নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
ডাউন দ্য উইকেটে এসে ব্যাটের আলতো ছোঁয়ায় বলটাকে মাঠ পার করা দৃশ্য ক্রিকেটে নতুন না। অহরহ ঘটছে। কিন্তু ছয় আউন্সের চর্মগোলটাকে কত সুন্দর আর নিখুঁত ভাবে বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারিতে পরিণত করা যায় সেটা সারাহ টেলরকে না দেখলে বুঝা অসম্ভব। নাম সারাহ জেনি টেলর। তবে বিশ্ব ক্রিকেটে সারাহ টেলর নামেই পরিচিত। সোনালী চুলের এই মানবী যেমন রূপে বিশ্বসেরা তেমনি বিশ্বসেরা গ্লাভস হাতে উইকেটে পেছনেও। ইংলিশ স্পিনার হ্যাজেল বল করলেন মিডিয়া প্রান্ত থেকে। ডানহাতি ব্যাটার হওয়া সত্ত্বেও উইকেটকিপারকে বিভ্রান্ত করে বলটাকে পেছন দিয়ে পার করতে চেয়েছিলেন জডি ফিল্ডস। কিন্তু ফিল্ডস নিজেও জানতেন না সারাহ টেলরের রূপের ঝলকের চেয়ে বেশি ঝলক জমে আছে কিপিং গ্লাভসে। আর এমন ঘটনাই নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে ফ্রেমে জায়গা করে নেয়া ‘গোল্ডেন মোমেন্ট’। বাজপাখির মত ডানা মেলে গ্লাভ হাতে আলো ছড়িয়েছেন আরো কয়েকবার। আর প্রতিবারই তার মুখের বিশ্বজয়ী হাসি আর উদযাপন ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।
হুট করেই বাইশ গজের সবুজ গালিচা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সারাহ। আর এমন খবরে বিষাদগ্রস্ত হাজারো ক্রিকেটপ্রেমী। মাত্র ৩০ বছর বয়সে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরো কয়েকবার অবশ্যই ভাবা উচিত ছিলো তার। দীর্ঘ ১৩ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি যখন টানলেন তখন বলতেই হয় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরাও একটু স্বস্তিবোধ করবেন ডাউন দ্য উইকেটে যেয়ে বড় শট খেলতে।
ইংল্যান্ডের জার্সিতে সারাহ টেলরের অভিষেক হয় ২০০৬ সালে আর তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১৭। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ম্যাচ খেলেছেন ২২৬ টি। মোট রান ৬৫৩৩। আর সারাহ ইংল্যান্ডের প্রমিলা দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ডিসমিসাল ২৩২ টি। নিজের রেকর্ড কর্নারে আছে তিনবার টি-টোয়েন্টি বর্ষসেরার পুরস্কার। ইংল্যান্ডের হয়ে জিতেছেন ২০০৯ ও ২০১৭ বিশ্বকাপ।
এত এত সাফল্য যখন তার হাতের মুঠোয় তবুও সারাহ ভুগছেন বিষণ্ণতায়। আর এ কারণেই বাইশ গজের সবুজ গালিচাটা ঠিক উপভোগ করতে পারছিলেন না। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন সারাহ। এর পরে আবার ক্রিকেটে ফিরলেও মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। তবে ক্রিকেটের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র ক্রিকেটের বাইরে ব্যক্তিগত জীবনেও ঠিক কতটা গুছানো আর প্রতিশ্রুতিশীল সেটা তার যাবার বেলার বক্তব্য শুনলেই বুঝা সম্ভব। নিজের দেশের ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলেন নি সারাহ জেনি টেলর।
‘ক্রিকেটকে বিদায় বলার এটাই সঠিক সময়। তবে সিদ্ধান্তটা খুব কঠিন। তবে আগামী দিনগুলোর কথা চিন্তা করলে আমার জীবন ও শরীরের জন্য এটা অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত। ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করতে পারবো না আমার সাবেক ও বর্তমান সতীর্থদের, ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করতে পারবো না ইসিবিকে। ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে খেলাটা স্বপ্নের মত। আমার পুরো ক্যারিয়ারে আছে অনেক অনেক দারুণ মুহূর্ত। অভিষেক ২০০৬ সালে, অ্যাশেজ জয়, লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনাল সহ আরো অসংখ্য মুহূর্ত আছে আমার। আমার এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বিশ্বজুড়ে পেয়েছি অনেক বন্ধুকে, তাদেরকেও ধন্যবাদ।’
সারাহ টেলরের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা নেই কারো। কারণ ব্যক্তিগত জীবনের গল্প এড়িয়ে তিনি কেবল ব্যস্ত ছিলেন ক্রিকেটের সৌন্দর্য আরো রাঙিয়ে দিতে। ৩০ বছর বয়সী সারাহ এখনো অবিবাহিত। তবে তার একটি টুইটার পোস্টকে ঘিরে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু সেটার রহস্য আজও ভেদ করতে পারেন নি কেউ।
গত জুলাই মাসে টনটনে অ্যাশেজ টেস্টটা ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে সারাহ’র শেষ ম্যাচ ছিলো। শেষ ম্যাচটা পারেন নি রাঙাতে। তার ব্যাট থেকে এসেছিলো মাত্র ৫ রান। তবে তার ক্যারিয়ারে এত এত সাফল্য আছে যে শেষটা রাঙিয়ে দিতে বড় স্কোরের আর প্রয়োজন নেই। সোনালী চুল, মায়বী চোখ ও মিষ্টি হাসির সারাহ টেলর ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও তার স্মৃতি রয়ে যাবে বাইশ গজের সবুজ গালিচায়। ক্রিকেটের সৌন্দর্য্যে কিংবা অজস্র তরুণের মনে সারাহ থাকবেন সুন্দরের পূজারী হয়ে। ক্রিকেট যদি হয় বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চ, সারাহ টেলর তবে মিস ওয়ার্ল্ড।