নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
কাগজ আর কলমের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে শুরু হয়ে গেছে আসল কাজ। দায়িত্ব বুঝে নিয়ে আর দেরি করেন নি, নেমে পড়েছেন মাঠে। বাংলাদেশের নতুন কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ক্রিকেটারদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন। কারণ আর কয়েকদিন পরেই তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। শুরুটা কেমন হয় সেটা সময়ই বলে দিবে। কিন্তু প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে কেমন প্রতিপক্ষ পাচ্ছেন ডোমিঙ্গো? খর্বশক্তির দল আফগানিস্তানকে পাচ্ছেন তার প্রথম প্রতিপক্ষ হিসেবে। লাল বলের ক্রিকেট অর্থাৎ টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে এ দেশের ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হচ্ছেন প্রোটিয়া কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। আফগানিস্তানের সাথে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ, এর পরেই আরেক দুর্বল দল জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ট্রাইনেশন টি-টোয়েন্টি সিরিজ। তবে প্রতিপক্ষ যেমনই হোক না কেন সবার কৌতূহলী চোখ ডোমিঙ্গোর ভবিষ্যৎ নিয়ে।
লিমিটেড ওভার ক্রিকেটে আফগানরা বিপদজনক প্রতিপক্ষ। আর সেটা টিম টাইগার্স ভালো করেই জানে। ভারতে আফগানদের সাথে টি-টোয়েন্টিতে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার রেকর্ড আছে আমাদের। কিন্তু সাদা জার্সিতে এবারই প্রথমবারের মত মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুদল। মূলত এ কারণেই আফগানিস্তানকে খর্বশক্তির দল বলা হচ্ছে। অভিজ্ঞতার দিক থেকে টাইগাররা অনেক এগিয়ে। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ খেলছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। আর আফগানিস্তান খেলছে বছর দুই হলো। এই দুই বছরেও খেলার তেমন একটা সুযোগ হয় নি আফগানদের। অন্যদিকে সাকিব, মুশফিক, রিয়াদদের অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ পরিপক্ব।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের রণকৌশল চূড়ান্ত করতে বসেছিলেন অধিনায়ক, কোচ সহ নির্বাচকমণ্ডলী। টেস্ট ক্রিকেটে নতুন হলেও একদমই হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না আফগানদের। রশিদ, জহির, নবীর মত বৈচিত্র্যময় স্পিন আক্রমণ নিজেদের দিনে সবার ধারণাকে বুড়ো আঙুলও দেখাতে পারে। আর তাইতো একদমই হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই, ক্যামেরার সামনে এমনটাই জানিয়েছেন আকরাম খান। তবে আশার কথা হলো নিজেদের মাটিতে চেনা কন্ডিশনে খেলবে টাইগাররা। আর হোম গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ ঠিক কতটা ভয়ংকর সেটা ক্রিকেট বিশ্ব ভালো করেই জানে।
আগের দুই কোচের প্রথমজন চন্ডিকা হাতুড়েসিংহের যাত্রাও শুরু হয়েছিলো দেশের মাটিতে। ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে এই শ্রীলংকান কোচের অভিষেক সিরিজে বাংলাদেশ হেরেছিলো ২-০ তে। আর আরেকটা ম্যাচ হয়েছিলো বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত। স্টিভ রোডসের যাত্রা শুরু হয় বিদেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে। তবে এই দুই কোচের মিল একটা জায়গায়। দুজনের শুরুটাই হয়েছে লজ্জাজনক হার দিয়ে। হাতুড়েসিংহের সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে মাত্র ৫৮ রানে ভারতের বিপক্ষে অলআউট হয়েছিলো বাংলাদেশ। আর স্টিভ রোডসের সময়ে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে মাত্র ৪৩ রানে অলআউট। এই দিক থেকে চিন্তা করলে দক্ষিণ আফ্রিকান রাসেল ডোমিঙ্গো বেশ ভাগ্যবান। একে তো দেশের মাটিতে সিরিজ আর তার উপরে প্রতিপক্ষ হিসেবে আফগানিস্তান। এই দিকটা নিশ্চয়ই স্বস্তি দিচ্ছে ডোমিঙ্গোকে।
প্রথমবারের মত সংবাদ সম্মেলনে এসেই সবাইকে অবাক করেছিলেন ডোমিঙ্গো। এত রিপোর্টার একসাথে এর আগে কখনো দেখেন নি এমন কথা বলার পাশাপাশি এটাও বলেছেন ক্রিকেট নিয়ে এদেশের মানুষের আবেগের কমতি নেই। আর এজন্যই তার শুরুটা কেমন হয় এটা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনার। ডোমিঙ্গো নিজেও হয়তো জানেন না এই ক্রিকেটীয় আবেগ যেমন প্রশান্তির তেমনি আবার তার জন্য হয়ে কাল হয়েও দাঁড়াতে পারে।
টিম টাইগার্সের ম্যানেজমেন্ট ইতিমধ্যেই জানিয়েছে কোচ হিসেবে ডোমিঙ্গো অন্য সবার থেকে আলাদা। তার চিন্তা ভাবনা, দলকে ঘিরে পরিকল্পনা সবই ম্যানেজমেন্টকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু দিনশেষে এমন মুগ্ধতাও যে নির্ভর করে মাঠের ফলাফলের উপর। ফলাফল খারাপ হলে তখন এমন মুগ্ধতা আর থাকবে না।
আগের দুজনের কেউই চুক্তি শেষ করতে পারেননি। চুক্তি শেষ হবার আগেই চাকরি হারিয়েছেন। যদিও হাতুড়ে নিজেই নিজের দেশের দায়িত্ব নিতে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর ইংলিশ ভদ্রলোক স্টিভ রোডস বিশ্বকাপে ব্যর্থতার দায়ে আবার পুরনো জায়গায় ফিরে গিয়েছেন। ডোমিঙ্গো এই দুজন থেকে সব দিক থেকেই ভাগ্যবান। কেননা কোচিং স্টাফে তার সাথে রয়েছেন স্বদেশী আরো দুজন। তাদের নিয়ে সম্বলিতভাবে কাজ করতে পারলে সফলতা যে আসবেই। তাই আশা করাই যায় আগের দুজন না পারলেও বিসিবির সাথে হওয়া চুক্তি পর্যন্ত থাকতে পারবেন রাসেল ডোমিঙ্গো।