সুদিন কাছে এসো ভালবাসি একসাথে সব কিছুই!

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

হালকা পাতলা গড়নের ওইটুকুন ছেলের কাঁধে চড়ে বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাটা অন্যায়, ভারী অন্যায়। এই ছোট কাঁধে পাহাড়সমান প্রত্যাশার চাপ নিয়ে প্রতিদিন কেউ জ্বলে উঠবে এটা স্বপ্ন! প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারাটা ব্যর্থতা না, বরং পুরো বাংলাদেশ আবারো তার উপরে নির্ভর হওয়াটা ভীষণ লজ্জার ব্যাপার। নিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে বুনো সাহস আর উদ্দামতায় খেললেন ২৬ বলে ৫২ রানের টর্নেডো ইনিংস, বাংলাদেশ পেল ৩ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয়। টানা ৬ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ হারার পর এই জয়টা প্রয়োজন ছিল, ঘুরে দাঁড়াবার প্রত্যয়ের জন্য তো অবশ্যই খুব প্রয়োজন।

এক ধাপ এগিয়ে কাল আফিফ ক্রিজে আসলেন সাত নম্বরে। তখনো প্রয়োজন ৪০ বলে ৭৫ রান। আফিফকে ক্রিজে দেখে ভক্তদের মত সাব্বির রহমানও হয়তো স্বস্তি পেয়েছেন। না হলে কেনই বা পরের ওভারে মুজিবের বলে এভাবে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরবেন। যেন আমার দায়িত্বটা তো শেষ। ম্যাচ জেতানোর জন্য আমাদের আফিফ আছে!

আগের বারের দৃশ্যপট আর এবারের দৃশ্যপটে ভিন্নতা নেই খুব একটা। আগের ম্যাচে ১৮ ওভারে ১৪৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৬০ রানে ৬ উইকেট আর কাল ২০ ওভারে ১৬৫ রানের টার্গেটে ৯৫ রানে ৬ উইকেট। আগেরবার পেরেছিলেন বলে জিতেছিল বাংলাদেশ, এবার পারেন নি তাই হেরেছে বাংলাদেশ। সমীকরণটা আসলেই এরকম! প্রতি ম্যাচে আফিফ মহানায়ক হয়ে ম্যাচ জেতাবে এটা চিন্তা করাও পাপ।

ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই লিটন কেন ওভাবে আকাশে বল পাঠাতে চেয়েছিলেন জানা নেই। কিপিংয়ের প্রায়শ্চিত্ত করতে ওপেনিংয়ে মুশফিককে দেখে মনে হল এবার আর প্রথমেই আমরা ব্যাকফুটে চলে যাবো না। দায়িত্ব নিয়ে খেলতেই ব্যাটিং অর্ডারে এমন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত নিজের তৃতীয় বলেই কেন অতি চালাকির শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিলেন এমনটা জানা নেই স্টেডিয়াম ভর্তি টাইগার ভক্তদের, জানা নেই টিভির সামনে বসে থাকা লক্ষ জোড়া চোখের। দলের অধিনায়কের টাইমিংয়ে গড়বড়ই আসলে বলে দেয় দলের অবস্থাটা কেমন। মুজিবকে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল মিরপুরে সেখানে আশার প্রদীপ হয়ে প্রতিদিন আফিফের জ্বলে ওঠাটা বড্ড বেমানান। ২০১৫ সালের সৌম্য আর এখনের সৌম্য যেন দুটো আলাদা মানুষ। আগের সৌম্যটা একটা স্বপ্ন, আর এখনের সৌম্য ঠিক যেন বাস্তবতার মতই কঠোর, কঠিন।

মাহমুদউল্লাহ একটা সময় স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু একবার ঘুম ভেঙে গেলে যেমন পুরনো স্বপ্নে ফেরা যায় না তেমনই নাইবের স্লোয়ারের ফাঁদে পা দিয়ে গোটা বাংলাদেশের ঘুম ভাঙিয়ে দিলেন। লং অফ বাউন্ডারিতে নাজিবুল্লাহ জাদরান যখন আফিফের ক্যাচ মুঠোবন্দি করলেন মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট তখন নীরব, নিভৃত।

দলের এমন অবস্থা কতটা পীড়া দিচ্ছে তা মুস্তাফিজের ব্যাটিং দেখলেই বুঝা যায়। শেষ উইকেটে ব্যাট করতে নেমে হারের ব্যবধান কমিয়ে আনার চেষ্টা। পুরো ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটাও এসেছে তার ব্যাট থেকেই।

ম্যাচ শেষে অধিনায়কের কণ্ঠে নিজেদের ভুলগুলো শোনা যায় ঠিকই। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে এই ভুলগুলো ঠিক কবে সংশোধন হবে জানা নেই। আফগানদের বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে মনে হয় আমাদের মত দলের বিপক্ষে এমন হেসে খেলে জয়টাই তাদের প্রাপ্য।

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে যে কালো মেঘের আগমন ঘটেছিল সেটা এখনো কাটে নি। এখনো দেখা মিলে নি সূর্যি মামার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ে সারাদিন বৃষ্টির পরে শেষ বিকেলে একটু রোদ বাড়ির উঠোনে আশার আলো হয়ে এসেছিল কিন্তু পরের দিন ভোর বেলা থেকে আবারো সেই ঝুম বৃষ্টি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটু একটু করে গ্রাস করার চেষ্টা চালাচ্ছে। গোটা বাংলাদেশ অপেক্ষায় আছে সুদিনের। এমন বিদঘুটে বিষণ্ণতা কাটিয়ে সুদিনের স্বপ্ন দেখছে সবাই।

‘সুদিন কাছে এসো ভালোবাসি একসাথে সব কিছুই!’ মহীনের ঘোড়াগুলির গানের একটি লাইনই যেন আমাদের ক্রিকেটের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »