সাকিবকে দেখেই অনুপ্রাণিত আকবর!

দুর্জয় দাশ গুপ্ত »

বয়স কেবল ১৮। আর এখনই নামের পাশে আছে একটি বিশ্বকাপ। হোক না সেটা অনূর্ধ্ব-১৯ তবুও তো বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক। স্মৃতি হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালের জার্সি আর ব্যাটিং গ্লাভস আকবরের সবচেয়ে প্রিয় এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই ক্রান্তিকালে নিজের প্রিয় জিনিসগুলো নিলামে তুলছেন অসহায় মানুষদের কথা চিন্তা করে। বিশ্বকাপ ফাইনালে যেভাবে বিপর্যয়ে হাল ধরেছিলেন সেভাবেই দেশের দুঃসময়েও নেতার মতো এগিয়ে এসেছেন আকবর দ্য গ্রেট।

কিছুদিন আগে নিজের প্রিয় বিশ্বকাপ মাতানো ব্যাট বিক্রি করেছেন সাকিব আল হাসান। প্রশ্ন আসতেই পারে সাকিবকে দেখেই কি এমন ভাবনা মাথায় এসেছে আকবরের। তারও সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘সাকিব ভাইকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছি।’

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর এই সময়টাতে পুরো দেশ অঘোষিত লকডাউনে। ক্রিকেটাররা সময় কাটাচ্ছেন ঘরে বসে। এত লম্বা সময় ধরে ক্রিকেটারদের ঘরে বসে থাকার মত ঘটনা এবারই প্রথম। অবসরে কি করছেন ক্রিকেটাররা এমনটাই জানার চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের প্রতিবেদক দুর্জয় দাশ গুপ্ত। এবারের পর্বে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক আকবর আলীর কাছে শুনেছেন বিশ্বকাপের অজানা কিছু গল্প।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ কেমন আছেন? কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো কিভাবে কাটছে?

আকবর আলীঃ আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি এখন পর্যন্ত। ঘরে বসে কোন নিয়মের মধ্যে সময় কাটছে না। যেহেতু রমজান চলে এসেছে তাই নামাজ পড়া হয় সন্ধ্যার পর। আর বিকেলে তিনটার পরে আমাদের ফিজিও লাইভে এসে কিছু কাজ করাচ্ছেন। তাই এটাই করে যাচ্ছি।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ নিজেকে ফিট রাখতে কি করছেন এই সময়টাতে?

আকবর আলীঃ আমার বাসায় সামান্য রানিংয়ের জায়গা রয়েছে। তাই এটা কাজে লাগাচ্ছি। আর যে অনুশীলনগুলো বাসায় করা সম্ভব সেগুলো করছি। এখন তো বাইরে গিয়ে জিম করা সম্ভব না। তাই বাসায় বসেই যতটুকু করা যায় করে যাচ্ছি।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ হোক সেটা অনূর্ধ্ব-১৯ তবুও বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক আপনি। এ ব্যাপারটা কতটা উপভোগ করেন?

আকবর আলীঃ সত্যি কথা বলতে আমি এভাবে কখনো চিন্তা করিনি। তবে ঠিক দক্ষিণ আফ্রিকায় একটা পরিকল্পনা নিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। চ্যাম্পিয়ন হবো এমন ভাবনা ছিলো। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি এটাতেই সন্তুষ্টি মিলছে। দেড় বছর ধরে যে কষ্ট করে এসেছি সেটার ফলাফল পেয়েছি বলেই এটার জন্য ভালো লাগছে।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ বিশ্বকাপের এমন কোন বিশেষ মুহূর্ত যেটা সবসময় মনে থাকবে?

