দুর্জয় দাশ গুপ্ত »
তানজিম হাসান সাকিব, বয়স কেবল আঠার। আঠার বছর বয়সেই বিশ্বজয় করেছেন সিলেটের সাকিব। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে সাকিব তৃতীয়। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ছিলো আগ্রহ পরে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছেন।
বিশ্বকাপজয়ী এই যুবা টাইগারের সাথে এবার মুঠোফোন কথা বলেছেন নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের প্রতিনিধি। তানজিম হাসান সাকিব জানিয়েছেন নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।
নিউজক্রিকেটঃ ক্রিকেটে হাতেখড়ি কিভাবে হলো?
সাকিবঃ আমি ছোটবেলা থেকেই টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলতাম। তারপর বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রফেশনালি ক্রিকেটে জড়িয়ে যাই।
নিউজক্রিকেটঃ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটটা কতটুকু চ্যালেঞ্জিং ছিলো?
সাকিবঃ সত্যি কথা বলতে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট আমি খুব উপভোগ করেছি। কারণ সবসময় সবাই সমবয়সী ছিলো। প্রতিযোগীতা শুরুর দিকে সেভাবে ছিলো না। তবে অনূর্ধ্ব-১৭ এর পর থেকে খুব বেশি প্রতিযোগীতা ছিলো।
নিউজক্রিকেটঃ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়ার অনুভূতি কেমন ছিলো?
সাকিবঃ আসলে দুই বছর ধরে আমরা বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। দলে সুযোগ পাওয়ার পরেই একটা স্বপ্ন ছিলো আমার বিশ্বকাপ খেলার। অবশ্যই খুব ভালো লেগেছিলো দলে সুযোগ পেয়ে।
নিউজক্রিকেটঃ সেক্ষেত্রে নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করেছেন?
সাকিবঃ একটু আগে যেটা বললাম বিশ্বকাপের জন্য আমরা লম্বা পরিকল্পনা করেছি। বিশ্বকাপের আগ থেকেই প্রতিটা সিরিজ নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করেছি। লক্ষ্য সবসময়ই ছিলো ভালো করার। আর প্রতিটা প্লেয়ারের একটা লক্ষ্য থাকে, আমার লক্ষ্য ছিলো বিশ্বকাপে দেশের জন্য ভালো কিছু করার।
নিউজক্রিকেটঃ বিশ্বকাপ জয়ের আত্মবিশ্বাস কিভাবে তৈরি হয়েছিলো?
সাকিবঃ বিশ্বকাপ জয়ের আত্মবিশ্বাস একদিনে আসেনি। অনেকগুলো সিরিজ খেলে, ভালো ফলাফল বের করে নিয়ে আসতে পারায় তৈরি হয়েছে। যদি খেয়াল করে দেখেন বিশ্বকাপের আগে দুই বছরে আমরা যে ম্যাচগুলো খেলেছি তার প্রায় ৮০ ভাগ ম্যাচে জয়লাভ করেছি। কেবল ভারতের কাছে হেরেছি এশিয়া কাপ আর ত্রিদেশীয় সিরিজে। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজে ১ ম্যাচ হেরেছি। বেশি ম্যাচ জিততে পারায় সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাসটা তৈরি হয়েছে।
নিউজক্রিকেটঃ বিশ্বকাপ জয়ের অনুভূতি কেমন ছিলো?
সাকিবঃ মাঠের মধ্যে আমরা জয়ের পরে কেবল উদযাপন করেছি। তখনো মনে হয়নি বিশ্বকাপ জয় করেছি বা এমন কিছু। কেবল মনে হয়েছে ভারতকে হারিয়েছি এবং একটা ম্যাচ জিতেছি। সত্যি কথা বলতে দেশে ফেরার পরে মনে হয়েছে যে সত্যিই আমরা কিছু একটা করতে পেরেছি, দেশের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছি। বড় কথা হলো দেশের মানুষের এত ভালোবাসা পাওয়ার পরে মনে হয়েছে আসলেই দেশের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি। আর সে অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।
নিউজক্রিকেটঃ এখন পরিকল্পনা কি? ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করছন?
সাকিবঃ এখন ফিটনেস নিয়েই কাজ করছি। ফিটনেসের উপর জোর দিচ্ছি। অবশ্যই নিজেকে অনেক ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন অবশ্যই আছে। সেভাবে নিজেকে তৈরি করতে সময় লাগবে। আমি সেভাবেই এগোচ্ছি। আর সবসময় ভালো করার চিন্তা আমার মাথায় থাকে। দিন দিন যেন আরো ভালো হতে পারি।
নিউজক্রিকেটঃ একজন পেস বোলারের জন্য দেশের মাটিতে ভালো করা কঠিন বর্তমান প্রেক্ষাপটে। সেক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কি?
সাকিবঃ আমি দেশের মাটিতে বল করাটা খুব উপভোগ করি। এখানের উইকেট থেকে পেসাররা খুব বেশি সাহায্য পায় না। কিন্তু যদি স্কিল ভালো থাকে এবং মাথা খাটিয়ে বল করা যায় তবে এখানে ভালো করা সম্ভব। আমিও মনে করি এখানে বল করা চ্যালেঞ্জিং। আর আমি সবসময় চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলতে পছন্দ করি।
নিউজক্রিকেটঃ ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কি?
সাকিবঃ প্রিমিয়ার লিগের জন্য নিজেকে তৈরি করেছিলাম কিন্তু এখন তো খেলা বন্ধ হয়ে গেল। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমার চেষ্টা থাকবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় সেরা পাঁচের মধ্যে থাকার। আর আমি আসলে ম্যাচ বাই ম্যাচ পরিকল্পনা করি। প্রতিটা ম্যাচে ভালো করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামি। এছাড়া আমার কোন বড় লক্ষ্য নেই।
নিউজক্রিকেটঃ দেশের বাইরে একজন পেসার হিসেবে ভালো করা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
সাকিবঃ আমি যে কয়টা ম্যাচ খেলেছি দেশের বাইরে সে অভিজ্ঞতা থেকে আমি মনে করি অচেনা কন্ডিশনে বুঝেশুনে বল করতে হয়। বাউন্সি উইকেট থাকে কাজেই ব্যাটসম্যানদেরও সুবিধা থাকে কিছুটা। সবসময় লাইন-লেন্থ বজায় রেখে বল করে যেতে হয়। একটু বাইরে বল করলেই ব্যাটসম্যান মারবে। যত ভালো কন্ট্রোল থাকবে, গতি এবং সুইং থাকবে ততোই মঙ্গল।
নিউজক্রিকেটঃ আপনার আইডল কে?
সাকিবঃ আমার আইডল ডেল স্টেইন। আমি তাকে ফলো করি। তাঁর কন্ট্রোল, এগ্রেশন আমার ভালো লাগে।
নিউজক্রিকেটঃ কোন ফরম্যাটে আগ্রহ বেশি?
সাকিবঃ আমি চাই জাতীয় দলে যেন আমার টেস্ট ক্রিকেটের মাধ্যমে অভিষেক হয়। আমি মনে করি একজন পেসার যখন টেস্ট ক্রিকেটের জন্য তৈরি হবে তার মানে বাকি দুই ফরম্যাটে খেলার যোগ্যতাও তার আছে। আমার ইচ্ছা আমার অভিষেক যেন টেস্ট দিয়েই হয়। কারণ আমি টেস্ট ক্রিকেট খুব উপভোগ করি।
নিউজক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
সাকিবঃ আপনাকেও ধন্যবাদ এবং একইসাথে নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের সকল পাঠকদের শুভেচ্ছা।