জাতীয় দলে ফেরা সম্ভব বলেই এখনো ক্রিকেট খেলছিঃ নাফীস

নিউজ ডেস্ক »

শাহরিয়ার নাফিজ নামটা কারও কাছেই অপরিচিত নন। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রথম অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফিজ। তবে শাহরিয়ার নাফিজ নামটার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে নানান আক্ষেপ। শাহরিয়ার নাফিজ নামটাই যেন আক্ষেপের এক প্রতিচ্ছবি।

বাংলাদেশ অনেকদিন ধরেই একজন বা’হাতি ব্যাটসম্যান খুঁজছিলেন। বোর্ডের সেই আক্ষেপ ঘোচাতে ধুমকেতুর মত আবির্ভাব হয়েছিলো শাহরিয়ার নাফিজের। দেশের বাহিরে অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশের এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা খুবই কম। ২০০৫ সালের ২১ জুন বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয় এই বা’হাতি ব্যাটসম্যানের।

অভিষেক ম্যাচে মাত্র ১০ রান করে সাজঘরে ফিরেন নাফিজ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই জ্বলৈ উঠে নাফিজের ব্যাট আর সেদিন নাফিজের ব্যাট থেকে আসে ৪৭ রান। তার ব্যাটের উজ্জ্বলতা দেখা যায় এক ম্যাচ বিরতিতে। শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ৭৫ রানের অনদব্য ইনিংস। ওয়ানডে ক্রিকেটে পরের দুইবছর ছিলেন ধারাবাহিক।

২০০৫ সালেই টেস্টে অভিষেক হয় শাহরিয়ার নাফিজের। অভিষেকের পর নিজের পঞ্চম টেস্টেই শক্তিশালি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ১৮৯ বলে ১৩৮ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়া দলের সে সময়কার সেরা বোলার শেন ওয়ার্ন, ব্রেট লি, জেসন গিলেম্পি ও স্টুয়ার্ড ম্যাগগিলদের অনায়াসে খেলেছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে এক বছরে ১ হাজার রান করে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে এছাড়াও মনোনয়ন পেয়েছিলেন আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হিসেবে।

নিজের ক্রিকেটের পথচলা, স্মরণীয় মূহুর্ত, এবার বিপিএল ও তরুণদের দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডম কমের সাথে কথা বলেছেন শাহরিয়ার নাফিজ। পুরো সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মমিনুল ইসলাম।

প্রশ্নঃ ক্রিকেটের পথচলাটা কিভাবে?

শাহরিয়ার নাফীসঃ ছোটবেলায় পরিবারে ক্রিকেটের চল ছিল। সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ আমার খালাতো ভাই। উনাদের দেখেই খেলার শুরুটা হয়েছিলো।

প্রশ্নঃ ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে বেশি পাশে পেয়েছেন কাকে? বাবা না কি মা?

শাহরিয়ার নাফীসঃ আম্মা ছিলেন৷ আম্মা আমাকে মাঠে নিয়ে যেতেন। সবসময়ই ক্রিকেটের জন্য পারিবারিক যে সাপোর্টের প্রয়োজন ছিলো সেটা আম্মুর থেকেই পেয়েছি।

প্রশ্নঃ প্রথমবার যখন জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেলেন তখনকার অনুভূতিটা কেমন?

শাহরিয়ার নাফীসঃ এটা অবশ্যই একটা স্বপ্ন পূরণ ছিলো। ক্রিকেট খেলা শুরু করার পর থেকেই একটা স্বপ্ন ছিলো জাতীয় দলে খেলার। যখন সুযোগ এসেছে দেশের জন্য খেলার তখন খুব খুশি ছিলাম।

প্রশ্নঃ ক্রিকেটে আপনার আইডল কে?

শাহরিয়ার নাফীসঃ আমি যখন খেলা শুরু করেছি তখন ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকার তাদের খেলা দেখতাম খুব। তাদের দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছি।

প্রশ্নঃ আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা ইনিংস আপনার দৃষ্টিতে কোনটা?

শাহরিয়ার নাফীসঃ বিশেষ করে বললে টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩৮ রানের ইনিংসটা সেরা৷ আবার ওয়ানডেতে আমার চারটা সেঞ্চুরি’ই মনে রাখার মত৷ আর টি-টোয়েন্টিতে দুটি ইনিংস, একটি হলো বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আমি যেটার অধিনায়ক ছিলাম এবং বিপিএলে ২০১৩ সালে খুলনায় হয়ে করা সেঞ্চুরিটা।

প্রশ্নঃ আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ঐ ম্যাচে আপনি অধিনায়কও ছিলেন৷ কিন্তু এর পরে আর আপনাকে টি-টোয়েন্টিতে দেখা যায় নি। এর কারণটা কি হতে পারে?

শাহরিয়ার নাফীসঃ আসলে এটা বলা খুব কঠিন। ঐ সময় যারা নির্বাচকরা ছিলেন তারা বলতে পারবেন। আমি মনে করি আমি আরো সুযোগ পাওয়ার যোগ্যতা রাখতাম। কিন্তু কেন পেলাম না সেটার উত্তর তখনকার নির্বাচকরাই দিতে পারবেন।

প্রশ্নঃ বিপিএলে ৪৫ ম্যাচে আপনার ৯৭৫ রান আছে৷ কিন্তু এবার বিপিএলে দল পাননি। এর কারণটা আসলে কি? বা সমস্যাটা কি?

