সুযোগ না পেলে নিজেকে প্রমাণ করবো কিভাবেঃ সোহাগ গাজী

দুর্জয় দাশ গুপ্ত »

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পরেই আলো ছড়িয়েছেন যে কয়জন বাংলাদেশি ক্রিকেটার তাদের মধ্যে অন্যতম স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার সোহাগ গাজী। এমন এক রেকর্ডের মালিক এই ক্রিকেটার যার কোন নজির বিশ্ব ক্রিকেটে আর নেই। একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাট্রিকের রেকর্ড আছে কেবল সোহাগ গাজীর। ২০১৪ সালে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগে দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর আর নিয়মিত হতে পারেন নি জাতীয় দলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে ফিরতে পারছেন না তিনি।

এবার মুঠোফোনে পাওয়া গেল সোহাগ গাজীকে। হলো অনেক আলোচনা। নিউজ ক্রিকেটকে জানিয়েছেন অনেক কিছুই।

পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।

নিউজক্রিকেটঃ ক্রিকেটে হাতেখড়ি কিভাবে হয়েছিলো?

সোহাগঃ আমি ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলতাম তবে সেটা টেনিস বলে। আমার বড় ভাই ক্রিকেট খেলতো এবং ক্রিকেটটাকে খুব পছন্দ করতো। আমরা তখন খুলনাতে ছিলাম। সেই সময়টাতে খুলনায় লোকাল একটা টুর্নামেন্টের জন্য বাছাই হয়। সে বাছাইয়ে আমি গেলাম এবং ভালো করায় সুযোগ পেয়ে যাই। তারপর চট্টগ্রামে খেলতে চাই। চট্টগ্রাম দলে তামিম ভাই ছিলো (তামিম ইকবাল)। আর আমি তখন ওপেনার ব্যাটসম্যান এবং পেস বোলার ছিলাম। সে ম্যাচে তামিম ভাই আমাকে ছয় মারছিলো আর আমার তখন খুব খারাপ লাগে। এরপর থেকেই পেস বোলিং ছেড়ে দেই। তারপর স্পিন বোলিং শুরু করি। এভাবেই ভালো আর খারাপ মিলিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে থাকি। অনেকগুলো ম্যাচ মিস করেছি ইনজুরির কারণে। আসলে অনেক কষ্ট করে তারপরই জাতীয় দলে সুযোগ পাই।

নিউজক্রিকেটঃ জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে ভালো করলেন। কিছুদিন নিয়মিত ছিলেন তারপর অফ ফর্মের জন্য বাদ পড়লেন। এই ব্যাপারটা একজন ক্রিকেটার হিসেবে কিভাবে দেখেন?

সোহাগঃ আমার ব্যাপার যদি বলি তাহলে আমি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি শুধু পারফর্ম করে না বরং সেরাটা দিয়ে পারফর্ম করেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেমন হ্যাট্রিক আছে আমার তেমনি ঘরোয়া ক্রিকেটেও আমার হ্যাট্রিক আছে। খুলনায় নির্বাচকরা দেখতে গিয়েছিলো এনামুল হক বিজয়কে সেখানে গিয়ে আমার খেলাটা দেখে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তখনকার সময়ে বাংলাদেশ দলে একটা অফ স্পিনারের প্রয়োজন ছিলো সেজন্যই থেকেই আমাকে দলে নেয়। তারপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার সময়ে অধিনায়ক ছিলো মুশফিক ভাই (মুশফিকুর রহিম)। একটা বড় ব্যাপার হলো সে সময়টাতে আমি নতুন একটা প্লেয়ার সে অবস্থায় দলের সবাই আমাকে খুব সাহায্য করেছে। আসলে আমি দল থেকে বাদ পড়ি পারফর্মের জন্য না, বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সময় হুট করে একটা ঘটনা ঘটে যার জন্য আমি বাদ পড়ি। বোলিং অ্যাকশন শুধরে ক্রিকেটে ফেরার পরে আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টানা তিনটি সেঞ্চুরি ও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিলাম। তবুও আমাকে টেস্ট সিরিজে নেয়া হয়নি। কারণ হাথুরুসিংহের সাথে আমার সম্পর্কটা তেমন একটা ছিলো না। তখন দলে না নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয় আমি অনুশীলনে অমনোযোগী। আসলে এগুলো ভিত্তিহীন। আমি মনে করি কোন ক্রিকেটারকেই হুট করে সবকিছুর বাইরে ফেলে দেয়া ঠিক না। কারণ একজন ক্রিকেটারের রুটিরুজির উৎস ক্রিকেট। কাজেই এ ব্যাপারটা যেন না হয় এটাই চাওয়া আমার।

নিউজক্রিকেটঃ লম্বা সময় ধরে দলের বাইরে। ফেরার জন্য কি করা উচিত?

সোহাগঃ আসলে ভাই আমি বলবো জাতীয় দলে ফিরতে হলে পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই। হয়তো অনেক সময় ভালো করি। তবে ভালো করেই দলে ফিরতে হবে। আর জাতীয় দলে ফেরার জন্য বয়সের চেয়ে পারফরম্যান্সে গুরুত্ব দেয়া উচিত অবশ্যই। আমি মনে করি বয়সের থেকে পারফরম্যান্সকে এগিয়ে রাখতে হবে। আর ফিটনেসের ব্যাপারে বলবো যদি পারফর্ম করি তবে ফিটনেস এমনিতেই ভালো থাকবে। কারণ পারফর্মের জন্য ফিটনেস ধরে রাখতে হবে।

নিউজক্রিকেটঃ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? কিভাবে এগোচ্ছেন?

সোহাগঃ আমার চিন্তাচেতনা সবকিছুতেই তো ক্রিকেট। ক্রিকেট নিয়েই থাকতে চাই। আর অবশ্যই জাতীয় দলে ফেরার চেষ্টা আমার। প্রিমিয়ার লিগে গত সিজনেরও আমি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলাম। ব্যাট হাতেও ৫-৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৪০০ এর মত রান করেছি। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, করে যাবো। সুযোগ তো পেতে হবে। সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণ করবো।

নিউজক্রিকেটঃ জাতীয় দলে পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছিলেন কি?

সোহাগঃ আসলে একটা প্লেয়ারকে বুঝতে হবে, সময় দিতে হবে। সাকিব ভাই কিন্তু একদিনে বিশ্ব সেরা হয়নি। পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে প্রমাণ করার এরপরই সবাই বুঝতে পেরেছি উনি কি করতে পারবে। এজন্য আমি বলবো একজন ক্রিকেটারকে সুযোগ দিতে হবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে যখন অভিজ্ঞ একটা ক্রিকেটার নিয়মিত পারফর্ম করবে তখন তাকে প্রমাণের জন্য পুনরায় সুযোগ দিতে হবে।

নিউজক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

সোহাগঃ আপনাকেও ধন্যবাদ এবং নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের শুভেচ্ছা।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »