নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
মেহরাব হোসেন জুনিয়র নামটা ঘরোয়া ক্রিকেটের সাথে বেশ পরিচিত নাম। ঘরোয়া ক্রিকেটের বেশ নিয়মিত মুখ মেহেরাব হোসেন জুনিয়র। খেলেছেন জাতীয় দলের হয়েও তবে থিতু করতে পারেননি নিজের জায়গা। জাতীয় দলের জার্সিতে সর্বশেষ খেলেছিলেন ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর লাল সবুজের জার্সিতে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখলেও হয়ে ওঠেনি মাঠে নামা।
আজকের সাকিব আল হাসান কিংবা মুশফিকুর রহিমদের সাথেই প্রায় ক্যারিয়ারটা শুরু হয়। সাকিব, মুশফিকরা দেশের ক্রিকেটে এখনও শাসন করে গেলেও ২০০৯ সালের পর জাতীয় দলে দেখা যায়নি এক সময়ে দেশের প্রকৃত অলরাউন্ডার হওয়ার স্বপ্ন দেখা মেহেরাব জুনিয়র। ২০০৬ সালে অনুর্ধ্ব -১৯ দলের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পান আর সেখানে ব্যাট বল দুই হাতেই ছিলেন বেশ উজ্জ্বল। বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছিলেন ২১৩ রান আর বল হাতে নিয়েছিলেন ১৬ উইকেট। আর তাতেই কি না ২০০৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত আইসিসির চ্যাম্পিয়ান ট্রফিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় এই অলরাউন্ডারের।
ক্যারিয়ারটা খুব একটা বেশি উজ্জ্বল বলার সুযোগ নেই। ক্যারিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৮৩ রান ছাড়া মনে রাখার মত আর কোন ইনিংস নেই আর বল হাতেও তেমন কোন কিছু দেখাতে পারেননি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই পারফর্ম করে গেছেন মেহেরাব জুনিয়র তবে খুলেনি কখনো জাতীয় দলের দরজা। দেশের হয়ে খেলেছেন ৭ টি টেস্ট, ১৮ টি ওয়ান আর ২ টি মাত্র টি-২০। ব্যাট হাতে ৭ টেস্টে করেছেন ২৪৩ রান যেখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৩ রানের ইনিংসই ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস, ১৮ ওয়ানডেতে ২৭৬ রান ফিফটি আছে একটি আর ২ টি-২০ তে করেছেন মাত্র ১৬ রান। আর বল হাতে ৭ টেস্টে ৪ উইকেট, ১৮ ওয়ানডেতে পেয়েছেন ৪ উইকেট তবে কোন উইকেট নেই টি-২০ ক্যারিয়ারে।
গত বছর পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট গুলোতে নিয়মিতই খেলেছেন গেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই জাতীয় ক্রিকেট লিগের ২১ তম আসরের প্রথম রাউন্ড শেষ হয়েছে। গতবছর লিগে দেখা গেলেও এবার খেলছেন না মেহেরাব হোসেন জুনিয়র। ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন তিনি কম যান নি বল হাতে। একজন পরিপক্ক অলরাউন্ডারের ভুমিকাতেই দেখা গেছে ঘরোয়া ক্রিকেটে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১২৪ ম্যাচে ব্যাট হাতে ৬৫২৪ রান করেন আর বল হাতে ১২৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৫৩ উইকেট। মাঝখানে বেশ কিছুদিন ধারাভাষ্যেও কাটিয়েছেন তাতেও খুঁজে পাননি নিজের তৃপ্ততা।
জানা গেছে দেশ ও দেশের ক্রিকেট ছেড়ে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পাড়ি জমিয়েছেন কানাডাতে। দেশের ক্রিকেট থেকে নিজের এই নিরব প্রস্থান নিয়ে পরোক্ষভাবে কথা বলেছেন বিডিক্রিকটাইমের সাথে। জানা গেছে তাঁর এই নিরব প্রস্থানের গল্পকথা ।
শুরুতেই তাঁর হঠাৎ প্রস্থান নিয়ে বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে প্রথমে আমি একাই আসি কানাডায়। পরে জুলাইয়ের দিকে আমরা পরিবার এসে আমার সাথে যোগ দেয়। সিন্ধান্তটা নিয়ে আসলে খুব একটা ভাবিনি বলা চলে হুট করেই এমন সিদ্ধান্তে যাই। আমার দুইটি সন্তান আছে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনা করেই আসলে এখানে আসা আর আমিও চাচ্ছিলাম তারা এখানে ( কানাডায়) বেড়ে উঠুক। ‘
যারা ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবে তারা ক্রিকেটে জড়িয়ে পড়লেন তখন ক্রিকেট ছেড়ে থাকাটা বড্ড বেশি কষ্টের মেহেরাব হোসেন জুনিয়রের ক্ষেত্রেও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কি আর করার নিজের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবেই এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলো। তিনি জানান, ‘ আমরা যারা ক্রিকেট খেলি তাদের জন্য ছেড়ে দুরে থাকাটা কষ্টকর। আমার এখনও অবসর নেওয়ার বয়স হয়নি কিন্তু জাতীয় দলে খেলা হচ্ছে না এসব ভাবলে খারাপ লাগে কখনো কখনো। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভাবলে অনেক সময় অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয় আমি ও তাদের কথা ভেবে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। ‘
কানাডার একটি টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কান একটি ক্লাবের হয়ে খেলছেন তিনি। তবে এখানের ক্রিকেটের সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেকটা ফারাক। নিজের জন্মভূমিতে খেলার তৃপ্তটা খুঁজে পাচ্ছেন না কানাডাতে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটকে সবসময়ই মিস করি। এখনো দেশের অনেক জনের সাথে যোগাযোগ আছে। মাশরাফি রিয়াদদের সাথে বেশ কদিন আগেও কথা চলছিলো। ইতিমধ্যেই লিগ শুরু হয়ে সবাই অনুশীলন করছে আর আমি কানাডাতে এসব ভাবলে মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। দেশের বাহিরে থাকলেও এখানে শ্রীলঙ্কান একটি ক্লাবের হয়ে খেলতেছি তবে বাংলাদেশের খেলার সাথে তুলনা করার সুযোগ নেই।’
মাত্রই বয়সটা ৩২ ছুঁইছুঁই তাতেই দেশের ক্রিকেট ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন কানাডায়। তাঁর থেকে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারই খেলছেন এবারের জাতীয় লিগে তাই নিজে খেলতে না পারার আক্ষেপটা একটু বেশি। তিনি বলেন, ‘আসফোস থাকাটা স্বাভাবিক। কিছু কিছু ব্যাপার থাকে যা সবই আপনার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকে না। দেশের ক্রিকেট নিয়ে কিছু বলতে গেলে বলবো দলের ভালো খারাপ সময়ে খেলোয়াড় ও দেশের ক্রিকেটকে সমর্থন করুন। ‘
নিজের পড়াশোনা, চাকরি, পরিবার পরিজন ও টুকিটাকি ক্রিকেট নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। ব্যস্ততার কারনে দেশে আসা হয় না তবে সময় পেলেই আসবেন দেশে। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ সময় পেলেই বাংলাদেশে আসবো । গত এপ্রিলে অবশ্য দেশে এসেছিলাম। এখানে যেহেতু উচ্চতর শিক্ষার জন্য এসেছি তাই পড়াশোনা নিয়ে একটু ব্যস্ত থাকতে হয় । ব্যস্ততার কারনে সব সময় সবকিছুর খোঁজ নেয়া হয় না। আপনারা সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। ‘