আকবর আলীঃ অসাধারণ একটা জার্নি ছিলো। যদিওবা এখানে ভালো-খারাপ দুটোই ছিলো। তবে একটা ব্যাপার হলো যদি ম্যাচে খারাপ কিছু হতো তবে সেটা মাঠে বসে আলোচনা করে সেখানেই মিটিয়ে ফেলতাম। এই ইস্যু নিয়ে পরবর্তীতে আমাদের আর কোন কথা হতো না। কেউ খারাপ করলে সেটা তাকে বারবার বলা বা মনে করিয়ে দেওয়ার কোন ব্যাপার ছিলো না। ম্যাচ শেষে ১০ মিনিটের মত সময় ধরে আমাদের ম্যানেজমেন্ট কিংবা আমরা নিজেরাও আলোচনা করতাম। তবে বড় কথা হলো সেটা মাঠেই শেষ হয়ে যেতো। আমরা কখনো মাঠের জিনিস মাঠের বাইরে নিয়ে আসিনি। আর আমার কাছে স্মরণীয় মুহূর্ত হচ্ছে আমরা ট্রফি নিয়ে যখন উদযাপন করছি সেটা মুহূর্তটা। সত্যি কথা বলতে আমরা নিজেরাও তখন বুঝিনি কি করেছি সেই সময়টায়। এখন মাঝেমধ্যে এই উদযাপনের ভিডিও দেখলে হাসি পায়।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দেখেছি বাংলাদেশ দল হিসেবে পারফর্ম করেছে। কোন প্লেয়ার যে বিশেষ কিছু করে ফেলেছে এমন না। টিমওয়ার্ক আমরা লক্ষ্য করেছি। এটার পেছনে মূল পরিকল্পনাটা কি ছিলো? অথবা কোচিং স্টাফ থেকে আপনাদের উদ্দেশ্যে কোন বিশেষ বার্তা ছিলো কি না?

আকবর আলীঃ আমরা একজন আরেকজন খুব সুন্দরভাবে ব্যাকআপ করেছি। যেমন দেখা গেল ওপেনাররা রান করতে পারেনি তখন ৩ বা ৪ নম্বরে যারা ব্যাট করতে নেমেছে তারা বিপর্যয় কাটিয়ে দিয়েছে। টিমের উপর প্রেশারটা পড়তে দেয়নি। আবার কিছু বড় ম্যাচে আমাদের টপ-অর্ডারই মূল কাজ করে ফেলেছে। যেমন সেমিফাইনাল ম্যাচটা দেখেন। ওরাই আসল কাজ করেছে। আসলে একটা ব্যাটসম্যান প্রতিদিন রান করবে না। আবার একটা বোলার সবসময় উইকেটও নিতে পারবে না। আমরা একজন আরেকজনকে খুব সুন্দর করে ব্যাকআপ করেছি আর টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে সবসময় এটাই বলা হয়েছে আমাদের। বড় কথা হলো মাঠ এবং মাঠের বাইরে আমরা একজন আরেকজনকে খুব সুন্দর করে সাপোর্ট করেছি।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপ ফাইনালে জিততে জিততে হেরে যাওয়া। বিশ্বকাপ ফাইনালেও মাঝারি লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভালো একটা শুরুর পরে দ্রুত উইকেট হারিয়ে আবার ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। তখন গুরু দায়িত্বটা আপনি পালন করেছেন। ক্রিজে থাকা অবস্থায় আপনার নিজের পরিকল্পনা কি ছিলো?

আকবর আলীঃ আমরা আসলে নিজেদের মধ্যে এসব ব্যাপারে খুব বেশি কথা বলতাম না। আমাদের কোচিং স্টাফরা বিশ্বাস করেছিলো যারা মাঠে আছে তারা পারবে বা তাদের ক্ষমতা আছে ম্যাচ বের করে আনার। আমার মাথায় একটা জিনিসই ছিলো যেহেতু হাতে অনেক বল আছে তাই ক্রিজে থিতু হতে হবে। কোনভাবেই উইকেট দেওয়া যাবে না। দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেলার পরে আমরা ১০ ওভারের একটা পার্টনারশিপের প্ল্যান করছিলাম।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ জাতীয় দলের জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করছেন?

আকবর আলীঃ ভাই আসলে আমি মনে করি এটা অনেক দূরের পথ। এটা কেবল মুখ দিয়ে বললেই হবে না। অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ নিজের ক্রিকেট স্মারক নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। সিনিয়রদের দেখে কি অনুপ্রাণিত হয়েছেন?

আকবর আলীঃ যখন সাকিব ভাই শুরু করলো তখন আমিও প্ল্যান করলাম যদি এটা থেকে কিছু মানুষের সাহায্য হয়। তারপর দেখলাম অনেকেই করতেছে তখন মনে হলো আমিও করতে পারি। সেই ভাবনা থেকেই আসলে করা।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ যদি জিজ্ঞেস করি আপনার প্রিয় ক্রিকেটারের কথা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে তবে কার কথা বলবেন?

আকবর আলীঃ বাংলাদেশে সাকিব আল হাসান। আর দেশের বাইরে এবি ডি ভিলিয়ার্স।

নিউজক্রিকেট২৪ঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আকবর আলীঃ আপনাকে এবং নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডট কমের সকল পাঠককে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »