দুর্জয় দাশ গুপ্ত »
শামসুর রহমান শুভ, খুবই দ্রুত সময়ে জাতীয় দলে সুযোগ মিলেছিলো তার। তিন ফরম্যাটেই হয়েছিলো অভিষেক। তবে ধারাবাহিকতা না থাকায় দলে জায়গা হারিয়ে ফেলেন। শামসুর মনে করেন খুবই অল্প বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেললে সব ক্রিকেটারই কিছু না কিছু ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তিনি নিজেও এমন কিছু ভুল করেছেন। তখন ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারেন নি কি করা উচিত বা কি করতে হবে। কিন্তু যখন নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারলেন তখন নিয়মিত ভুল শুধরে ভালো খেলে গেলেও সেটার পুরস্কারটা পাচ্ছেন না। একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছেন, সুযোগ পেলেই নিজেকে প্রমাণ করবেন। কিন্তু সেই সুযোগটা আসবে কবে? এমন প্রশ্নের উত্তর জানা নেই শামসুরের। তবে কিছুতেই হার মানতে রাজি না তিনি। লড়ে যাবেন একটা সুযোগ বের করার নিতে। আর এজন্যই তো নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন প্রতিনিয়ত।
কোয়ারেন্টাইনের অবসর সময়টাতে বৃষ্টিভেজা এক সকালে মুঠোফোনে পাওয়া গেল শামসুর রহমান শুভকে। হলো অনেক গল্প। তবে গল্পের পুরোটা সময় জুড়েই ছিলো ক্রিকেট। মানুষ হিসেবে শামসুর রহমান খুবই মিশুক এটা কোন দ্বিধা ছাড়াই বলা যাবে। আড্ডার ছলে হয়ে গেল এক ছোটখাটো সাক্ষাৎকার। শুভ জানালেন জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমটা খুব মিস করেন। বিশেষ করে দেশের বাইরে ট্যুরে গেলে সবার সাথে যে আড্ডাটা হতো সেটা খুবই মনে পড়ে তার।
পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।
নিউজক্রিকেটঃ কোয়ারেন্টাইন কেমন কাটছে?
শামসুর রহমানঃ কোয়ারেন্টাইন একদিক দিয়ে চিন্তা করলে খুবই ভালো আবার আরেকদিক দিয়ে চিন্তা করলে খুবই খারাপ কাটছে। ভালো বলতে আমার বাচ্চারা এত লম্বা সময় এর আগে কখনোই আমাকে বাসায় পায়নি। এখন আমাকে পাশে পাচ্ছে। তাদের সাথে সময় কাটাতে পারছি। একজন বাবা হিসেবে বাচ্চাদের পছন্দ-অপছন্দ জানতে পারছি। আমি মনে করি পরিবারকে সময় দেওয়ার ভালো সুযোগ এটা। বিকেল বেলা বাসার ছাদে বাচ্চাদের সাথে খেলা এর পাশাপাশি মাঝেমধ্যে পড়ানো এগুলোর মধ্যে দিয়েই সময় যাচ্ছে। আর খারাপ ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা এরকমভাবে এত লম্বা সময় ধরে ঘরে বসে থাকতে অভ্যস্ত না। যেহেতু আমরা মাঠের মানুষ খেলাধুলা নেই, অনুশীলন করতে পারছি না এই দিক দিয়ে চিন্তা করলে কোয়ারেন্টাইন মোটেও ভালো কাটছে না।
নিউজক্রিকেটঃ নিজেকে কিভাবে ফিট রাখছেন?
শামসুর রহমানঃ প্রথমদিকে অর্থাৎ লকডাউনের শুরুর দিকে এক মাস বাসায় ছিলাম পুরোপুরি। আর এখন ২-৩ দিন পর পর কিছু সময়ের জন্য মাঠে যাচ্ছি। খুব বেশি হলে ৩০ মিনিটের জন্য। গাড়িতে করে যাচ্ছি, একাডেমী মাঠে রানিং করি আবার সোজা বাসায় চলে আসি। কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথাও হয়না। সচেতনা অবলম্বন করে যাওয়া-আসা করি।
নিউজক্রিকেটঃ জাতীয় দলের বাইরে অনেকদিন হলো। ড্রেসিংরুমটাকে কতটা মিস করেন?
