নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
তিনটি আসর পর বিশ্বকাপ আবারও ফিরে আসলো ইংল্যান্ডে। তবে, বাংলাদেশ বিশ্বকাপকে মনে রাখে অন্য একটা কারণে। সেবারই যে প্রথম বিশ্বকাপের মত বড় আসরে খেলে ফেললো আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বাংলাদেশ। এই আসরে পাকিস্তান ফেভারিটের প্রথম তালিকায় থাকলেও, শিরোপা ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া। তবে, স্মরণীয় কিছু ঘটনা আর রুদ্ধশ্বাস কিছু ম্যাচের জন্য ১৯৯৯ বিশ্বকাপ দারুণ এক অধ্যায় হয়ে আছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে।
ইংল্যান্ড ছাড়াও স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস আর নেদারল্যান্ডস ছিল এ আসরের যৌথ আয়োজক। তাতে অংশ নেয় ১২টি দেশ। আইসিসি’র পূর্ণ সদস্য অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর জিম্বাবুয়ে ছাড়াও সহযোগী সদস্য হিসেবে কেনিয়ার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের পাতায় নিজেদের নাম লেখায় বাংলাদেশ ও স্কটল্যান্ড। প্রথমবারের মত অংশ নিয়ে ওই আসরেই বিশ্বকে চমক দেখায় বাংলাদেশ। ৩১ মে অনুষ্ঠিত বি গ্রুপের ম্যাচে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী পরাশক্তিকে ৬২ রানে হারিয়ে অঘটন ঘটায় লাল-সবুজরা। ম্যাচটিতে খালেদ মাহমুদের বোলিং তোপে পড়ে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে ওয়াসিম আকরামের দল। গ্রুপ পর্বের লড়াই শেষে শুরু হয় সুপার সিক্স পর্বের লড়াই। বিশ্বকাপের এ আসরেই প্রথমবারের মতো শুরু হয় সুপার সিক্স পর্ব। ‘এ’ এবং ‘বি’ এই দুই গ্রুপের শীর্ষ তিন দল খেলে সুপার সিক্সে। আর এ পর্বের শীর্ষ চার দল নিয়েই অনুষ্ঠিত হয় সেমিফাইনালের লড়াই। ১৬ই জুন আসরের প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে সাঈদ আনোয়ারের অপরাজিত ১১৩ রানের অসাধারণ ইনিংস ও শোয়েব আখতারের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৯ উইকেটের জয় নিয়ে ফাইনালে ওঠে পাকিস্তান।
১৭ জুন দ্বিতীয় সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া। যা সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ম্যাচ হিসেবে এখনও সমাদৃত। বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের তুলনায় বোলারদের দাপটই ছিলো বেশি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাত্র ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের খেতাব অর্জন করেন শেন ওয়ার্ন। অন্যদিকে ৩৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শন পলকও সবার নজর কাড়েন। যদিও ২১৩ রানের সে ম্যাচটি হয়েছিলো ড্র। তবে, সুপার সিক্স পর্বের রানরেটে এগিয়ে থাকায় শেষ পর্যন্ত ফাইনালের মঞ্চে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে, নামের পাশে তখন থেকেই চোকার্স উপাধিটা নিজেদের করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ জুন ইংল্যান্ডের লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান। এই দুই পরাশক্তির লড়াইয়ে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বংসী বোলিংয়ের শিকার হয়ে ১৩২ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান। মাত্র ৩৩ রান দিয়ে ৪টি উইকেট শিকার করেন শেন ওয়ার্ন। ১৩৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়া, অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ৩৬ বলে ৫৪ রানে চড়েই পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে। সেই সাথে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে রিকি পন্টিংয়ের দল দ্বিতীয়বারের মত জয় করে নেয় বিশ্বকাপের ট্রফি।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সপ্তম এ আসরে সব মিলিয়ে ম্যাচের সংখ্যা ছিল ৪২টি। সবচে’ বেশি ৪৬১ রান করেন ভারতের রাহুল দ্রাবিড়। যৌথভাবে সর্বোচ্চ ২০ টি উইকেট শিকার করেন অস্ট্রেলিয়ার শ্যেন ওয়ার্ন ও নিউজিল্যান্ডের জিওফ অ্যালোট। আর ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যান্স ক্লুজনার।
এক নজরে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ
আয়োজক দেশ : ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ওয়েলস।
অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা : ১২
মোট ম্যাচ : ৪২
টুর্নামেন্টের ধরণ : রাউন্ড রবিন ও নক আউট পর্ব
চ্যাম্পিয়ন : অস্ট্রেলিয়া
রানার আপ : পাকিস্তান
সর্বোচ্চ রান : ভারতের রাহুল দ্রাবিড় (৪৬১)
সর্বোচ্চ উইকেট : নিউজিল্যান্ডের জিওফ অ্যালট (২০) ও অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন (২০)
ফাইনালে ম্যাচ সেরা : অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন
টুর্নামেন্ট সেরা : দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যান্স ক্লুজনার