সাজিদা জেসমিন »
রূপকথার মতো শেষ হলো গতকালকের রাত। আকবর আলীর নেতৃত্বে প্রথম বারের মতো আন্তর্জাতিক শিরোপা এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। বিশ্বমঞ্চে উঁচু হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। গতকালকের ম্যাচের আকবর আলী যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিলো পুরোনো রোমাঞ্চকর কোন স্মৃতি। যেন মনে পড়ছিলো সাতানব্বইয়ের আকরাম খানকে।
সেদিন ছিলো বৃষ্টিভেজা দিন। রান তাড়া করতে গিয়ে ২০উইকেটের ভিতরে ৪টি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের তখন করুণ অবস্থা। হল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ যখন অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। লিফাব্রে-আসিম খানের বোলিং তোপে সেদিন বিধ্বস্ত হয়েছিলো বাংলাদেশের টপ অর্ডার।
দলের বিপর্যয়ের মুহূর্তে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন তৎকালীন অধিনায়ক আকরাম খান। শুরুতে নান্নুকে নিয়ে ইনিংস শুরু করলেও শেষের দিকে এজাই একপাশ আগলে রেখে খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। তার হাত ধরেই মূলত শেষ চার নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
এ-ই জয়ের ফলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের শক্ত ভিত তৈরি হয়েছিলো। সেবার এসেছিলো ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের টিকিট। সাথে ২০০০ সালের টেস্ট স্বীকৃতি।
গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকায় যেন আবার নতুন করে দেখা মিললো সেই আকরাম খানের। আকবর আলীর ইনিংসের কার্যকারীতা কতটুকু সেটি, গতকাল টিভি সেটের সামনে যারা বসে ছিলেন তারাই কেবল অনুধাবন করতে পারবেন।
আকরাম খানের মতো দলের দুঃসময়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন আকবর আলী। ঠান্ডা মাথায় নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। ব্যাট হাতে খেলেছেন ৪৩ রানের কার্যকরী ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ক্রিজ আঁকড়ে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের লক্ষ্যে।
একের পর এক উইকেট হারিয়ে যখন দলের দিশেহারা অবস্থা, তখন মনে হচ্ছিলো এবারো কি প্রেমদাসার অনুরূপ ঘটতে যাচ্ছে? প্রতিপক্ষ যে এবারো সেই ভারত। সেই একই বোলিং এট্যাক। টার্গেট ও ছিলো কম যদিওবা।
সেবার ১০৬ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। সে ম্যাচে জয়ের নায়ক হতে পারতেন মৃত্যুঞ্জয়-শামীমরা। কিন্তু শেষ হাসিটা ভারতই হাসে। ভারতের অথর্ব একাই বাংলাদেশের দুঃসময়ে শুরু করে দেন। আকাশ সিংও সেদিন ছিলেন বিধ্বংসী রূপে। ১০১ রানেই থামতে হয় বাংলাদেশকে।
সেদিনও ছিল ৫০ ওভারের ম্যাচ। আর গতকাল টার্গেট ছিলো ১৭৮। শুরুটা দারুণভাবে হলেও মাঝপথে যখন বিষ্ণুর বিষাক্ত ছোবলে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের অবস্থা বেগতিক। আগের ম্যাচে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে জয়ের নায়ক বনে যাওয়া জয়–তৌহিদ-শাহাদাত ও খেলতে পারেননি কার্যকরী ইনিংস।
তখন একপ্রকার প্রেমদাসার পুনরাবৃত্তি ঘটার শঙ্কাই জাগছিলো। তবে দমনের পুনরায় ব্যাটিংয়ে ফিরে কার্যকরী ইনিংস খেলা, সাথে অধিনায়ক আকবর আলীর ধৈর্য্যশীল ব্যাটিংয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায় বাংলাদেশ। শেষ ৩৫রানেও ছিলো অনেকটা সংশয়। হবেতো এবার?
আবার কখনোবা আকবর আলীর ধৈর্য্যশীল ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিলো আবার কি হবে সাতানব্বইয়ের পুনরাবৃত্তি? এতো ম্যাচজয়ী ইনিংস থাকতে আকরাম খানের ইনিংসের কথা মনে করার মূল কারণ কি সবাি ভাবতে পারেন।
সেই ইনিংস গুরুত্বপূর্ণ কেনোনা সে ইনিংস না খেললে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ যাত্রার জন্য অপেক্ষা করতে হতো আরো কয়েকটা বছর। সেই ম্যাচের কারণেই শক্ত ভিত তৈরি হয়েছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তাই সেই ম্যাচের আকরাম আজও বাংলাদেশ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিকে যাত্রা শুরুর অন্যতম এক কারিগর ছিলেন।
আর গতকাল আকবর আলীর খেলা ধীরেসুস্থে ৪৩ রানের কার্যকরী ইনিংস বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে বিশ্বসেরার মুকুট। যেন সাতানব্বইয়েই সেই আকরাম খান। একজন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভিত গড়ে দিয়েছেন। আরেকজনকে দেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এনে দিয়েছেন বিশ্বসেরার মুকুট।