শাহরিয়ার নাফীসঃ সমস্যার কথাটা আমি বলতে পারবো না৷ বিপিএলে আমি ৪৫ টি ম্যাচ খেলেছি এবং ৯৭৫ রান করেছি। যদি গড়ের দিকটা দেখি তবে ৩য় বা চতুর্থ স্থানে আছি দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে। রানের দিক থেকে দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ১০ম স্থানে আছি যদিওবা তারা ৬০-৭০ টা ম্যাচ খেলেছে। আমার পারফরম্যান্সে ঘাটতি ছিলো না তবে কেন দল পেলাম না সেটা যারা দল গঠন করেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন।

প্রশ্নঃ বিগত বছরগুলোতে আপনাকে ডিভিশন ক্রিকেটে খুব ভালো খেলতে দেখা গেছে। এর পর অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলো আবার হয়তো জাতীয় দলে ফিরবেন। কিন্তু পরে আর জাতীয় দলে দেখা যায়নি। কি মনে হয় জাতীয় দলে ফেরা সম্ভব?

শাহরিয়ার নাফীসঃ ফেরা সম্ভব বলেই এখনো ক্রিকেট খেলছি৷ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টায় আছি। বাকিটা তো আমার হাতে নেই। যারা নির্বাচকমন্ডলী আছেন তাদের উপরই পুরো বিষয়টা নির্ভর করছে।

প্রশ্নঃ এবারের বঙ্গবন্ধু বিপিএল আপনার চোখে কেমন? আগের আসরগুলোর থেকে এবার একটু ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে৷ সবমিলিয়ে আপনার কাছে কেমন?

শাহরিয়ার নাফীসঃ দেখুন বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাতে হয় কারণ খুবই সল্প সময়ে অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়ে বিপিএলটা আয়োজন করেছে। এবং খেলা এখনো চলছে, ভালোই চলছে। তবে আগের আসরগুলোর মত দর্শক এবার মাঠে খুব বেশি আসছে না। পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজি যেভাবে দল করে অনেক প্রচার-প্রচারণা চালায়, দল গঠনে আরো অনেক দূরদর্শিতা প্রদর্শন করে। এবার যেহেতু অল্প সময়ের মধ্যে হয়েছে সবারই একটি তাড়াহুড়ো ছিলো। খেলা খেলার মতই চলছে, কেবল দর্শকদের মধ্যে আগ্রহটা কম।

প্রশ্নঃ এবার বিপিএলে এখন পর্যন্ত আমাদের দেশি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স আপনার দৃষ্টিতে কেমন?

শাহরিয়ার নাফীসঃ দেখুন যদি স্পষ্টভাবে যদি বলি এবার দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সিনিয়র ক্রিকেটারদের পাশাপাশি তরুণরাও ভালো করছে। মুশফিক, তামিম, ইমরুল কায়েস এই তিনজন নিয়মিত ভালো করছেন৷ নতুনদের মধ্যে হাসান মাহমুদের বোলিংটা আমার ভালো লেগেছে, এবাদত ভালো বল করেছে।

প্রশ্নঃ মেহেদী হাসান রানা, মুগ্ধ, হাসান মাহমুদ এদের নিয়ে মাশরাফি-মুশফিকরা প্রশংসা করেছে। আপনি কিভাবে দেখছেন পুরো ব্যাপারটা?

শাহরিয়ার নাফীসঃ রানা ভালো বোলিং করছে। হাসান মাহমুদও ভালো বল করেছে। মুগ্ধও ভালো করেছে। যেকোনো খেলায় শুরুটা করা কিছুটা সহজ হলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখা খুব কঠিন। আশা করি এরা ভালো করবে। দেশের জন্য যতদিন পারি খেলবো এমন মানসিকতা প্রয়োজন।

প্রশ্নঃ আমরা দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি। কিন্তু গত বছর সদ্য টেস্ট মর্যাদা পাওয়া দলের বিপক্ষে হেরেছি। এটা কিভাবো দেখছেন?

শাহরিয়ার নাফীসঃ আমার কাছে মনে হয় ঐ ম্যাচে আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিলো।

প্রশ্নঃ ভারতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি আমাদের। এটা কিভাবে দেখছেন?

শাহরিয়ার নাফীসঃ দেখুন বাংলাদেশ ক্রিকেট শুরু করেছে ওয়ানডে’র মাধ্যমে। ক্রিকেট বিশ্বে নামও করেছে ওয়ানডে ম্যাচ খেলে। কিন্তু অন্যান্য দেশে সবার আগে টেস্ট ক্রিকেটটাকে সবাই গুরুত্ব দেয়৷ তাদের দেশে অন্য ফরম্যাটের যত টুর্নামেন্টই থাকুক না কেন তারপরও গুরুত্বটা টেস্টেই বেশি থাকে।

প্রশ্নঃ কয়েকদিন সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিবর্তন দরকার৷ আমাদের আর তাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের সিস্টেমে পার্থক্যটা কোথায়?

শাহরিয়ার নাফীসঃ দেখুন এখানে পার্থক্য করাটা ঠিক হবে না। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। ১০০-১৫০ বছরের পুরনো। আর আমাদের ইতিহাস ততোটা পুরনো না। আমি এটাই বললাম যদি আমরা টেস্ট ক্রিকেটটাকে গুরুত্ব দেই, এই ফরম্যাটকে ঘিরে পরিকল্পনা করি তাহলে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে আমরা অটোমেটিক ভালো করবো।

প্রশ্নঃ যারা ক্রিকেটার হতে চায় তাদের উদ্দেশ্য আপনার পরামর্শ কি হতে পারে?

শাহরিয়ার নাফীসঃ পরামর্শ বলতে প্রথমেই খেলাটাকে ভালোবাসতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে, প্রচেষ্টা পাওয়া সহজ এবং সেটাকে ধরে রাখার মানসিকতা থাকতে হবে৷

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »