শচীনের পরামর্শে পৃর্থ্বীর দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন-

নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »

 

ভোরের উদীত সূর্য কখনোই দিনের গতিপথ বলে দেয় না। কিন্তু রুদ্রোজ্বল সকাল পৃথিবীর প্রতিটা শহর ঠিকই ব্যস্তময় করে তোলে। ক্রিকেট মাঠে এরকম অনেক ঘটনা রয়েছে, পূর্বাভাসে বড় কিছুর আশা জাগালেও শেষ মেষ হারিয়ে গিয়েছে অনেকে। কিন্তু কামব্যাক করেছেন কজন। ভারতের তরুন ওপেনার নিজের পরিশ্রম দিয়ে বাজে সময়কে পিছনে ফেলে এসেছেন আলোর পথে।তার প্রত্যাবর্তনে ভুমিকা রেখেছেন শচীন টেন্ডুলকার।

ভারতীয় নব প্রজন্মের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অন্যতম মেধাবী ব্যাটসম্যান হিসেবে ধরা হয় পৃথ্বী শ-কে। পৃথ্বীর আক্রমণাত্বক ব্যাটিং, শর্ট সিলেকশন, ট্যাকনিক্যাল, পরিনত মনস্তাত্ত্বিক সবকিছুতেই একজন পারফেক্ট ব্যাটসম্যান এর প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। তার আক্রমণাত্বক ব্যাটিং ও টেকনিকের প্রশংসা করেছেন খোদ মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর নিজেও।

পৃর্থ্বী নিজের ক্রিকেট মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটিয়েছেন বয়সভিত্তিক দল থেকেই। প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটে, রঞ্জি ট্রফি, দিলীপ ট্রফি, যেখানে খেলছেন সেখানেই হেসেছে পৃর্থ্বীর ব্যাট। ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ডাকা হয় তাকে।

৪-১০-২০১৮ তারিখে প্রথম ম্যাচেই অভিষেক হয় তার। গায়ে এখনো কৈশোরের গন্ধ, আন্তর্জাতিক পরিবেশটা বড্ড অচেনা।অথচ আঠারোর এই ছেলেটাই কিনা উইলোকে ছড়ি বানিয়ে শাসন করলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েলদের। ৫৬ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পর ৯৯ বলে সেঞ্চুরি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচেই ১০০+ স্টাইক রেটে তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। তাও ভারতের দ্বিতীয় কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসাবে। ১৫৪ বলে যখন আউট হলেন তখন তার নামের পাশে ছিল ১৩৪ রানের এক ঝলমলে ইনিংস। পরের ম্যাচেই ৫৩ বলে খেলেন ৭০ রনের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত থাকেন ৩৩* রানে। অষ্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে পরেন ইনজুরিতে। তারপর এক কালো অধ্যায় যুক্ত হয় পৃর্থ্বীর ক্যারিয়ারে। ডোপিং এর কারনে ৮ মাসের জন্য ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত হন পৃথ্বী শ। নিষিদ্ধ ওষুধ সেবন করায় তাকে সাসপেন্ড করা হয়।

নিষিদ্ধ থেকে ফিরে ২০২০ সালের শুরুর দিকে আবার যুক্ত হন ভারত টেস্ট দলে। নিউজিল্যান্ড সফরে পুরনো পৃর্থ্বীর দেখা আর মেলে নি চার ইনিংসে তার রান ছিল ১৬,১৪,৫৪,১৪। সবকিছু পিছনে ফেলে পৃর্থ্বী চোখ রাখেন আইপিএল এর ১৩ তম আসরের দিকে। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালস এর হয়ে প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই দূর্দান্ত শুরু করেন পৃর্থ্বী। তারপর কোথায় যেন হারিয়ে যায় তার প্রতিভা। ১৩ তম আইপিএলে তার ব্যাটং এর পরিসংখ্যান ৫(৯), ৬৪(৪৩),২(৫),৬৬(৪১),৪২(২৩),১৯(২৩),৪(৩),০(১),০(২),৭(১১),১০(১১),৯(৬),০(২)। ১৩ ম্যাচ খেলে ১৭.৫৩ গড়ে মাত্র ২২৮ রান করেন তিনি। তার মাঝে ৩ ইনিংসে আউট হয়েছেন শূন্য রানে।

