এগিয়েছি। গতবছরের ১৯ মার্চ সিঙাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে  সফল অস্ত্রোপচার হয়৷ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমার টিউমার টা গ্রেড ৩ লেভেলে ছিলো৷ গ্রেড ৪ হলে মানুষ মারা যায়৷দেখেছেন, কিছুদিন আগে ইরফান খান মারা গেলো টিউমার সমস্যায়৷ অস্ত্রোপচারের আগে কিছুটা শংকা কাজ করেছিলো৷ তবে খোদার উপর আস্থা ছিলো৷ তাছাড়া সবাই সাহস দিয়েছেন৷ তাই মানসিক স্বস্তি টা ভালো ছিলো৷

নিউজক্রিকেট২৪ঃ এই দুঃসময়ে কাদের পাশে পেয়েছেন?

মোশাররফ হোসেনঃ  বিসিবি, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস,  কিছু ক্লাব, কিছু প্লেয়ার সহ অনেকেই আমাকে সাহায্য করেছেন। আমার চিকিৎসা বাবদ দেড় কোটি টাকার মত খরচ হয়েছে। তা আসলে আমার জন্য বহন করা কঠিন হয়ে যেতো। ধন্যবাদ জানাই যারা আমার পাশে থেকে সহায়তা করেছেন।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ  অসুস্থ  হয়ে গেলে সাধারণত  মানুষ  ভেঙে  পড়ে। কিন্তু আপনি অনেকটা নির্ভার  ছিলেন। সেক্ষেত্রে কার  ভুমিকা বেশি ছিলো?

মোশাররফ হোসেনঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে আমার স্ত্রী।  সে আমাকে মানসিক ভাবে যে সাপোর্ট  দিয়েছে, তা আমি বলে প্রকাশ করতে পারবোনা। সার্বক্ষণিক  আমার সাথে ছিলো। যখন সিঙ্গাপুরে অপারেশন হয় তখন আমার সাথে কেউ থাকার অনুমতি ছিলোনা৷ ও তারপরেও শুধু আমাকে দেখতে অদুরে হাসপাতালের ফ্লোরে পর্যন্ত ছিলো৷ হসপিটালে আনা নেওয়া সহ সকল কাজে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে। শুধু স্ত্রী হিসেবে নয় একজন বন্ধুর মত সব সময়ে সাহস জুগিয়েছে৷

নিউজক্রিকেট২৪ঃ এবার ক্রিকেট প্রসঙ্গে আসি। অসুস্থতাজনিত কারণে গত বিপিএল খেলা হয়নি। জাতীয় দলে ও এখন নিয়মিত না। ক্রিকেট নিয়ে এখন আপনার ভাবনা টা  কি?

মোশাররফ হোসেনঃ আসলে খুব একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এখন আবার নিজেকে আগের অবস্থানে নিয়ে আসতে হলে অনেক পরিশ্রম  করতে হবে। তার জন্য আমি এখন প্রস্তুত ও বটে। তবে করোনার কারণে পুরো দমে শুরু করা সম্ভব হচ্ছেনা। শীঘ্রই আবার মাঠে ফিরতে চাই।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ এখনও কি জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন?

মোশাররফ হোসেনঃ সবাই জাতীয় দলে নিয়মিত  খেলতে চায়। তবে আমার ফোকাস টা এখন ঘরোয়া  ক্রিকেটে। আমি এখানে ভালো কিছু করতে চাই। নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ থাকে এখানে। মূলকথা হলো আরও কয়েক বছর প্লেয়ার হিসেবে ক্রিকেটটা উপভোগ  করতে চাই।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ বিগত বছর গুলোতে বিশেষ করে ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ সালে  বাংলাদেশ দল যেভাবে  পারফর্ম  করেছে, সেটাকে আপনি কিভাবে মুল্যায়ন করবেন?

মোশাররফ  হোসেনঃ আসলে এই সময়টা বাংলাদেশ  ক্রিকেটের সোনালী সময় বলবো কেননা এই সময় গুলোতে বিশ্বের সেরা সেরা দলগুলোকে আমরা হারিয়েছি। দল হিসেবে বাংলাদেশ অসাধারন পারফর্ম  করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশকে যেকোন দল সমীহ করে।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ  ইতোমধ্যে লক্ষ্য  করা গেছে যে, সুযোগ পাওয়া অনেক তরুন ক্রিকেটাররা দলে থিতু হতে পারছেন না। যদি বলি আশানুরূপ ধারাবাহিক পারফর্ম   করতে পারছেনা। সেটার কারন আপনি কি  মনে করেন?

মোশাররফ হোসেনঃ  আমাদের তরুণ ক্রিকেটাররা  নিঃসন্দেহে জিনিয়াস। ভালো পারফর্ম  করার সক্ষমতা  তাদের আছে। অনেক সময় হয় কি,  একটা ম্যাচ ভালো পারফর্ম  করলে পরবর্তী ম্যাচে ফোকাস কমে যায়। আবার ধরেন, দুইটি  ম্যাচ খারাপ খেললে প্রেসারে পড়ে যায়। অনেক প্লেয়ারের জন্য সেটা সামলানো কঠিন হয়ে যায়। একটা  কথা মনে রাখতে হবে, পারফর্ম  করার ক্ষিধে থাকতে হবে। তবে তারা  দীর্ঘ  একটি  গ্যাপ  পেয়েছে। নিজেদের টুকিটাকি সমস্যা  গুলো সমাধান  করে নতুন করে শুরু  করার সুযোগ  রয়েছে।

নিউজক্রিকেট২৪:  আপনার মতে তরুণদের অনুকরণীয় কে হতে পারে কিংবা কাকে আদর্শ মেনে কাজ করা উচিৎ?

