নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
১৯৮৩ সালের আইসিসি বিশ্বকাপটি বেশ নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ ছিল। ভারত এবং জিম্বাবুয়ের ন্যায় দেশগুলো ঐ সময় তেমন ভাল খেলেনি। কিন্তু বিশ্বকাপে তারা যথাক্রমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সকলকে আশ্চর্জান্বিত করেছিল। গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়া হারে জিম্বাবুয়ের কাছে। আর ভারত অঘটন ঘটায় ফাইনালে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে তাদের রাজত্ব কেরে নিয়ে বিশ্ব আসরের সেরার মুকুট ভারতীয়দের মাথায়। ফিরে দেখার আসরে আজ ১৯৮৩ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ….
প্রথম দুই আসরের পর টানা ৩য় বারের মত বিশ্বকাপ আয়োজিত হয় ক্রিকেটের আদি ভূমি ইংল্যান্ডে। তবে ৩য় বিশ্বকাপের ফরম্যাটে আসে বেশ কিছু পরিবর্তন। দ্বিতীয় বিশ্ব আসরে বাজে আবহাওয়ার জন্য সমস্যা হওয়ায়, ১৯৮৩ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের খেলাগুলো হয় ডাবল লিগের। শুধু তাই না পরিবর্তন আসে ফিল্ডিংয়েও। এই বিশ্বকাপে চালু করা হয় ৩০ গজের ইনার সার্কেল। বৃত্তের মধ্যে চারজন ফিল্ডার রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল পুরো ম্যাচেই।
ম্যাচের সংখ্যা বাড়লেও, আগের দু’আসরের মতই ৩য় বিশ্বকাপে অংশ নেয় ৮টি দল। তবে ম্যাচ বেড়ে যাওয়ার কারণে বেড়ে যায় ভেন্যুর সংখ্যাও। ২৭টি ম্যাচ আয়োজিত হয় ইংল্যান্ডের ১৫টি ভেন্যুতে। এই আসরেও ছিল না সিরিজ সেরার কোন পুরস্কার।
ইংল্যান্ডের ডেভিড গাওয়ার ৭ ম্যাচে ৩৮৪ রান করে সর্বোচ্চ রান ও ভারতের রজার বিনি ৮ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন। গ্রুপ এ থেকে সেরা দল হিসেবে ইংল্যান্ড সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। তবে সমান সংখ্যক জয় ও পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে থাকায়, এ গ্রুপের ২য় দল হিসেবে সেমিফাইনালে যায় পাকিস্তান। তবে একের পর এক নাটকীয় ম্যাচে জমে ওঠে বি গ্রুপ।
আইসিসি কাপ জয়ী জিম্বাবুয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ম্যাচেই পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারায়। একই দিনে আরও একটি অঘটন দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারের লজ্জা দেয় কপিল দেবের ভারত। গ্রুপ পর্বে ৬ ম্যাচের ৪টিতেই হারায় সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় অস্ট্রেলিয়া।
সেমিফাইনালে প্রত্যাশিত জয় পায় ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তানের ১৮৪ রানের জবাবে, ভিভ রিচার্ডসের ঝড়ো ৮০ রানের ইনিংসে ৮ উইকেটে জয় তুলে নিয়ে টানা ৩য় ফাইনাল নিশ্চিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে অপর সেমিফাইনালে আবারো অঘটনের সাক্ষী হয় ক্রিকেট বিশ্ব। শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেসে-খেলে জয় তুলে নিয়ে ফাইনালের মঞ্চে নাম লিখায় ভারত।
২৫ জুন লর্ডসের ফাইনালে একই আসরে ৩য় বারের মত মুখোমুখি হয় ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারকা খচিত ক্যারিবিয়ানদের বোলিং লাইন আপের সামনে দাঁড়াতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। অ্যান্ডি রবার্টস-মাইকেল হোল্ডিং-ম্যালকম মার্শালদের সামনে মাত্র ১৮৩ রানে ভারত গুটিয়ে গেলে, টানা ৩য় বারের মত বিশ্ব শিরোপা হাতে তোলার অপেক্ষায় থাকে ক্যারিবিয়রা। তবে এরপর যা হয় তা হয়তো খোদ ভারতীয় ক্রিকেটাররাও কল্পনা করেননি।
গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েডের নিয়ে সাজানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনে ধস নামান, মহিন্দর অমরনাথ ও মদন লাল। মাত্র ১৪০ রানে ক্যারিবিয়দের অল আউট করে দিয়ে, ভারত রচনা নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের বিশ্বকাপ হাতে তোলে এশিয়ার দেশ ভারত।
মহিন্দর অমরনাথ সুনিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ৭ ওভারে মাত্র ১২ রান দেন। তাঁর অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে বিচারকদের বিবেচনায় তাঁকে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এক নজরে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ :
আয়োজক দেশ : ইংল্যান্ড
অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা : ৮
মোট ম্যাচ : ২৭
টুর্নামেন্টের ধরণ : ডাবল রাউন্ড রবিন ও নক আউট পর্ব
চ্যাম্পিয়ন : ভারত
রানার আপ : ওয়েস্ট ইন্ডিজ
সর্বোচ্চ রান : ইংল্যান্ডর ডেভিড গাওয়ার (৩৮৪)
সর্বোচ্চ উইকেট : ভারতীয় বোলার রজার বিনি (১৮টি)
ফাইনালে ম্যাচ সেরা হন : মহিন্দর অমরনাথ।