শোয়েব আক্তার »
বোলার বল করার সময় যদি দেখেন নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তের ব্যাটসম্যান ক্রিজের বাইরে চলে গেছেন এমন সময় যদি তিনি স্টাম্পের বেল ফেলে দেন তবে তাকে মানকাড আউট বলে। ক্রিকেটিয় আইনে মানকাড আউট কে বৈধতা দেওয়া থাকলেও অনেকেই এরকম আউট কে অখেলোয়াড় সুলভ আচরন বলে মনে করেন। তাই, কখনও মানকাড আউট হলে ক্রিকেট বিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠে যায়। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া ২০১৬ অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত্বব্য যুব বিশ্বকাপের এবারের আসরে আবার মানকাড আউটের শিকার হলেন ব্যাটসম্যান!
বিশ্বকাপের চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনালে আফগানিস্তান অনুর্ধ্ব-১৯ দলের নূর আহমদ দূর্দান্ত খেলতে থাকা পাকিস্তান অনুর্ধ্ব-১৯ দলের উদ্ভোধনী ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হোরায়রা কে ব্যক্তিগত ৬৪ রানে মাডকাড আউট করেন। তবে, এমন আউটে পাকিস্তান যুব দলের কোন ক্ষতি-ই হয় নি। ৫৩ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে তারা। হোরায়রা যখন আউট হোন জয় থেকে মাত্র ৬৩ রান দূরে ছিল, হাতে ছিল ১৩৪ বল। অন্যদিকে বল হাতে আফগান যুবাদের পক্ষে একমাত্র সফল বোলার ছিলেন এই চায়নাম্যান বোলার। বল হাতে তিনি আজ দুটি উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে ২০১৬ সালে যুব বিশ্বকাপে এমন ঘটনা ঘটেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের খুব কাছে ছিল জিম্বাবুয়ে অনুর্ধ্ব-১৯ দল। তবে, রিচার্ড এনগারভা কে কিমোপল মাডকাড আউট করলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় জিম্বাবুয়ে যুব দল। ওই ম্যাচ হারলেই বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে যেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনুর্ধ্ব-১৯ দল।
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত মানকাড আউটের ঘটনা ঘটে ২০১৯ আইপিএলে। জয়পুরে কিংস ইলিভেন পাঞ্জাব ও রাজস্থান রয়্যালসের খেলা চলছিল। ১৭১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে রাজস্থান রয়্যালস ১ উইকেটে ১০৮ রান তুলে ফেলেছিল। ৪৪ বল থেকে ৬৩ রান প্রয়োজন এমতাবস্থায় রবিচন্দ্র অশ্বিন জস বাটলার কে মানকাড আউট করলে ওই ম্যাচটি হেরে যায় রাজস্থান। তখন এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা হয়।
১৯৪৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বপ্রথম ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে মানকাড আউট দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। ভারতীয় মানকড় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার বিল ব্রাউনকে প্রথমবার এভাবে আউট করেন। একই সিরিজে ব্রাউনকে আবারও একই পদ্ধতিতে আউট করেছিলেন বলেই এই আউট কে মানকাড আউট বলে।
মানকাড আউটের প্রবণতা কমাতে পরবর্তিতে ক্রিকেটের আইনে এই আউট কে অর্ন্তভুক্ত করে। এমসিসি’র ৪২.১৫ ধারা অনুযায়ী মানকাডিং এখনো বৈধ আউট। এই আউট না থাকলে বোলার বল করার আগে ননস্ট্রাইকার যে উইকেটের মাঝপথে গিয়ে বসে থাকত!
মানকাড আউটের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা থাকলেও এই বিতর্কিত আউটটির সুবিধা নিয়েছেন কপিল দেব, গ্রেগ চ্যাপেলের মতো তারকা ক্রিকেটার’রা। তবে এর অনেক ব্যতিক্রমও আছে। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জয়ের জন্য পাকিস্তানের শেষ বলে ২ রান প্রয়োজন ছিল। হাতে ছিল মাত্র এক উইকেট। কার্টনি ওয়ালশ শেষ বলটি করতে এসে নন স্ট্রাইকার ব্যাটসম্যান সেলিম জাফর ক্রিজ ছেড়ে অনেকটা দূর এগিয়ে গেলেও ওয়ালশ তাঁকে আউট না করে সতর্ক করেছিলেন। পরে পাকিস্তান ম্যাচটি জিতে যায়।
২০০৩ সালের মুলতান টেস্টে জয়ের একেবারে কাছে গিয়েও হারতে হয় বাংলাদেশ কে। সেই টেস্টে ইন-জামাম-উল হক, রশিদ লতিফ, অশোকা ডি সিলভা’র অসাধারণ পারফম্যান্সের পরও হয়তো জিতে যেত বাংলাদেশ। মোহাম্মাদ রফিক সুযোগ পেয়েও উমর গুলকে মানকাড না করে শুধু সাবধান করে দেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে যায় এক উইকেটে! এছাড়া অনেক সময় বোলার মানকাড আউট করার পর অধিনায়ক তা ফিরিয়ে নিয়ে প্রসংশা কুঁড়িয়েছেন।