মোশাররফ  হোসেনঃ মুশফিককে নিতে পারে৷ কেনোনা মুশফিক যেভাবে ফিটনেস ও প্র্যাকটিস নিয়ে কাজ করে, সে যেকোনো তরুণ প্লেয়ারদের অনুকরণীয় হতে পারে৷তার থেকে তরুণদের অনেক কিছু শেখার আছে৷  আর মুশফিক তার ফল পাচ্ছে ও ৷ বলতে গেলে সাকিবের পর বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার ও সে৷ অনেক টা ধারাবাহিক ৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো, নিজের সাথে নিজের  চ্যালেঞ্জ নিতে হবে৷ আজকের দিনের চেয়ে আগামীদিন টা যাতে আরও ভালো হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷

নিউজক্রিকেট২৪ঃ বাংলাদেশ দল সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছেন ওয়ানডে ফরম্যাটে৷ দলনেতা হিসেবে মাশরাফি ইতি টেনেছেন , তামিমের কাঁধে এসেছে অধিনায়কত্বের গুরুভার৷ তামিমের জন্য কতটুকু চ্যালেঞ্জ হবে  মনে করেন?

মোশাররফ হোসেনঃ আসলে অধিনায়কত্বটা সব প্লেয়ারদের জন্যই চ্যালেঞ্জের বিষয়৷ তামিমের ক্ষেত্রেও তাই-ই৷ তবে দেখার বিষয়, সে কতটুকু উপভোগ করতে পারছে৷  সে যেহেতু বাংলাদেশ টিমে দীর্ঘদিন আছে, অনেকের অধিনায়কত্বে খেলেছে, সেহেতু সে টিমের অনেক কিছু  জানে, ভালো করার সুযোগ টা ও আছে তার৷ তামিমের জন্য শুভকামনা রইলো৷

নিউজক্রিকেট২৪ঃ আপনার মতে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা সফল  অধিনায়ক কে?

মোশাররফ হোসেনঃ মাশরাফি৷ তার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের শক্তিশালী দলগুলোকে হারাতে সক্ষম হয়েছে৷  সে সবার সেরাটা বের করে আনতে পেরেছে, সেজন্যই সে সফল অধিনায়ক হতে পেরেছে৷

নিউজক্রিকেট২৪ঃ জাতীয়  দলের হয়ে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছেন। আপনার  চোখে,  আপনার ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ কোনটি ছিলো ?

মোশাররফ হোসেনঃ আমি সৌভাগ্যবান  যে আমি শততম ওয়ানডে  তে বিজয়ের স্বাক্ষী হতে পেরেছি। সেই ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমি টিমের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট  নিয়েছি। এই ম্যাচ টি আমি সবগুলো ম্যাচ থেকে এগিয়ে রাখবো৷

নিউজক্রিকেট২৪ঃ  করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে খেলা মাঠে গড়াচ্ছেনা৷ ক্রিকেটাররা আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন৷ আপনার দৃষ্টিতে কোন ধরনের ক্রিকেটাররা বেশি সমস্যায় পড়তে পারেন?

মোশাররফ হোসেনঃ সবাই কে তো  আর্থিক ক্ষতি গুনতে হবে ৷ তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের প্লেয়ারদের জন্য  অনেকটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে৷ যতটুকু দেখিছি বিসিবি এগিয়ে এসেছে৷ তবে ক্লাব মালিকরা একটু সদয় হলে অনেক টা সহজ হয়ে যাবে৷

নিউজক্রিকেট২৪ঃ খেলার পাশাপাশি আপনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে(এশিয়া ব্যাংক) চাকুরি করছেন৷ খেলা আর চাকুরি দু’টি সামলাতে কেমন হিমশিম খেতে হয়?

মোশাররফ হোসেনঃ অতটা না৷ কেনোনা আমার খেলা থাকলে কিংবা ক্যাম্পেইনের সময় তারা আমাকে ছুটি দেয়৷  আমি আমার জায়গা থেকে ব্যাংকের প্রতি সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার করার চেষ্টা  করি বিধায় এই সুযোগটা তিনারা দিচ্ছেন৷ সেজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ ৷

নিউজক্রিকেট২৪ঃ অবসরে কি করতে ভালোবাসেন?

মোশাররফ হোসেনঃ পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করি৷ বই পড়ি আর বাগানে সময় দেই।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ নিউজক্রিকেট২৪  ডট কম এর পক্ষ  থেকে আপনার  জন্য রইলো  শুভকামনা।

মোশাররফ হোসেনঃ আপনাকে ও নিউজক্রিকেট২৪ ডট কম এর পাঠকদেরকেও ধন্যবাদ জানাই।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »