নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৪ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার উপলক্ষ জয়ে রাঙাল পাকিস্তান। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বুধবার বাবরের দল জিতল ৫ উইকেটে।
বিফলে গেল শেই হোপের ১২৭ রানের দারুণ ইনিংস। এই ওপেনারের সেঞ্চুরি ও শামার ব্রুকসের ফিফটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেট হারিয়ে করে ৩০৫ রান। পাকিস্তান সেটি পেরিয়ে যায় ৪ বল বাকি থাকতে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এই প্রথম তিনশ রান তাড়া করে জিতল পাকিস্তান। ২০০৮ সালে আবু ধাবিতে ২৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিল আগের রেকর্ড।
এই সংস্করণে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরিতে ১০৭ বলে ৯ চারে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন বাবর। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন তিনি। তবে, মাত্র ২৩ বলে ৪ ছক্কা ও একটি চারে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস খেলে জয় নিশ্চিত করা খুশদিলের হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
জয়ে অবদান আছে ইমাম উল হক ও মোহাম্মদ রিজওয়ানেরও। ওপেনার ইমাম ৭১ বলে করেন ৬৫। ৬১ বলে ৫৯ রান করেন কিপার-ব্যাটসম্যান রিজওয়ান।
এই মাঠে সবশেষ কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছিল ২০০৮ সালের এপ্রিলে, সেটিও ছিল ওয়ানডেতে; পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল বাংলাদেশ।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা ভালো ছিল না। নেদারল্যান্ডস সফরে সবশেষ ওয়ানডেতে প্রথমবার ওপেনিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি করা কাইল মেয়ার্স এবার ফেরেন ৮ বলে ৩ রান করে। আলগা শটে বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ফিরতি ক্যাচ দেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
শুরুর ধাক্কা সামলে হোপ ও ব্রুকসের দারুণ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্রুকস ফিফটি করেন ৬৩ বলে। পঞ্চাশ ছুঁতে হোপের লাগে ৬৮ বল।
১৫৪ রানের বড় জুটি ভাঙে ব্রুকসের বিদায়ে, মোহাম্মদ নওয়াজের বলে শাদাব খানের এক হাতে নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচে। নেদারল্যান্ডসে সবশেষ ম্যাচে অপরাজিত সেঞ্চুরি করা ব্রুকস এবার ৮৩ বলে ৭ চারে খেলেন ৭০ রানের ইনিংস।
সাদা বলে স্থায়ীভাবে নেতৃত্ব পাওয়ার পর নিকোলাস পুরানের প্রথম সিরিজটা ব্যাট হাতে কাটে ভীষণ বাজে। নেদারল্যান্ডসে তিন ম্যাচে তিনি করতে পারেন কেবল ২৪ রান। এবার ৩ ছক্কায় ১৬ বলে ২১ রান করে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন তিনি।
হাসান আলিকে কাভার ড্রাইভে চার মেরে একসঙ্গে দুটি মাইলফলক স্পর্শ করেন হোপ। ওয়ানডেতে দ্বাদশ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি ১১৮ বলে, সঙ্গে চার হাজার রান। ৮৮ ইনিংসে এলো তার চার হাজার, এই সংস্করণে যা যৌথভাবে তৃতীয় দ্রুততম।
ছাড়ায় ক্যারিবিয়ানদের সংগ্রহ।
পাকিস্তানের হয়ে রউফ সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিলেও রান দেন ৭৭। ৫৫ রান দিয়ে আফ্রিদির প্রাপ্তি ২টি।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় পাকিস্তানের শুরুটা ভালো হয়নি। সপ্তম ওভারে জেডেন সিলসের বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ফখর জামান (১১)। এরপর দলকে এগিয়ে নেন গত মার্চ-এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রানের বন্যা বইয়ে দেওয়া ইমাম ও বাবর।
২-১ ব্যবধানে জেতা ওই সিরিজে দুই জনের ব্যাট থেকেই এসেছিল দুটি করে সেঞ্চুরি ও একটি করে ফিফটি। ইমাম এবার আরেকটি ফিফটি তুলে নেন ৫৬ বলে। টানা তিন ম্যাচে তাদের জুটির রান স্পর্শ করে শতরান। এরপরই আকিল হোসেনকে রিভার্স সুইপ করে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ইমাম। ৭১ বলে ৬ চারে গড়া তার ৬৫ রানের ইনিংস।
এই সংস্করণে ইমাম ও বাবরের সবশেষ চার জুটির রান যথাক্রমে ৯৬, ১১১, ১৯০* ও এবার ১০৩।
ইমামের বিদায়ের পর বাবর ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৯ বলে। পাকিস্তানের আস্কিং রেট যদিও বাড়তে থাকে। শেষ ২০ ওভারে তাদের দরকার ছিল ১৪৭ রান।
রিজওয়ানকে সঙ্গী করে এক-দুই করে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন বাবর। মাঝে ৫৪ বলে আসেনি কোনো বাউন্ডারি। শেষ ১০ ওভারে স্বাগতিকদের প্রয়োজন পড়ে ৮৬ রান।
হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়রকে বাউন্ডারিতে ১০৩ বলে ১৭তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূরণের পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবে দ্রুততম হাজার রানের নতুন রেকর্ড গড়েন বাবর। সঙ্গে ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন দুই দফায়। ২০১৬ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই তিনি করেছিলেন সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক।
পরের ওভারেই বাবর বিদায় নেন মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে। ভাঙে ১০৮ রানের জুটি। একটু পর ফিরে যান রিজওয়ানও। সমীকরণ হয়ে যায় কঠিন।
শেষ ২৪ বলে দরকার যখন ৪৪ রান, ৪৭তম ওভারে রোমারিও শেফার্ডকে টানা তিনটি ছক্কা হাঁকান খুশদিল। ওভারে আসে ২০ রান।
পরের ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে শাদাব খানকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচে রাখেন আলজারি জোসেফ। তখন পাকিস্তানের ২ ওভারে চাই ২১।
৪৯তম ওভারে আবার ঝড় বয়ে যায় শেফার্ডের ওপর দিয়ে। এবার তাকে একটি করে চার-ছক্কা মারেন খুশদিল, আসে ১৫ রান। আর শেষ ওভারে ৬ রানের প্রয়োজনে সিলসের দ্বিতীয় বল ছক্কায় উড়িয়ে জয় নিশ্চিত করেন নওয়াজ।