নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
বিশ্ব ক্রিকেটে যতগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট আছে তার মধ্যে বিপিএল একটি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) জনপ্রিয়তার শীর্ষে হলেও আমাদের দেশের বিপিএলও কম যায় না। শুরুর কয়েক বছর অনেকটা মান্দা গেলেও এখন প্রতিবছর বিপিএল মাতাতে আসছেন বড় বড় তারকা ক্রিকেটাররা। আর এজন্য বাড়ছে এর জনপ্রিয়তাও।
বিপিএলকে ঘিরে দ্বন্দ্ব নতুন নয়। প্রতি বছরই বিপিএলকে ঘিরে সৃষ্টি হয় নতুন নতুন দ্বন্দ্বের। কখনো ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোর সাথে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের দ্বন্দ্ব আবার কখনো বিসিবির সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দ্বন্দ্ব। তবে এবারের দ্বন্দ্ব আগের সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজির কেউ কেউ এবার অংশগ্রহণ না করার হুমকিও দিয়েছেন। কিন্তু এর পেছনে যৌক্তিক অনেক কারণও আছে তাদের। প্রতি বছর বিপিএলেই নিয়মের পরিবর্তন হয়। আর এটা নতুন নয়। তারপর ক্রিকেটারদের সাথে চুক্তির ক্ষেত্রে নেই কোন সঠিক নীতি। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দেওয়া হয় না লভ্যাংশ। এবারের আসরকে ঘিরে এমন সব অভিযোগই একসাথে ওঠে এসেছে।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল আলাদাভাবে বসেছে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ফ্র্যাঞ্চাইজিই উভয় পক্ষের সম্মতিতে সন্তোষ জনক কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে এমন কিছু জানাতে ব্যর্থ। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সত্ত্বাধিকারী নাফিসা কামাল সংবাদিকদের জানিয়েছেন, “আমরা আগের নিয়মেই থাকতে চাই। কিন্তু বারবার নতুন নতুন নিয়ম আমাদেরকে বিভ্রান্ত করে।
” বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সাথে চুক্তি শেষ। নতুন করে চুক্তি করতে হবে সবাইকে। কিন্তু চুক্তির আগে বিসিবি চাইছে নিয়মে কিছু পরিবর্তন আনতে। আর এখানেই দ্বিমত পোষণ করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার কথাই যদি ধরা যায় তবে তারা চায় না নিয়মে কোন পরিবর্তন আসুক। তাদের এমন কথায় আছে যুক্তি। বিপিএলের গত আসরকে বলা হয়েছে এখন পর্যন্ত বিপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে সফল আসর। তবে এমন সফল একটি আসরের পরে কেন আবার নিয়মে পরিবর্তন আসবে? অথচ বোর্ড সভাপতি নাজমুল ইসলাম পাপন দাবি করছেন বিপিএলে কোন নিয়ম পরিবর্তন হয়নি, হবেও না। তাহলে কেনই বা এমন দ্বন্দ্ব চলছে বোর্ড আর ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মধ্যে।
আমাদের পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকালে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের মন খারাপ হতেই পারে। কেননা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ আইপিএলে লভ্যাংশের ৮০ ভাগই পায় ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। কিন্তু বিপিএলে এমন নিয়ম নেই। বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা বঞ্চিত হোন লভ্যাংশ থেকে। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের কেউ কেউ বলছেন, “রেভিনিউ শেয়ারিং মানে সব টাকা আমাদের দিতে হবে এমন না। পারশিয়ালি গ্রাউন্ডস রাইটস বা টিকেট রাইটসে আমাদের অংশীদার করা হোক।” কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের নাফিসা কামালের মতে বিপিএলের সবচেয়ে পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়েও তার কাছে বিপিএল পুরোপুরি লস প্রজেক্ট।
এমন দ্বন্দ্বে বোর্ডের সাথে চুক্তি নবায়ন হয়নি এখনো। কিন্তু বেশ কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি ইতিমধ্যেই প্লেয়ারদের সাথে চুক্তির কাজ সেরে ফেলছে। যেমন, রংপুর রাইডার্স সাকিব আল হাসানের সাথে যে চুক্তি করেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল এমন চুক্তিকে অবৈধ দাবি করেছে। তাদের মতে বোর্ডের সাথে চুক্তি নবায়ন হওয়ার আগে প্লেয়ারদের সাথে হওয়া সকল চুক্তি অবৈধ। এটা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি দ্বন্দ্বের। রংপুর রাইডার্সও এই কথার উপর ভিত্তি করে বিপিএল ছাড়ার হুমকি দিয়েছে। সেই হিসেবে তামিম ইকবালের সাথে হওয়া খুলনা টাইটান্সের চুক্তিটাও অবৈধ। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজিটি বলছে পুরো কাঠামো হুট করে বদলে ফেলার প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করে না।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট বিপিএলকে বলা হয় দেশীয় ক্রিকেটার তৈরীর কারখানা। কিন্তু অনেকগুলো আসর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একটি সঠিক অবকাঠামোর মধ্যে আসতে পারে নি কেউই। আর এই ব্যর্থতা যেমন বোর্ডের তেমনি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলেরও। এমনভাবে যদি একের পর এক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত বিপিএল মাঠে গড়াবে কি না সেটাই বড় প্রশ্ন।