সেদিনের গুন্ডাটাই আজ ইংলিশ ক্রিকেটের মহানায়ক!

দুর্জয় দাশ গুপ্ত »

বেন আপনি কি মানুষ? প্রশ্নটা এক ভারতীয় সঞ্চালকের। গৌতম ভিমানি এই প্রশ্নটা করেছিলেন বেন স্টোকসকে। এর উত্তর জানতে হলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে ১৯৯১ সালে। ১৯৯১ সালের ৪ জুন নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জন্ম হয় স্টোকসের। স্টোকসের জন্ম স্থান নিউজিল্যান্ডে দেখে অবাক হয়েছেন? জন্ম নিউজিল্যান্ডে অথচ খেলছেন ইংল্যান্ডের হয়ে? আবার নিজের জন্মভূমিকে হারিয়েই ইংলিশদের বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন। সমীকরণটা বেশ কঠিন! স্টোকসকে যত দেখবেন ততোই অবাক হবেন। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত জন্মভূমিতেই ছিলেন তিনি। কিন্তু ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ড ছেড়ে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে যদিওবা বাবা-মা নিউজিল্যান্ডেই আছেন এখনো। বাবার সূত্র ধরেই ইংল্যান্ডে আসা স্টোকসের। একটা সময় পরিবার ফিরে গেলেও স্টোকস ফিরেন নি জন্মভূমিতে।

ইংল্যান্ডে আসার পরেই হয় ক্রিকেটে হাতেখড়ি। স্থানীয় কিছু ক্লাবের হয়ে খেলতেন স্টোকস। একজন অলরাউন্ডার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপরের গল্পটা সবার জানা। তবুও একটা কিন্তু থেকে যায়। জীবন কি তবে দু’হাত ভরে দিয়েছে স্টোকসকে?

বেন স্টোকস আর দশটা সাধারণ মানুষের মত না। কেন অসাধারণ সেটা আপনাকেই বুঝে নিতে হবে। মাতাল অবস্থায় মেজাজ হারিয়ে মারামারি করে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়া, ইডেনের গ্যালারী ভর্তি দর্শকদের সামনে বিশ্বকাপ ফাইনালে চার বলে চার ছক্কা খেয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে অসহায়ের মত কান্না করা সেই স্টোকস আর আজকের স্টোকসের মধ্যে কোন তফাৎ নেই৷ ইডেনের সেই রাতের মাত্র বছর তিনেকের মধ্যেই ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে ইংলিশদের বিশ্বকাপ এনে দিতে পারবেন স্টোকস নিজেও হয়তো সেটা জানতেন না।

তবে স্টোকস জানেন কিভাবে খারাপ সময়টাতে নিজের উপর ভরসা রাখতে হয়, স্টোকস জানেন কিভাবে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হয়, স্টোকস জানেন কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। স্টোকস জানেন আজ যারা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে তারাই একদিন প্রশংসায় ভাসাবে। হয়তো স্টোকসের কাছে এটাই জীবন। হয়তো স্টোকসের কাছে এটাই চ্যালেঞ্জ।

বিশ্বকাপ জয়ের মাস দুয়েক পরেই সাদা পোষাকে স্টোকস ভেঙেছেন ১৩১ বছরের পুরনো রেকর্ড। প্রথম ইনিংসে ৭০ রানের কম করেও ম্যাচ জেতা সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব যদি আপনার একজন বেন স্টোকস থাকে। অজিদের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৫৯ রানের লক্ষ্যে ২৮৬ রানে নবম উইকেট হারানোর পর ইংলিশদের ড্রেসিরুমে কি চলছিলো সেটা জানা নেই। কেউ কি একটিবারের জন্য ভেবেছিলো রাস্তায় গুন্ডামী করা সেই ছেলেটাই মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে একা লড়ে দলকে জয় উপহার দিবে? কেউ ভাবলো কি না এসবে কিছু যায় আসে না বেনের। বরং ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলা স্টোকসের মৃদু হাসি দেখলে বুঝার উপায় নেই এই মানুষটা আহামরি কিছু একটা করে ফেলেছে।

এক অনুপ্রেরণার নাম হতে পারেন বেন স্টোকস। জীবনে চলার পথে অনেক বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। অনেক সময় ছোট্ট একটা ব্যাপারেই হতাশ হয়ে যাই আমরা৷ কিন্তু এই মানুষটার কথা চিন্তা করুন। তাকে ঘিরে কত সমালোচনা, কত তাচ্ছিল্যের হাসি হয়েছে অথচ আজ সে মানুষটাই ইংলিশ ক্রিকেটের মহানায়ক।

শুভ জন্মদিন বেন স্টোকস।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »