https://scontent.fdac4-1.fna.fbcdn.net/v/t1.0-9/36386236_2027432020601594_1928619179817041920_n.jpg?_nc_cat=104&_nc_eui2=AeFY40879vpUlXD3TvLuwunYiYPt9keMWugjnmsYPL9A2_cQ-azY1GmWWQy36LFNFzNLAU2kdDYB9vV9Qwdjt7cfxuFbw0DGkcoiJ24B4pOm6Q&_nc_ht=scontent.fdac4-1.fna&oh=926e9b4229d9f6e3ffd66fe5510e3767&oe=5D672D33 »
একটি দলের সাফল্যের ব্যাপারটা অনেকটাই নির্ভর করে ওপেনারদের উপর। বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার বিশ্বকাপে হতাশ করেছেন। সেই হতাশার বলয় থেকে বের হতে পারেন নি শ্রীলংকা সিরিজেও। ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও এই ওপেনিং জুটির সর্বোচ্চ স্কোর ২৬। প্রথম ওয়ানডেতে উদ্বোধনী জুটিতে আসে মাত্র ১১ রান। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৬। আর তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচের চেয়েও কম। মূলত এর প্রভাব পড়েছে পুরো ইনিংসে। চাপের মুখে ব্যাট করে নামা ব্যাটসম্যানরা প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করেন প্রথম ১০ ওভারেই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৬০ রান। নিঃসন্দেহে একটা ভালো শুরু। ভালো একটা শুরুর পরে দলের হাল ধরতে অসুবিধা হয় নি সাকিব-মুশফিকের। তবে দুঃখের ব্যাপার হলো পরের ম্যাচগুলোতে টিম টাইগার্সের ওপেনিং জুটির রান এর চেয়ে আর বাড়েনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই জুটিতে ৪৫ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫২ রানই মোটামুটি ভালো একটা শুরু বলা চলে। এছাড়া আর কোন ম্যাচে এই মোটামুটি ভালো শুরুও এনে দিতে পারেননি ওপেনাররা। সপ্তম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ওপেনিংয়ে এসেছিলো পরিবর্তন। কম্বিনেশনের কারণেই এ ম্যাচে সৌম্যের জায়গায় ওপেন করতে নামেন লিটন দাস। এ জুটিও আশার আলো ফুটাতে পারে নি। মাত্র ২৩ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি।
বিশ্বকাপ থেকে শ্রীলংকা সফর পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচেই দলের হয়ে ওপেন করা তামিমের রান ১০ ম্যাচে ২৫৪ রান। যেখানে ফিফটি মাত্র একটি। সর্বোচ্চ ৬২ রান। ওপর ওপেনার সৌম্য সরকার ১০ ম্যাচের নয়টিতে ওপেন করেছেন। আর তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১৮৯ রান। তার বেলায়ও ফিফটি একটি। সর্বোচ্চ ৬৯।
বিশ্বকাপ পূর্ববর্তী আয়ারল্যান্ডে ট্রাইনেশন সিরিজের শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ জানান দিচ্ছিল এবার ভালো কিছুই হতে যাচ্ছে। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন তামিম-সৌম্যরাই। টানা তিন ম্যাচে তিনটি ফিফটি করা সৌম্য যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে। তামিমের ওপেনিং সঙ্গী এক হবেন এ নিয়ে হচ্ছিল আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু ট্রাইনেশনে সৌম্য নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই নিজের জায়গাটা পোক্ত করেন। অন্যদিকে ওপর ওপেনার লিটন দাস এই বিশ্বকাপে মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে খারাপ করেন নি। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী পার্টনারশিপে লিটনের ব্যাট থেকে এসেছিলো অপরাজিত ৯৪ রান। তামিম সৌম্যের চেয়ে নিঃসন্দেহে লিটন বেমানান এক পজিশনে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন।
বিশ্বকাপের মঞ্চটা তামিমের জন্য নতুন না, বেশ পুরনো। ২০০৭ বিশ্বকাপে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে জহির খানকে মাথার উপর দিয়ে মারা ছক্কাটা এখনো চোখে ভাসে। ২০১১ বিশ্বকাপেও তামিম খুব একটা খারাপ করেন নি। কিন্তু ১৫ বিশ্বকাপের সময় তামিম দলের একজন সিনিয়র প্লেয়ার হিসেবে কিছুই করতে পারেন নি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রানের একটি ইনিংস ছাড়া বলার মত কিছুই নেই। অনেকেই বলেছিলেন ফুরিয়ে গেছেন ড্যাশিং এই ওপেনার। কিন্তু সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে এর পরের তিনটা বছর তামিমের কেটেছে একদম স্বপ্নের মত। এই তিন বছরে টক্কর দিয়েছেন কোহলি, রোহিত, রুট, ডি কক, উইলিয়ামসনের মত ব্যাটসম্যানদের সাথে। আর এজন্যই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে তার উপর প্রত্যাশার চাপটা ছিলো একটু বেশি। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে ব্যর্থ বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা এই ওপেনার।
সৌম্যের অভিষেক হয় ২০১৪ সালের শেষের দিকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচ খেলার পরেই ১৫ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া ক্রিকেট ভক্তদের অবাক করেছিলো। কিন্তু সৌম্য যত দিন পেরিয়েছে নিজেকে প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান হিসেবে তুলে ধরেছেন। শুরুটা তিন নম্বরে হলেও পরে একজন পরিপূর্ণ ওপেনার হিসেবে বাংলাদেশ দলে জায়গা করে নেন। ১৫ বিশ্বকাপের পরে পাকিস্তান, ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সৌম্য ছিলেন দুর্বার আর দুর্দান্ত। তার ব্যাটিং ধারাবাহিকতা তাকে তুলেছিলো অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু সময় যত সামনে আগাতে থাকে সৌম্য নিজেকে ততোই হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন। গত দুই বছর ধরে রেখেছেন বাজে ফর্মের ধারাবাহিকতা। দল থেকেও ছিটকে গেছেন অনেকবার। কিন্তু বর্তমানে তামিমের যোগ্য উত্তরসূরি না থাকায় তার উপরই বারবার আস্থা রেখেছে বোর্ড। অনেকেই মনে করেছিলেন এই বিশ্বকাপের আগে সৌম্য আবারো তার চিরাচরিত রূপে জ্বলে উঠবেন। কিন্তু না, ভালো শুরুর পরেও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। শ্রীলংকা বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ওপেনিং নামলেও হয়েছেন ব্যর্থ। শেষ ম্যাচে তিনে ব্যাট করতে নেমে দলের বিপর্যয়ে এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে শুরু করেন। কিন্তু এবারও ইনিংস বড় করার আভাস দিয়ে শেষ পর্যন্ত ৬৯ রানে আউট হয়েছেন।
অনেকেই মনে করেন ২০১৫ সাল থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট বদলে যেতে শুরু করে। একটা সময় সফলতাকে নিয়মে পরিণত করে টিম টাইগার্স। আর এমন সফলতার বেশিরভাগ গল্পেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকার। কিন্তু বর্তমান এই দুই ওপেনার নিজেদের নামের প্রতি যেমন সুবিচার করতে পারছেন না তেমনি তাদের পারফরম্যান্স দলের সাথে সত্যি বেমানান। কারণটাও পরিষ্কার। এরাই রূপকথার গল্প লিখতে শুরু করেছিলেন যেখানে সেখানে তাদের এমন ব্যর্থতা মেনে নেওয়া যায় না। দশটা ম্যাচ খেলে একটা ফিফটি করা পারফরম্যান্স সেই পুরনো ২০০৫-৬ এর বাংলাদেশের সময়ে ঠিক ছিলো কিন্তু এখনের বাংলাদেশের সাথে একদমই যায় না। বাংলাদেশের ওপেনাররা ব্যর্থতার এই গোলক ধাঁধা থেকে কত দ্রুত বের হতে পারেন সেটাই মূল প্রশ্ন। কেননা তাদের হাত ধরেই যে সামনে এগিয়ে যাবে এদেশের ক্রিকেটীয় রূপকথা।
-দুর্জয় দাস গুপ্ত