নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল, ইডেন গার্ডেন। শেষ ওভারে জয়ের জন্য উইন্ডিজের ১৯ রান। বল হাতে ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস। ব্যাট হাতে আনকোরা কার্ললোস ব্র্যাথওয়েট। দ্বিতীয়বারে মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চুম্বন দেয়ার অপেক্ষায় সাদা চামড়ার দেশটি। কিন্তু পরপর ৪ বলে ৪ ছয় মেরে নায়ক বনে গেলেন ব্র্যাথওয়েট। বিশিষ্ট ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ আবেগে বলে উঠলেন, ‘কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, রিমেম্বার দ্যা নেইম।’ ততক্ষণে রাজ্যের পাপবোধে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে স্টোকসের। যাকে অনেকেই ফ্লিনটফের উত্তরসূরী হিসেবে বিবেচনা করেছেন সেই তারাও আজকে হতবাক।
বাংলায় একটা প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে –
“পরাজয়ে ডরে না বীর”। সেটার উজ্জ্বল উদাহরণ আজকের বেঞ্জামিন স্টোকস। মাঝে কেটে গেছে তিন বছর। সময়ের ব্যবধানে পরিপক্ক হয়েছেন তিনিও। এইবারে ঘরের মাটিতে বসে একদিনের ক্রিকেটের মেগা আসর। আসরের গোড়াতেই স্টোকস ঘোষণা দেন, এইবার একদিনের ক্রিকেটে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা খরা কাটবে থ্রি-লায়ন্সদের। তাদের হাতেই শোভা পাবে বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফি। টূর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই ক্রিকেট দুনিয়া দেখে স্টোকস শো। দলের বিপর্যয়ে ব্যাট হাতে করেন ৭৯ বলে ৮৯ রান। বল হাতে নেন দুই উইকেট আর সাথে দুটি ক্যাচ যার একটিকে ” শতাব্দীর সেরা ক্যাচ” বলে আখ্যায়িত করেছেন অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা। এমন স্মরণীয় পারফরম্যান্স তাকে এনে দেয় ম্যাচ সেরার পুরস্কার। নাটকীয় ফাইনালে আবারো ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ এর মতো লড়ে ইংল্যান্ডকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত শিরোপা। ব্যাট হাতে ম্যাচ জেতানো ৯৮ বলে ৮৪ রানের ইনিংসটি স্থান করে নেয় কালজয়ী ইনিংসগুলোর তালিকায়। ইসিবি তাকে “নাইটহুড” উপাধিতে ভূষিত করে।
যেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি এমন বীরোচিত ইনিংস খেলে দলকে শিরোপা এনে দেন, সেই নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরেই ১৯৯১ সালের ৪ আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন স্টোকস। তার বাবা ছিলেন রাগবি দলের কোচ, পরে তিনি পরিবার নিয়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে বয়সভিত্তিক দলে ক্রিকেটের হাতে খড়ি হয় স্টোকসের। ২০০৯ সালে ডারহামের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় তার। আকর্ষনীয় পারফরম্যান্স এর পুরস্কার স্বরূপ তিনি ডাক পান ২০১০ সালের যুব বিশ্বকাপে। সেখানে তিনি ভারতের বিপক্ষে শত রানের একটা দৃষ্টিনন্দন ইনিংস উপহার দেন। পরের বছরেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ওয়ানডেতে অভিষেক ঘটে তার। ঠিক দুইবছর পরে লালবলের ক্রিকেটে চিরশত্রু অজিদের সাথে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামেন তিনি। এই অব্দি খেলা ৫২ টেষ্টে ৩৩.৮৯ গড়ে ৩,১৫২ রানসহ ১২৭টি উইকেট নিজের ঝুলিতে পুড়েছেন এই অলরাউন্ডার। অপরদিকে, ৯৫টি একদিনের ম্যাচে অংশ নিয়ে ৪০.৬৯ গড়ে ২,৬৮২ রানসহ ৭০টি উইকেটের মালিক তিনি। এছাড়াও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার নামের পাশে রয়েছে ৬,৯৪২ রান এবং ২৯৬টি উইকেট। ক্যারিয়ারে কালো অধ্যায়ের সাথেও সাক্ষাৎ হয়েছিলো তার। ২০১৭ সালে ক্যারিবীয় সফরে মদ্যপ অবস্থায় একজনকে তিনি মারধর করেন, পরে অবশ্য তিনি নিজের কৃতকর্মের জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।
————
বিপ্রতীপ দাস