নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পেস অ্যাটাক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ম্যাশ, ফিজ, রুবেল, শফিউলরা পারছেন না প্রত্যাশা পূরণ করতে, পারছেন না নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে। অনেকেই বলছেন পেস বোলিংটা এখন মাঝারি মানের হয়ে গেছে। এইতো বছর চারেক আগেও ফিজ, রুবেল, তাসকিনরা বোলিংয়ে রীতিমত কাঁপন ধরিয়েছেন। কিন্তু এখন তারা ব্যর্থ। কথা প্রসঙ্গেই উঠে আসে অতীতের বাংলাদেশের পেস অ্যাটাকের কথা। তাপস, মাশরাফী, নাজুমলরাই ছিলেন তখনকার বাংলাদেশের ভরসা। তাদের খেলতেই পরাস্ত হয়েছেন হেইডেন, পন্টিং, ক্লার্ক, শচীন কিংবা দ্রাবিড়ের মত কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানেরা। কিন্তু বিশেষ ভাবে একজনকে স্মরণ করতেই হবে যিনি তার ছোট ক্রিকেট জীবনেও বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিয়েছেন। নাজমুল হোসেন ছিলেন এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের দুর্দিনের কান্ডারী। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এখনো পাঁচজন সেরা পেসারের একজন তিনি। যদিওবা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা বেশ বড় নয় তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, যতদিনই দলকে সার্ভিস দিয়েছেন একদম উজাড় করে দিয়েছেন, পারফর্ম করেছেন। ইনজুরি সমস্যা, আর দল থেকে হুট করে বাদ পরে না গেলে বাংলাদেশকে আরো অনেক কিছুই হয়তো দিতে পারতেন। অনেকটা অগোচরে থাকা বাংলাদেশের সাবেক এই পেসার এবার মুখোমুখি হয়েছেন নিউজ ক্রিকেট ২৪ এর।
নিউজ ক্রিকেট ২৪: কেমন আছেন নাজমুল ভাই? কি করছেন এখন?
নাজমুল হোসেন : ভালো আছি। আমি ক্রিকেটের সাথেই জড়িয়ে আছি এখনো। উত্তরাতে আমার একটা একাডেমী আছে। আর আরো একটা একাডেমীর পরিকল্পনা আছে।
নিউজ ক্রিকেট ২৪: হুট করে এভাবে অগোচরে চলে যাবার কারণটা আসলে কি?
নাজমুল হোসেন: হুট করে না। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলে আমার অভিষেক হয়েছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত দলে ছিলাম কিংবা আসা যাওয়ার মধ্যে ছিলাম। তারপর আর ডাক আসে নি। কিন্তু আমার ক্যারিয়ারটা ছোট হলেও প্রাপ্তি অনেক বেশি। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়, প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়, প্রথম শ্রীলংকাকে হারানো, ভারতকে প্রথমবার হারানো ছাড়াও বাংলাদেশের বড় বড় ইভেন্টে দলের সাথে ছিলাম। পরে একটা সময় মনে হয়েছে নিজেকে এবার গুটিয়ে নেওয়া উচিত।
নিউজ ক্রিকেট ২৪: জাতীয় দলের সেই দিনগুলো মিস করেন না?
নাজমুল হোসেন: অবশ্যই মিস করি। প্রত্যেকটা প্লেয়ারকে জাতীয় দলে আসতে হয় পারফর্ম করে। তারপর ন্যাশনাল টিমে এসে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা এটা বড় ব্যাপার। ২০-২৫ বছরের একটি পুরনো অভ্যাস চাইলেই মুছে ফেলা সম্ভব না। আগে প্রতিটা সকাল শুরু হতো ব্যস্ততায়। আগের দিন রাতে ব্যাগ গুছাতে হতো, সবকিছু রেডি করতে হতো। আর এখন চিন্তা করি কাল কোচিংয়ে কি করাবো, কি বলবো এসবের শিডিউল তৈরি করি।
নিউজ ক্রিকেট ২৪: আপনার ক্রিকেট জীবনের এমন কোন স্মরণীয় মুহূর্ত যেটা এখনো চোখে ভাসে?
নাজমুল হোসেন: আমার ক্যারিয়ারের স্মরণীয় মুহূর্ত যদি বলতে হয় তবে বলবো সর্বপ্রথম দেশের মাটিতে ভারতকে হারানোর ম্যাচটা আর একইসাথে কার্ডিফে প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ম্যাচটা। আমি মনে করি এই দুটি জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে উন্নয়নের একটি গ্রাফ তৈরি করে দিয়েছে।
নিউজ ক্রিকেট ২৪: বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে কাজ করতে চান যেকোনো ভাবে?
নাজমুল হোসেন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে তো বিদায় জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন আমার ইচ্ছে আমার হাত ধরে, আমার প্রচেষ্টায় যদি কোন প্লেয়ার তৈরি করতে পারি যে বাংলাদেশকে সার্ভিস দিবে। যেমন, রাজিন ভাইও (রাজিন সালেহ) ক্রিকেট কোচিংয়ের সাথে যুক্ত। আমরা যারা ন্যাশনাল টিমে খেলেছি সাবেক ক্রিকেটাররা তারা যদি কোচিংয়ে আসি তাহলে অবশ্যই এটা তরুনদের জন্য ভালো, ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য ভালো, দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কোচিংয়ের মান নিয়ে তখন আর প্রশ্ন উঠবে না।
নিউজ ক্রিকেট ২৪: দেশের ক্রিকেটে এখনো আপনার অনেক ভক্ত। সেই ভক্তদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতে চান নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের মাধ্যমে।
নাজমুল হোসেন: আমার সব ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলবো আপনাদের দোয়ায় ভালো একটি ক্যারিয়ার শেষে এখন ক্রিকেট কোচিংয়ের সাথে যুক্ত হয়ে গেছি। সবার দোয়ায় আজ আমি নাজমুল হয়েছি, আমার মত যেন আরো অনেক ক্রিকেটার উঠে আসে আমার এলাকা থেকে, সিলেট থেকে এটাই চাওয়া। একটা সময় জাতীয় দলে সেরা একাদশে এগার জনের মধ্যে আমরা ছয়জনই ছিলাম সিলেটের। অর্থাৎ এগার জনের ছয়জন শুধু সিলেটের আর বাকি পাঁচজন সারা বাংলাদেশের। এখন যেহেতু আমি ক্রিকেট কোচিংয়ের সাথে যুক্ত আছি দেশের ক্রিকেটের সাথে সংশ্লিষ্ট এমন কেউ যদি মনে করেন আমার সাহায্য প্রয়োজন তবে আমি অবশ্যই সাহায্য করতে চাই। আর ভক্তদের উদ্দেশ্যে আবারো বলছি আপনারা দোয়া করবেন আমার কোচিং ক্যারিয়ারটায়ও যেন সাফল্য আসে।
উইকেট পেলেই শূন্যে লাফ দিয়ে ভেসে উঠা, যেন মনে হতো মাঠের ভেতরে একটা প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে ছন্দে ছন্দে! হুম, এটাই নাজমুল হোসেন। বোলিং বলেন আর ফিল্ডিং সব জায়গায় নিজের শতভাগ দিতেন। মিডিয়াম এই পেসার মিতব্যয়ী বোলিং আর ব্রেকথ্রো এনে দিতে পারতেন প্রয়োজনে। তখনকার বাংলাদেশ কম রানের পুঁজি নিয়েও লড়াই করার স্বপ্ন দেখতো তার কল্যাণে। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ভারতের বিপক্ষে সাদা পোষাকের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। পুরো ক্যারিয়ারে মাত্র দুটি টেস্ট খেলা নাজমুল উইকেট নিয়েছেন ৫টি। এক দিনের ক্রিকেটে ছিলেন বেশ সফল। ৩৯ ম্যাচে নিয়েছেন ৪৪ উইকেট। সেই সময়ের হিসেবে অবশ্যই অনেক ভালো। চারটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পেয়ে উইকেট নিয়েছেন একটি। ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ারে ৫১ ম্যাচে আছে ৯৩ উইকেট। আর ‘লিস্ট এ’ ক্যারিয়ারে ৬৯ ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ৭১।
কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে অস্ট্রেলিয়া বধের সেই ম্যাচে উইকেটে থিতু হতে থাকা ম্যাথু হেইডেনকে সাজঘরে পাঠান নাজমুল হোসেন। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে শ্রীলংকা বধের দিনেও নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ একটি উইকেট। ভারতকে হারানোর দিনে তার ঝুলিতে ছিলো না কোন উইকেট। কিন্তু দলের প্রয়োজনে তার মিতব্যয়ী বোলিং ই ভারতকে চাপে রেখেছিলো। সাত ওভার বল করে রান দিয়েছিলেন মাত্র ২৬। এক দিনের ক্রিকেটে উইকেট মাত্র ৪৪ কিন্তু এই ৪৪ উইকেটের মধ্যেই আছেন ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন, কাইফ, হেইডেনের মত কিংবদন্তিরা। আর তাইতো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নাজমুল হোসেন।