শামসুর রহমানঃ দেখেন এটা আমরা একটা জায়গা যেটাকে সবাই মিস করে। যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছে একবার হলেও তারাও মিস করবে। আবার যারা কখনো খেলে নি তারাও স্বপ্ন দেখবে। আমি নিজেও ড্রেসিংরুম অনেক মিস করি। বিশেষ করে আমরা দলে থাকা অবস্থায় আমরা যখন দেশের বাইরে ট্যুরে যেতাম তখন সবাই মিলে একসাথে আড্ডা দেওয়াটা মিস করি। বেশিরভাগ সময় আমি রিয়াদ ভাই, রাজ ভাই, মাশরাফি ভাই, তামিম। আমাদের এই কয়েকজনের আড্ডাটা খুব জমতো।
নিউজক্রিকেটঃ জাতীয় দলে ফেরার জন্য কি করতে হবে আর কি করছেন?
শামসুর রহমানঃ এমন না যে আমি চিন্তা করি না জাতীয় দলে খেলার। অবশ্যই চিন্তা করি জাতীয় দলে ফিরবো। আর এটার জন্য সবসময় নিজেকে প্রস্তুত রাখি। তবুও অনেক সময় কম্বিনেশনের জন্য সুযোগ পাওয়া যায় না। আবার এটা কোনভাবেই অসম্ভব না। যদি সঠিকভাবে নিজের কাজটা করে যেতে পারি তবে আমি বিশ্বাস করি একদিন সুযোগ আসবেই।
নিউজক্রিকেটঃ আপনি মূলত টপ অর্ডারে ব্যাট করেন। জাতীয় দলে পজিশনে টপ-অর্ডারে লিটন, সৌম্যের মত ব্যাটসম্যানরা খেলছেন। এই পজিশন ফিরে পেতে কি করতে হবে?
শামসুর রহমানঃ দেখেন যদি এভাবে চিন্তা করি তাহলে অনেক কঠিন ব্যাপার এটা ঠিক। আমি একটা জিনিস সবসময় চেষ্টা করি যে পজিশনেই খেলি না কেন নিজের সেরাটা দেওয়ার। এখন লিটন-সৌম্য যদি একটা টুর্নামেন্টে ৫০০ রান করে আমার সেখানে ৭০০ রান করতে হবে। ৫০০ রান যেকেউ করতে পারবে, আমার তার থেকে ভালো কিছু করতে হবে। আমি সেটাই মনে করি। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে সুযোগ দিতে হবে। একটা মানুষ নিয়মিত খেলছে তাকে আবার নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ না দিলে সেটা ঠিক হবে না। আমার মনে হয় সুযোগ পাওয়াটা সবচেয়ে জরুরী হোক সেটা ‘এ’ দল বা জাতীয় দল। টেস্টের কথা চিন্তা করলে অবশ্যই ‘এ’ দল থেকে শুরু করতে হবে। আমি মনে করি সুযোগটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুযোগ পেলেই বুঝা সম্ভব আমার কি করা উচিত আর আমি কি করতে পারি। কারণ আপনি যখন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলবেন এটার একটা ধরণ আছে আবার যখন ‘এ’ দলের হয়ে খেলবেন তখন আরেকটা ব্যাপার, ধরণটা আলাদা। মোট কথা স্টেপ বাই স্টেপ চিন্তা করতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে ‘এ’ দল আর সেখান থেকে জাতীয় দল। এভাবেই তো আমরা চিন্তা করি। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের সুযোগ দিতে হবে।
নিউজক্রিকেটঃ জাতীয় দলে ছিলেন অল্প সময়ের জন্য। এরপর বাদ পড়লেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাথে ঘরোয়া ক্রিকেটের পার্থক্য আর সুবিধা-অসুবিধাগুলো একটু বলবেন।
শামসুর রহমানঃ আসলে এই ব্যাপারটা প্রত্যেকটা ক্রিকেটারই ভালো জানে। এটা আসলে নতুন করে বলার কিছু নেই। ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক বড় তফাৎ। তফাৎ যত কমানো যায় ততোই দেশের ক্রিকেটের জন্য মঙ্গল আমি এটা বিশ্বাস করি। যখন বাংলাদেশে ক্রিকেট শুরু হয়েছে তখন একটা সিস্টেম ছিলো। তারপর একের পর এক স্টেপ আসছে। যখন নান্নু ভাই, আকরাম ভাইরা খেলতেন তারপরের স্টেপটা অপি ভাই, বিদ্যুৎ ভাই, সুজন ভাইরা ছিলেন। পরের স্টেপে মুশফিক, সাকিব, তামিম যখন এসেছে। দেখেন ডে বাই ডে সিস্টেমটার উন্নতি হচ্ছে। তাই আমি মনে করি আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটটা আরেকটু উন্নত করা উচিত। বিশেষ করে যদি বলতে হয় তবে বলবো ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটের কথা।
নিউজক্রিকেটঃ কোন ফরম্যাটে ফেরা সহজতর মনে হয় আপনার জন্য?
শামসুর রহমানঃ আসলে এটা বলা কঠিন। আমার কাছে মনে হয় যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনটা ফরম্যাটেই আমি খেলেছি তাই তিন ফরম্যাটের জন্যই আমি ঠিক আছি। আর আমি জানি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা কেমন। একটা ব্যাপার হলো আপনি যখন জাতীয় দলে শুরুর সনয়টাতে খেলবেন তখন অনেকগুলো ভুল করবেন। এটা সবাই করে কেবল আমার কথা বলছি না। অনেকগুলো ভুল সিদ্ধান্ত আপনি নিবেন যেটা পরে বুঝবেন। এবং আপনি কতটা প্রতিভাবান সেটা হয়তো তখন প্রমাণ করতে পারবেন না। আবার আপনি যখন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে আবার জাতীয় দলে সুযোগ করে নিবেন তখন আগের চেয়ে ভালো একটা প্লেয়ার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবেন। কারণ তখন আর শুরুর দিকটার মত ভুল করবেন না। আমি জাতীয় দলে তখন নতুন হলেও তিনটা ফরম্যাটেই আমি খেলেছি। বিশেষ করে টেস্ট আর ওয়ানডেতে আমি খুব বেশি খারাপ করেছি এমন কিন্তু না। আমার এভারেজ যদি দেখেন তবে নতুন প্লেয়ার হিসেবে টেস্ট আর ওয়ানডেতে ঠিকই আছে। তবে অবশ্যই এর থেকে ভালো হতে পারতো। নতুন যদি একটা জায়গায় সুযোগ পাবেন তখন মানিয়ে নেওয়াটা একটা বড় বিষয়। আমি ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিকটায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছি এবং অনেক ভুলও করেছি। এখন যদি আবার সুযোগ আসে তবে অবশ্যই ভুলগুলো শুধরে নিজেকে নতুন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো এবং আমি অনেক ভালো কিছু দিতে পারবো।
নিউজক্রিকেটঃ কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন?
শামসুর রহমানঃ সত্যি কথা বলতে আমি কোন নির্দিষ্ট চিন্তা করি না। যেমন আমাকে এটা করতে হবে, ঐটা করতে হবে এমন চিন্তা আমি করি না। কারণ আমি এভাবে চিন্তা করলে আমার কখনোই সেটা হয় না। মোট কথা একটা প্রেশার থাকে। আমি এগুলো করা বাদ দিয়ে দিয়েছি। আর আমি যে ফরম্যাটটাই খেলি না কেন সেটার ভেতরে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করি। ঘরোয়া ক্রিকেটে এবছর টায়ার – ২ এ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলাম, বিসিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আমার ছিলো। প্রিমিয়ার লীগও তো একটা ম্যাচের পরেই বন্ধ হয়ে গেল। শেষ দুই বিপিএলে কিন্তু আমি দলের জয়ে পজিশন অনুযায়ী পারফর্ম করেছি। ৭-৮ টা ম্যাচে ম্যাচজয়ী পারফর্ম করেছি আমি। তাই আমি বলবো আমি যে ফরম্যাটেই খেলি না কেন নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। যে টুর্নামেন্টই খেলি না কেন নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। আর আমি সব ফরম্যাটে খেলার জন্যই নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখি।
নিউজক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
শামসুর রহমানঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। এবং নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের সকল পাঠকদের জানাই ঈদের আগাম শুভেচ্ছা।