আইপিএল এর ব্যর্থতার পরেও অষ্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বর্ডার গার্ডস গভোস্কার সিরিজে পৃর্থ্বীর উপর আস্থা রাখে বিসিসিআই। প্রথম ম্যাচে একাদশে সুযোগ পান তিনি। ওপেনিংয়ের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া পৃর্থ্বী দুই ইনিংসে খেলেন ০ এবং ৪ রানের ইনিংস। সমালোচনা হয় তার আউট হওয়ার ধরন নিয়ে। ভেতরে আসা বলের মোকাবিলা করতে না পেরে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন।প্রশ্ন তোলা হয় তার প্রতিভা নিয়েও। সেই সাথে ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ছেড়ে হয়ে উঠেন দলের বাজে পারফর্মার । অষ্ট্রেলিয়ার সিরিজে বাকি ম্যাচ গুলোতে থাকেন একাদশের বাইরে। দেশে ফিরে পৃর্থ্বী ছুটে যান ব্যাটিং ইশ্বর শচীন টেন্ডুলকার এর কাছে।শচীনের পরামর্শ কাজে লাগিয়েই ফের শিরোনাম জুড়ে পৃর্থ্বী!

চলতি বিজয় হজারে ট্রফিতে ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন পৃথ্বী। এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচ খেলে ১৮৮.৫ গড়ে করেছেন ৭৫৪ রান। ৪ সেঞ্চুরির একটি পরিনত করেছেন ডাবল সেঞ্চুরিতে। ১৩৪.৮৮ স্টাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি। ৭ ম্যাচে ৯৫ টি বাউন্ডারি এবং ২১ টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি। তার ইনিংস গুলো, ১০৫(৮৯), ৩৪(৩৮),২২৭*(১৫২), ৩৬(৩০), ২(৫)৷ ১৮৫(১২৩) ১৬৫(১২২)। এর মাঝে ব্যাক টু ব্যাক খেলেছেন ১৫০+ ইনিংস। বিজয় হাজারে ট্রফিতে সর্বোচ্চ ২২৭* ব্যাক্তিগত ইনিংস। লিস্ট এ ক্রিকেটে ভারতীয় অধিনায়ক হিসাবে সর্বোচ্চ ২২৭*রানের ইনিংস। ভারতীয় উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান হিসাবে সর্বোচ্চ ১৮৫ রানের ইনিংসটিও পৃর্থ্বীর দখলে।

অথচ কয়েক মাস আগে পরিস্থিতি কিন্তু এমন ছিল না। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাডিলেডে গোলাপি ব্যর্থতার জন্য পৃর্থ্বী হয়ে পরেন কোনঠাসা! সুনীল গাওস্কর থেকে রিকি পন্টিং সবাই পৃথ্বীর ব্যাটিং নিয়ে নিন্দা করেছেন। সেই টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার পর তাঁকে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল।

যদিও অস্ট্রেলিয়া সফরের খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে পৃথ্বী বলছিলেন, “মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সের ভেতরে আসা বলে আউট হয়েছিলাম এটা সবাই দেখেছে। তবে আমি কিন্তু এত খারাপ ব্যাটসম্যান নই। আসলে আমার ‘ব্যাক লিফ্ট’ ঠিক থাকলেও শরীরের অনেক দূর থেকে খেলছিলাম। তাই সমস্যা হয়েছিল। নেটে গিয়ে ভুলগুলো শুধরেও নিয়েছি। সেই সময় রবি (শাস্ত্রী) স্যার আমার সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারছিলাম না। সাজঘর এক কোণায় গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করতাম।”

  • প্রত্যেক খারাপ সময়ের পরেই আসে ভাল দিক। পৃথ্বীর ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। দেশে ফিরেই সোজা সচিন তেন্ডুলকরের বাড়ি চলে যান। কী কথা হয়েছিল সচিনের সঙ্গে? তরুণ মুম্বইকর বলছেন, “শচিন স্যার দুটো পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথম: শরীর ও বলের মধ্যে বেশি দুরত্ব রাখা যাবে না। দুই: নেট মাধ্যম থেকে শুরু করে প্রাক্তনদের টিকা টিপন্নিতে কান না দেওয়া। এখন সেগুলো পালন করছি বলেই ফল পাচ্ছি।”

কিন্তু ঘরোয়া একদিনের ম্যাচে এমন সাফল্যের পরেও কি তিনি আবার সুযোগ পাবেন? কারণ শুধু ব্যাটিং নয়, পৃথ্বীর ফিটনেস নিয়েও উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। যদিও তাঁর দাবি, “আমি ভারতীয় দলের সবচেয়ে ফিট ক্রিকেটার, সেই দাবি কোনওদিন করিনি। তবে আমার মধ্যে চেষ্টার খামতি থাকে না। আমি কিন্তু মুম্বইয়ের বিরারের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। লড়াই আমার রক্তে। তাই এত সহজে হাল ছাড়ব না। জাতীয় দলে ফিরবই।

 

নিউজক্রিকেট / রাসেল

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »