শুভ জন্মদিন কাটার মাস্টার

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পেস আক্রমণের এক ভরসার নাম মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশ দলের এক অনন্য প্রতিভার নাম মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশ দলকে একটি কথা সর্বত্র প্রচলিত আছে সবসময় তা হলো বাংলাদেশ দলের পেস অ্যাটাক বিশ্বমানের নয়। বাংলাদেশ দলের পেস আক্রমণে তেমন ধার নেই। বাংলাদেশ দলে এমন কোনো পেসার নেই যারা একটি ম্যাচের প্রেক্ষাপট একাই বদলে দিতে পারে। এমন পেসারের অভাব অনেকদিন ধরেই অনুভব করছিলো বাংলাদেশ দল। ঠিক এমন সময় ধুমকেতুর মতো ক্রিকেটে আবির্ভাব হলো কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের। যাকে কিনা কেউই চিনতো না। কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন। নিজের জাত চিনিয়েছেন। সর্বশেষ আজ এই কাটার মাস্টারের ২৪তম জন্মদিন। আজকে মোস্তাফিজুর রহমানের জন্মদিনে থাকছে তাকে নিয়ে তার যাবতীয় জানা অজানা তথ্যবহুল একটি ফিচার।

মোস্তাফিজুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। তার জন্মস্থান খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায় কালিগঞ্জ থানার তেঁতুলিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল কাশেম গাজী এবং তার মায়ের নাম মাহমুদা খাতুন। আবুল কাশেম গাজী ও মাহমুদা খাতুন দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজুর রহমানের ছোটবেলা কেটেছে তার গ্রাম তেঁতুলিয়াতে। তার বাবা মার স্বপ্ন ছিলো ছেলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান ছিলো অন্যরকম। তিনি ক্রিকেটকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। সারাদিন তার মাঠেই সময় কাটতো। পড়াশোনায় যার মন বসতে চাইতো না। হয়তো নিয়তি চাইতো তাকে বিশ্বসেরা করার। তার পড়াশোনা কেটেছে গ্রামের বরেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

মোস্তাফিজুর রহমানকে আমরা দেখি বোলার হিসেবে কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান ছোট বেলায় বোলিং এর চেয়ে ব্যাটিংটা বেশি পছন্দ করতেন। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বোলিং প্রতিভা বিকশিত হতে থাকে। পরিবারের অনেকেই মোস্তাফিজুর রহমানের ক্রিকেট পাগলামো খারাপ দৃষ্টিতে দেখলেও একজন ছিলেন যে কিনা তার এ পাগলামি সিরিয়াস ভাবে নিয়েছিলেন। আর তার কারণেই মোস্তাফিজুর রহমান আজকের এই অবস্থানে। সে হচ্ছে মোস্তাফিজুর রহমানের পেজ ভাই মোখলেছুর রহমান। যার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। তিনি নিজে ক্রিকেটার হতে না পারলেও তার ছোট ভাইকে ক্রিকেটার করিয়ে স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন। আর তাইতো প্রতিদিন ভোরে বাড়ি থেকে ৪০-৪৫ কি.মি. দূরে মটর সাইকেল দিয়ে প্র্যাকটিসে নিয়ে যেতেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানকে। অন্য কারো চোখে না হলেও মোস্তাফিজুর রহমানের সেজ ভাই মোখলেছুর রহমানের চোখে ধরা পড়েছিলো মোস্তাফিজের প্রতিভা। মোস্তাফিজ সকালে বাইকের পেছনে বসেই যাত্রা পথে খাবার খেয়ে প্র্যাকটিসে গিয়েছেন। মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিদিন ঘুমানোর আগে বল হাতে নিয়ে ঘুমাতেন। এতেই বোঝা যায় ক্রিকেটের প্রতি তার ডেডিকেশন লেবেল।

মোস্তাফিজুর রহমানের সাতক্ষীরায় কোচ ছিলেন আলতাফ হোসেন। আলতাফ হোসেনের পরিচর্যায় মোস্তাফিজুর রহমান এগিয়ে যেতে থাকেন। ভাল পারফরমেন্সের পুরষ্কার স্বরূপ মোস্তাফিজুর রহমান খুলনা বিভাগীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন। তারপর ট্রায়াল দিতে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আসেন মোস্তাফিজ। তার বোলিং এর প্রতিভা নজরে পড়ে নির্বাচকদের চোখে। আর সুযোগ পান অনুর্ধ্ব-১৯ দলে। সেখানে সাফল্য পেয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজ এক লাফে জাতীয় দলে ঢুকেননি। জাতীয় দলে একবার নেটে বোলিং এর জন্য একজন বাঁহাতি পেসারের খুবই প্রয়োজন পড়ে। এরপর মোস্তাফিজুর রহমানের নেট বোলার হিসেবে ডাক পড়ে। মোস্তাফিজের বোলিং দেখে রীতিমত অবাক হয়ে যান সেসময়ের বাংলাদেশ দলের হেড কোচ চন্ডিকা হাতুরেসিংহে এবং খালেদ মাহমুদ সুজনের। বোলিং প্রতিভায় একসময় সকলের পছন্দের পাত্র হয়ে উঠেন মোস্তাফিজুর। আর নেটে নিয়মিত বোলিং করতে থাকেন এবং নিজেকে জাতীয় দলে খেলার জন্য শান দিতে থাকেন। এবং জাতীয় দলে খেলার জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলে। আর তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে যায় এবং পরেরটা ইতিহাস।

এ পর্যায়ে আমরা মোস্তাফিজুর রহমানের সকল অভিষেক নিয়ে কথা বলবো। ২০১৫ সালের ২৪ শেষ এপ্রিল দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার। সেদিন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার একমাত্র টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলে ডাক পেয়ে একাদশে সুযোগ পেয়ে যান মোস্তাফিজুর রহমান। সমর্থকেরা খেলা শুরুর আগে মানতে পারছিলেন না যে রুবেল বা আর আমিনের মতো খেলোয়াড়কে বসিয়ে কিভাবে একজন লিকলিকে তরুণকে খেলাচ্ছে। তবে সমর্থকদের ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অভিষেকে অতিমানবীয় কিছু করতে না পারলেও তিনি সে ম্যাচে আভাষ দিয়ে রেখেছিলেন যে তিনি কিছু করতেই দলে আস্তে যাচ্ছেন। সেই ম্যাচে ৪ ওভারে বোলিং করে ৫.০০ গড়ে ২০ রান দিয়ে নিয়েছিলেন মহামূল্যবান দুইটি উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমানের বাবা পছন্দের খেলোয়াড় ছিলো শহীদ আফ্রিদি। আর সেই আফ্রিদি শিকার হয়েছিলেন মোস্তাফিজের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি তথা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম শিকার। আর একই ম্যাচে নিয়েছিলেন মোহাম্মদ হাফিজের।
মোস্তাফিজুর রহমানের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অভিষেকের পর বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০১৫ সালের ১৮ই জুন রোজ শনিবার ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ ওয়ানডের প্রথম ওয়ানডেতে অভিষেক হয়ে যায় কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। ভারত সেই ম্যাচ খেলার আগেও জানতো না যে আজ তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। সেই ম্যাচে ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ একাই গুড়িয়ে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। ক্রিকেট ইতিহাসের দশম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে এক ম্যাচে ৫ উইকেট নেবার কৃতিত্ব অর্জন করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপকে রীতিমতো একাই নামিয়েছেন‌ মোস্তাফিজ। এছাড়াও ওয়ানডে অভিষেকে ম্যান অফ দা ম্যাচ হবার কৃতিত্ব অর্জন করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওয়ানডেতে মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম শিকার রোহিত শর্মা।
২১শে জুলাই ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ৭৮ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট ক্যাপ পড়েন মোস্তাফিজ। নিজের প্রথম অভিষেক টেস্টে মোস্তাফিজ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির মতো ভালো খেলেছেন। সেই ম্যাচ বৃষ্টির কারণে মাঠে না গড়ালেও এক ইনিংসে ৩৭ রান দিয়ে ৪টি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আর তিনি তার কাটার বল দ্বারা সকলের কাছে কাটার মাস্টার নামে পরিচিত হয়েছেন।
মোস্তাফিজুর রহমানের সকল অভিষেকে সেরা ক্রিকেটারদের উইকেট তুলে নিয়েছেন তাদের তালিকা দেয়া হলো:

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি: শহীদ আফ্রিদি
আন্তর্জাতিক ওয়ানডে: রোহিত শর্মা
টেস্ট ক্রিকেট: হাশিম আমলা
বিপিএল: ক্রিস গেইল
আইপিএল: এবিডি ভিলিয়ার্স
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: স্টিভ স্মিথ
ওয়ানডে বিশ্বকাপ: ডেভিড মিলার

এ পর্যায়ে আমরা কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা করবো। মোস্তাফিজুর রহমানের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট, লিস্ট এ ক্রিকেট, আইপিএল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সকল পরিসংখ্যান আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে। যেহেতু মোস্তাফিজুর রহমানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে টি-টোয়েন্টি দিয়ে তাই টি-টোয়েন্টি দিয়ে আমরা তার ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করবো। চলুন দেখে নেয়া যাক মোস্তাফিজুর রহমানের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরিসংখ্যান:

মোস্তাফিজুর রহমানের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২৪শে এপ্রিল ২০১৫ সালে। এই ম্যাচটি দিয়ে মোস্তাফিজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ করে। মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের ৪৪ তম বাংলাদেশী টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়। মোস্তাফিজুর রহমান সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২২শে ডিসেম্বর ২০১৮ সালে।মোস্তাফিজ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ৩০টি যার ৩০টি ইনিংসেই বল করেছেন। ওভার- ১৪১.২, রান দিয়েছেন- ৮৪৮, উইকেট নিয়েছেন- ৪৮টি, এক ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগার- ৫/২২, গড়-১৭.৬৬ , ইকোনমি- ৭.৬৭, স্ট্রাইক রেট- ১৩.৮, ৫ উইকেট- একবার।

এবার মোস্তাফিজুর রহমানের ওয়ানডে পরিসংখ্যান দেখে নেয়া যাক। মোস্তাফিজুর রহমানের ওয়ানডে অভিষেক হয় ভারতের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৮ই জুন ২০১৫ সালে। মোস্তাফিজ সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন শ্রীলঙ্কার কলোম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৮শে জুলাই ২০১৯। মোস্তাফিজ বাংলাদেশের ১১৮ তম ওয়ানডে ক্রিকেটার। মোস্তাফিজ ৫৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তার ৫৫টি ইনিংসে বল করেছেন। ওভার- ৪৬৮.৫, রান দিয়েছেন- ২৪৫৮, উইকেট নিয়েছেন- ১০৭টি, সেরা বোলিং ফিগার- ৬/৪৩, গড়- ২২.৯৭, ইকোনমি- ৫.২৪, স্ট্রাইক রেট- ২৬.২, ৫ উইকেট- ৫ বার।

এবার দেখে নেয়া যাক মোস্তাফিজুর রহমানের আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ার। মোস্তাফিজুর রহমানের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ২১শে জুলাই ২০১৫ সালে। আর তিনি সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে ৮ই মার্চ ২০১৯ এ। মোস্তাফিজ ১৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন যার ২১টি ইনিংসে বল করেছেন। ওভার- ৩০১৭.৪, রান- ৯৮৫, উইকেট- ২৮, এক ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগার- ৪/৩৭, এক টেষ্টে সেরা বোলিং ফিগার- ৫/৬৬, গড়- ৩৫.১৭, ইকোনমি- ৩.২০, স্ট্রাইক রেট- ৬৫.৮, ৫ উইকেট- নেই।

এবার মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের ক্যারিয়ার দেখে নেয়া যাক। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের অভিষেক হয় খুলনা বিভাগের হয়ে ঢাক বিভাগের বিপক্ষে ২০১৪ সালের ১৯শে এপ্রিল কক্সবাজারে। মোস্তাফিজ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন ৩০টি যার ৫২টি ইনিংসে বল করেছেন। ওভার- ৬৮৯.৫, রান দিয়েছেন- ১৯৩৩, উইকেট নিয়েছেন- ৭৮, এক ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগার- ৫/২৮, এক ম্যাচে সেরা বোলিং ফিগার- ৬/৩৩, গড়- ২৪.৭৮, ইকোনমি- ২.৮০, স্ট্রাইক রেট- ৫৩.০, ৫ উইকেট- ১ বার।

লিস্ট এ ক্রিকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যারিয়ার। ২৮শে নভেম্বর ২০১৪ যে আবাহনীর হয়ে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে মাঠে নেমে লিস্ট এ ক্রিকেটে নাম লেখান মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজ লিস্ট এ ক্রিকেট খেলেছেন ৬২টি বল করেছেন ৬১টি ইনিংস। ওভার- ৫১৬.৩, রান- ২৬২২, উইকেট- ১২২, সেরা বোলিং ফিগার- ৬/৪৩, গড়- ২১.৪৯, ইকোনমি- ৫.০৭, স্ট্রাইক রেট- ২৫.৪, ৫ উইকেট- ৬ বার।

এবার মোস্তাফিজুর রহমানের আইপিএল এর পরিসংখ্যান দেখে নেয়া যাক। মোস্তাফিজুর রহমানের আইপিএল এ অভিষেক হয় ১২ই এপ্রিল ২০১৬ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে। আর সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে ২০শে মে ২০১৮ সালে। আইপিএলে মোস্তাফিজ ২৪টি ম্যাচ খেলেছেন যার ২৪টি ইনিংসে বল করেছেন। ওভার- ৯১.৬, রান- ৬৮৫, উইকেট- ২৪, সেরা বোলিং ফিগার- ৩/১৬, গড়- ২৮.৫৪, ইকোনমি- ৭.৫১, স্ট্রাইক রেট- ২২.৭৯, ৫ উইকেট- নেই।

মোস্তাফিজুর রহমান আইসিসি কর্তৃক আয়োজিত টুর্ণামেন্ট সবগুলো খেলেছেন। আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ, আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এই টুর্নামেন্টগুলোতে কেমন ছিলেন মোস্তাফিজ দেখে নেয়া যাক এক নজরে। প্রথমে টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু করা যাক।

২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। যেখানে মোস্তাফিজ খেলেছেন ৩টি ম্যাচ যার ৩টি ইনিংসে বল করেছেন। ওভার- ১২ , মেইডেন- ০, রান- ৮৬, উইকেট- ৯, সেরা বোলিং ফিগার- ৫/২২, গড়- ৯.৫৫, ইকোনমি- ৭.১৬, স্ট্রাইক রেট- ৮.০, ৫ উইকেট- ১ বার।

এবার ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পরিসংখ্যান দেখে নেয়া যাক। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ৪ ম্যাচের ৪টি ইনিংসে বোলিং করেছেন। ওভার-২৯, মেইডেন- ০, রান- ১৮৩, উইকেট- ১, সেরা বোলিং ফিগার- ১/৫২, গড়- ১৮৩.০০, ইকোনমি- ৬.৩১, স্ট্রাইক রেট- ১৭৪.০

এবার ২০১৯ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে মোস্তাফিজুর রহমানের পারফরম্যান্স দেখে নেয়া যাক। ওয়ানডে বিশ্বকাপে মোস্তাফিজ খেলেছেন ৮টি ম্যাচ যার ৮টি ইনিংসে বল করেছেন। ওভার-৭২.১, মেইডেন- ২, রান- ৪৮৪, উইকেট- ২০, সেরা বোলিং ফিগার- ৫/৫৯, গড়- ২৪.২০, ইকোনমি- ৬.৭০, স্ট্রাইক রেট- ২১.৬, ৫ উইকেট- ২ বার।

মোস্তাফিজুর রহমান বেশ সম্ভাবনাময়ী এক খেলোয়াড়। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তারকা। তার বোলিংয়ে ধার দেখে সবাই অবাক হয়ে থাকতো। ২০১৫ সালের মতো ধার এখন যদিও নেই তারপরও নিয়মিত উইকেট শিকার করে যাচ্ছেন। আগের মতো ধার না থাকার কারণ হচ্ছে ইনজুরি। ২০১৬ সালে আইপিএল পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো কিন্তু এরপর ইনজুরিতে পড়ে তার ক্যারিয়ার হুমকিতে পড়ে। কারণ মোস্তাফিজ একজন পেস বোলার। আর পেস বোলারদের ইনজুরি কি রূপ নিতে পারে তা মাশরাফিকে দেখলেই বোঝা যায়। আবার মাশরাফিকেও অনুপ্রেরণা হিসেবে নেয়া যায় যে মাশরাফি এত ইনজুরির পরও হার মানেনি। আর মোস্তাফিজুর রহমান একজন পেসার তাই এসব ইনজুরি তার সঙ্গী হবেই তবে ফিটনেস লেভেল‌ যদি ভালো থাকে তবে মোস্তাফিজ ভালো করবে।

মোস্তাফিজুর রহমানের কিছু অর্জন নিয়ে কথা বলা যাক:

১. আইসিসির সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান।
২. আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে র্য্যাংকিংয়ে সেরা দশে উঠে এসেছেন।
৩. প্রথমবারের মতো আইপিএল খেলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।
৪. ২০১৬ আইপিএলে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন।
৫. ক্রিকেট ইতিহাসের দশম বোলার হিসেবে ৫ উইকেট লাভ
৬. ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে দুই ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
৭. কুল বিএসপিএ ২০১৫ অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন।
৮. ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৫ উইকেট লাভ
৯. প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে পরপর দুই ম্যাচে ৫ উইকেট প্রাপ্তি।
১০. দুইবার আইসিসির বর্ষসেরা একাদশে সুযোগ পেয়েছেন।
১১. ২০১৯ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে সেরা পাঁচ বোলারদের মধ্যে চার নম্বরে ছিলেন।
১২. অভিষেক ওয়ানডে সিরিজে ম্যান অফ দ্যা সিরিজ হয়েছেন।
১৩. মোস্তাফিজ একমাত্র খেলোয়াড় যে কিনা আইপিএল এ পুরস্কার নেবার সময় বাংলায় কথা বলেছে।
১৪. ২০১৬ আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পুরো টুর্ণামেন্টে সেরা বোলিং ফিগার ছিলো কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের ৫/২২, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

মোস্তাফিজুর রহমানকে পর্যাপ্ত পরিচর্যা করা হয় তবে তিনি বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় সম্পদে পরিণত হবেন তা বলাই যায়। ইতিমধ্যে তিনি ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট নেবার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। আর টি-টোয়েন্টিতে ৫০ উইকেটের দ্বারপ্রান্তে আছেন তিনি। তবে ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেটে তিনি যতটা ধারালো বড় ফরম্যাট মানে টেস্টে ততটা ধারালো নন তিনি। তবে টেস্ট খুব দীর্ঘ সময়ের খেলা এখানে খেললে তার ইনজুরির সম্ভাবনা থাকতে পারে‌ তাই তাকে এ ফরম্যাটে না খেলিয়ে তাকে ছোট পরিসরের ক্রিকেটে বেশি মনোযোগী হলে সাফল্য আসবে। সর্বোপরি তার এই জন্মদিনে তার প্রতি শুভকামনা রইল তিনি যেন তার ফিটনেস ধরে রাখতে পারেন এবং তার কাটার বোলিং দিয়ে বাংলাদেশ দলকে সাফল্য এনে দিতে পারেন। শুভ জন্মদিন কাটার মাস্টার। শুভকামনা কাটার মাস্টার। এগিয়ে যান এবং দেশকে সাফল্য এনে দিন।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »