নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ নামটি সম্পর্কে অনেকেই অবগত আছেন। বিশ্বের এমন কোন খেলা নেই, যেখানে আপনি এই শব্দটা শুনতে পাবেন না। ফুটবলের কথাই ধরুন না, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা খেলা মানেই যেনো আলাদা এক উত্তেজনা। ফুটবল বিশ্বে এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর খেলা মানেই দুই দলের দর্শকদের মাঝে এক অজানা বিস্ফোরণ। এর রেশ শুধু ভক্তদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ ব্যাপারটি দুই দলের খেলোয়াড়দের মাঝেও ভর করে এবং তা কঠোর ভাবে। এটা ফুটবলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ছোট্ট একটি নমুনা মাত্র। আপনি যদি লা লিগায় বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ অথবা ইংলিশ লিগে লিভারপুল-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর ম্যাচগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করেন, দেখতে পাবেন তাদের প্রত্যেকটা খেলায় দর্শক থেকে শুরু করে দলগুলোর খেলোয়াড়দের মাঝে কতোটুকু উন্মাদনার জন্ম হয়। আরো অনেক অনেক লিগ আছে সেখানেও এর ব্যাতিক্রম নয়।
এবার আসি ক্রিকেটে। উপমহাদেশের বাইরে নজর দিলে আপনি দেখতে পাবেন, অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের এক একটি ম্যাচ ঘিরে ভক্তদের মাঝে উত্তেজনার বারুদ খসে পড়া। ভক্তদের এমন মনোভাব যুগ যুগ ধরেই অবিরাম গতিতে বহমান। প্রতি বছর অন্তর এ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে অতি মর্যাদার একটি আসর আয়োজিত হয়। যা মর্যাদার ‘অ্যাশেজ’ নামে অভিহিত। অ্যাশেজ সিরিজকে ঘিরে আয়োজন আপনাকে দফায় দফায় চমৎকৃত করবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এক একটি ম্যাচ নিজেদের করে নিতে উভয় দলের খেলোয়াড়েরাই দেয় মরণকামড়। এতে মূল মন্ত্র হিসেবে কাজ করে সেই ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ নামটি।
অনেক হয়েছে, এবার ফেরা যাক মূল আলোচনায়। ক্রিকেটবিশ্বের ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ নামটি আসলে অকপটেই একজন ক্রিকেট প্রেমীর মাথায় ভারত-পাকিস্তানের নাম ঘুরপাক খেতে থাকবে। এ দু দলের ম্যাচকে ঘিরে চরম উত্তেজনা দেখা যেতো ভক্তদের মাঝে। দু দেশের মাঝে রাজনৈতিক বিভেদ থাকায় উত্তেজনাটা যেনো ভিন্ন মাত্র যোগ করতো। তবে বেশ কয়েকবছর ধরেই যেনো পাক-ভারত ম্যাচের জৌলুশ হারিয়ে গেছে। ভক্ত-সমর্থকদের মাঝে যেনো পূর্বের ন্যায় হুলুস্থুল কান্ড আর দেখা যায় না। তবে বাংলাদেশের কারণেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উন্মাদনায় ভাটা পড়েছে? অথবা বিলীন হয়েছে পূর্বের সেই উত্তেজনা? প্রশ্ন আসতেই পারে!
২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে শুরু বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ দলের পরিচিতি ঘটে পুরো ক্রিকেট বিশ্বে। সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাকে কে নিয়ে মাশরাফির অধিনায়কত্বে ভর করে ক্রিকেটবিশ্বে নতুন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভাব ঘটে বাংলাদেশের। বর্তমান সময়ে প্রতিপক্ষের জালে মরণ ফাঁদ পেতে এক একটি জয় ছিনিয়ে নেয় হরহামেশাই। নিজেদের দিনে যেকোন দলকে বিন্দুমাত্রও ছেড়ে কথা বলে না টাইগাররা। টাইগারদের শক্তি-সামর্থ্যকে প্রত্যেকটি দলই এখন সমীহ করে। বাংলাদেশকে হারানো যে এখন খুব একটা সহজ কাজ নয়, তা প্রতিপক্ষ দলগুলো ভালো ভাবেই জানে।
ভারত ও বাংলাদেশ এশিয়ার দুই পরাশক্তি। বিগত ৩-৪ বছর ধরেই এ দুই দলের ম্যাচ মানে যেনো ভক্তদের মাঝে উত্তেজনার আলাদা এক মাত্রা যোগ করা। প্রত্যেকটা ম্যাচই টানটান উত্তেজনায় ঘেরা থাকে। আর ম্যাচ গুলোর কেন্দ্র বিন্দুতে থাকে ভক্ত-সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে গ্যালারি, সব জায়গাতেই যেনো চলে এ দুই দলের ভক্তদের কথার লড়াই। আর তাইতো পাকিস্তানকে সরিয়ে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচেই দর্শকরা খুঁজে নেন তাদের জৌলুশপূর্ণ উন্মাদনা।
ক্রিকেটপ্রেমীদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে ভারত অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সফরে রয়েছে ৩টি টি-টোয়েন্টি ও ২টি টেস্ট। আজই (৩ নভেম্বর) এ সিরিজের সূচনা হবে। বাংলাদেশ সময় ৭ টা ৩০ মিনিটে ১ম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে সফরটি। যা অনুষ্ঠিত হবে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে।
সিরিজটি নিয়ে দুই দেশের দর্শকদের মাঝে উন্মাদনার কমতি নেই। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়ে গেছে কথার লড়াই। যা এই সিরিজটিকে দিবে ভিন্ন এক মাত্রা। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই এ সিরিজকে ঘিরে পুরোদমে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার স্পোর্টস।
নিষেধাজ্ঞার কারণে সাকিব ও পারিবারিক কারণে তামিম ছুটি নেওয়ায় এ সিরিজে পূর্ণ শক্তির দল পাচ্ছে না বাংলাদেশ। তবে এতে দলের পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন স্কোয়াডে থাকা সদস্যরা। তাদের বিশ্বাস দলগতভাবে ভালো পারফর্ম করতে পারলে ম্যাচ জেতা অসম্ভব নয়। তাইতো ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জিততে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা।
দুই দলের টি-টোয়েন্টি পরিসংখানে ভারতের জয়জয়কার। পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে যোজন যোজন পিছিয়ে টাইগাররা। এ পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত ফরমেটে ৮ বার মুখোমুখি হয় ভারত-বাংলাদেশ। ৮ বারের দেখায় শতভাগ জয় ভারতের। বিপরীতে শতভাগ হারের লজ্জায় আটকে বাংলাদেশ।
তবে পরিসংখ্যান না ঘেটে বাংলাদেশ দলকে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবেই নিচ্ছে ভারতীয়রা। কেননা বাংলাদেশ নিজেদের দিনে ঠিক কতোটা শক্তিশালী, তা বেশ ভালোভাবেই জানা আছে জাদেজা-রোহিতদের। সুতরাং বাংলাদেশকে হালকা ভাবে নিতে নারাজ টিম ইন্ডিয়া।
‘ভারত বধটা এবারই হলে, মন্দ হয় না’
পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে ১ম জয় তুলে নিক বাংলাদেশ, প্রত্যাশা বাংলাদেশী সমর্থকদের। ১ম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস বদলে দিবে বাংলাদেশ, এমনটাই আশা বাংলাদেশী ভক্তদের। বিশ্বাস আছে আমাদের দামাল ছেলেদের প্রতি। এই বিশ্বাসের প্রতিদান তারা দিবেই দিবে। ভারতের মাটিতে তাদেরকে বধ করে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিবে টিম টাইগার্স, এমনটাই কামনা ১৬ কোটি মানুষের।
লড়ে যাও তোমরা মাঠে, তোমাদের সাথে আছে ১৬ কোটি মানুষ। যারা তোমাদেরকে নিঃস্বার্থভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে প্রত্যেকটি ক্ষণ। শুভকামনা রইলো টিম টাইগার্স।