নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
কোটি প্রাণের স্পন্দনে, রুদ্ধ শ্বাসে একটি নাম- সাকিব আল হাসান। কোটি ভক্তের নয়নের মনি। খেলার মাঠে চিৎকারে উচ্চারিত নাম সাকিব। ভালোবাসার নাম সাকিব। বাংলাদেশ ক্রিকেটে আস্থার অনন্য একটি নাম সাকিব। ভরসার একটি নাম সাকিব।
মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। সাকিবের বোলিং আর ব্যাটিং দেখতাম আর চিৎকারে কম্পিত করতাম। বাংলাদেশ ক্রিকেট বলতেই বুঝতাম সাকিব আল হাসান আর পঞ্চপাণ্ডবের বাকিদের। বিশাল একটা স্টিকার ছিলো বাসায় সাকিবের। চিপসের সাথে প্লেয়ারদের ছবিওয়ালা কার্ড দিতো। চুইংগামের স্টিকারেও। সব জায়গায় খুঁজতাম এদের। সাকিব কে পাইলেতো কথাই নাই। আলমারিতে, বইয়ের ঢালে, খাতার ঢালে সবখানে লাগাতাম।
তখন ক্রিকেট বুঝতাম কিনা সন্দেহ ঠিকমতো। অবাক হতাম সব বোলিং স্টাইল,ব্যাটিং স্টাইল দেখলে। মাঝে মাঝে নানুর বাড়ি বেড়াতে গেলে চায়ের দোকানে যেতাম ভোরবেলা রুটি-পরোটা নিয়ে আসতে। দেখতাম গ্রামের নওজোয়ান,বৃদ্ধারা টিভি সেটের সামনে বসে আছে। সবার দৃষ্টি ক্রিকেট মাঠে লড়াকু ঐ সাকিবের দিকে। বলতো ছেলেটা একদিন বহুদূর যাবে। প্রশান্তি লাগে দেখলে।
মজার ব্যাপার হলো এ-ই ছেলেটা এমন একটা সময়ে এলো যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট কোন চমৎকারের অপেক্ষায় ছিলো। আর ছেলেটা একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছেই। মাঝে গেছে কত উত্থান – পতন। ছেলেটা আবার ফিরে এসেছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে। সাহসী, প্রত্যয়ী ছেলেটাকে দেখে বুক ফুলিয়ে বলতে পারি ‘আমাদের একটা সাকিব আছে’। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে মাথা উঁচু করা ছেলেটা আসলেই অসাধারণ। যতক্ষণ থাকবে দিয়েই যাবে শুধু।
আসলে ক্রিকেট টা এমনই। এখানে প্রতিনিধিত্ব করা প্রতিটা প্লেয়ারকেই মনে করি সর্বোচ্চ ডেডিকেশন দিয়ে খেলে এরা। বাকিটা ভাগ্যের হাতে। অফফর্ম থাকেই। এটা খেলারই অংশ। একটা সময় সাকিবের ও ছিলো। আবার দুর্দান্তভাবে ফিরে এসেছে। সবার এমন সময় আসে যায়। তবে সাকিবের ক্ষেত্রে যেটা হয়, দুর্ভাগ্য ভর করে বেশি৷ ছেলেটার ডেডিকেশন লেভেল হাই দেশের প্রতি। কতোটা ভালোবাসা থাকলে নিজ স্বার্থ না ভেবে সর্বোচ্চ ডেডিকেশন দেওয়া যায় দেশের প্রতি।
কই ছিলাম,কই যেন হারিয়ে গেলাম আবার? যখন স্কুলে যেতাম শুনতাম রাস্তায় বাচ্চারা গাইছে ‘বাংলাদেশের জান সাকিব আল হাসান’। চিৎকার করে গাইতো সবাই। প্রশান্তি কাজ করতো। মানে বাসায় ছোট বাচ্চারাও গাইতো। অথচ ওরা তখনো জানতোও না যে সাকিব টা কে? কি তার পরিচয়? ক্রিকেট ই বা কি? এমনই ভালোবাসার প্রতীক সাকিব। ক্রিকেটকে ভালোবাসতে শিখায়নি ছেলেটা।
গ্রাম-গঞ্জে সচরাচর বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করুন ক্রিকেট কি? প্রিয় কে? কার মতো হতে চাও? একটাই উত্তর দেয় অনেকেই – আমি ‘সাকিব আল হাসান হবো’। ‘আমি ক্রিকেটার হবো। সাকিবের মতো বড় ক্রিকেটার।’ বইয়ের কাজে থাকতো সাকিবের ছবি৷ এলবামে নিজের ছবির চাইতে সাকিবের ছবি সোভা পেতো বেশি৷ স্কুলের দৈনিক পত্রিকাগুলো থেকে সকালে কেটে নিতাম চুরি করে। এ-ই একটা জিনিসই চুরির স্বভাব ছিলো আমার। বান্ধবীদের ক্রিকেট নিয়ে জিজ্ঞেস করলে আর কিছু না বুঝুক একটা নাম বলতো। সাকিব।।।। সাকিব কাল ভালো খেলছে। সাকিব ভালো খেলে। আর কারো খবর না নিক সাকিব কেমন খেলছে তার খবর সবাই রাখতো।
সাকিব তোমার যদি লক্ষ হেটার্স থাকে তবে আছে কোটি সমর্থক। তুমি সবার প্রাণে বাস করো। সবার স্পন্দনে বাস করো। বাংলাদেশ ক্রিকেট বলতে তোমাকে বুঝি৷ ২২গজের বীর বলতে তোমাকে বুঝি৷ আজ থেকে ১০বছর পরও বলবো আমাদের এক সাকিব ছিলো। আমাদের এক ময়না ছিলো। আমাদের একটা বাজপাখি ছিলো। যার ছোবলে বড় বড় খেলোয়াড় পরাস্ত হতো। জানি ফিরবে আবার। এ-ই প্রত্যাশাই আছে। তখন আবারো চিৎকারে থাকবে একটি নাম। সাকিব….সাকিব…..সাকিব…..।
মন খারাপ ভীষণ। কালো মেঘ সরছেই নাহ মনের আকাশ থেকে৷ মানতে পারছি না ২২গজে ১টা বছর মানুষটাকে দেখবো নাহ। বার বার মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্ন এ-ই বুঝি শেষ হলো। এ-ই বুঝি আবারো দেখবো তোমায় লাল-সাদা বল হাতে ২২গজে দৌড়াচ্ছো। প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছো দম্ভের সাথে। গ্যালারী হতে চিৎকারে উচ্ছ্বাস ফেটে পড়ছে একটি নামের স্লোগানে – ‘সাকিব’…… ‘সাকিব’…….. ‘সাকিব’। ফিরে আসবে আবার সাকিব আমাদের মাঝে আরো শক্তিশালীরূপে। আবারো গলা ফাটাবো, পরীক্ষার আগের রাতে টিভির দ্বারে বসবো। বলবো পরীক্ষা আবার দেওয়া যায়, এ-ই প্রাণবন্ত মুহূর্ত বার বার আসবেনা।
ভালোবাসা নিয়ো প্রিয়। কোটি ভক্তের আজ প্রাণের দাবী একটাই। সাকিবকে ২২গজে দেখতে চাই। সাকিব ছাড়া ক্রিকেট দেখার আর কোন ইচ্ছে নাই। সাকিব তুমি আসবে আবার, দেখবে সারা বিশ্ব। চমকে পর চমক দিবে, মাতাবে বিশ্ব মঞ্চ। অপেক্ষায় রইলাম আবার সেই দিনের। ভালোবাসার নাম সাকিব। কোটি সমর্থকদের প্রাণ সাকিব।