মুগ্ধ’র মুগ্ধতা ছড়া‌নো বো‌লিং দেখ‌লো বি‌পিএল!

শোয়েব আক্তার »

‌পেস বো‌লিং এ গ‌তি ও বু‌দ্ধি‌দিপ্ত বো‌লিং দি‌য়ে সবার নজর কে‌ড়ে‌ছেন মু‌কিদুল ইসলাম। তি‌নি এবার রংপুর রেঞ্জা‌র্সের হ‌য়ে বি‌পিএ‌লে অংশ নি‌চ্ছেন। অভি‌ষেক ম্যা‌চে চার ওভার বল ক‌রে ২৬ রা‌নে নি‌য়ে‌ছেন সৌম্য সরকা‌রের উইকেট।

ম‌ুকিদু‌লের ‌বো‌লিং ফিগা‌র দে‌খে আহাম‌রি কিছু ম‌নে না হ‌লেও তাঁর পু‌রো চার ওভার বো‌লিং যারা দে‌খে‌ছেন তারা অবাক হ‌য়ে‌ছেন মাত্র ১৯ বছর বয়সী ৬ ফুট ১ ইঞ্চির মু‌কিদু‌লের বো‌লিং এর কারুকার্য দে‌খে।

‌দে‌শের উইকে‌টে নিয়‌মিত ঘন্টায় ১৪০ কিলো‌মিটা‌র গ‌তি‌তে বল করা কোন সহজ কথা নয়।মু‌কিদুল, কু‌মিল্লা ওয়া‌রিয়‌র্সের বিপ‌ক্ষে যে ২৪ টি ডে‌লিভা‌রি দি‌য়ে‌ছেন তা‌তে বে‌শির ভাগ ডে‌লিভারি ১৩৫ কি‌লো‌মিটা‌রের আশেপা‌শে বল ক‌রে‌ছেন। স‌র্বোচ্চ গ‌তি ছিল ১৩৮ কি‌লো‌মিটার।

আবার মু‌কিদু‌লের স্লোয়ার গু‌লো ও বেশ চমৎকার ও চাতুরতার মিশ্রন ছি‌লো। হঠাৎ ক‌রেই ১০৭-১০৯ কি‌লোমিটার গ‌তির বল ব্যাটসম্যান‌দের বিপা‌কে-ই ফে‌লে দি‌য়ে‌ছি‌লো। তাই কু‌মিল্লা ওয়া‌রিয়‌র্সের সৌম্য সরকার, ডে‌ভিড মালান, সা‌ব্বির রহমান’রা বেশ সমীহ ক‌রেই খেল‌ছি‌লেন মুকিদুল কে।

কুমিল্লার ইনিংসের তৃতীয় ওভারে প্রথমবার মুকিদুলের হা‌তে বল তু‌লে দেন মুহাম্মদ নবী। ক্রি‌জে থাকা বিধ্বংসী সৌম্য সরকার ও রাজাপ‌ক্ষে‌। তবুও ম‌ু‌কিদুল ওই ওভা‌রে দি‌য়ে‌ছেন মাত্র ৩ রান। এরপর অষ্টম ওভারে বল কর‌তে এসে দেন ৭ রান। তখন ক্রি‌জে ছি‌লেন সৌম্য-সা‌ব্বির জু‌টি‌। ১২তম ওভারে এনে দেন ১১ রান। ওই ওভা‌রে একটু খরু‌চে হ‌লেও সৌম্যের উইকেট তু‌লে নেন তি‌নি।

সেটিও বুদ্ধিদিপ্ত বো‌লিং এর মাধ্য‌মে। পায়ের বল সৌম্য তুলে মারার চেষ্টা করছিলেন। মুকিদুল বল মা‌ঝের স্টা‌ম্পে রেখেছিলেন, ভাবনাটা ছিল হয়তো লেগে মারতে গে‌লে বল মাথার ওপর উঠ‌বে। সেটাই হ‌য়ে‌ছে! নিজের শেষ ওভার ও ইনিংসের ১৬তম ওভারে দিয়েছেন ৫ রান।

প্রথম ম্যাচ বলেই কিছুটা ভ‌য়ে ছি‌লেন মুকিদুল। বিপিএলের মতো বড় মঞ্চে, দেশি-বিদেশি সব ক্রিকেটারদের বিরু‌দ্ধে লড়াই, তাই অ‌ভি‌ষে‌কেই লাগাম দি‌তে হয়েছে গতিতে। গণমাধ্য‌ম কর্মী‌দের সে কথাই বললেন এ পেসার, “সত্যি বলতে গ‌তির দিকে আজ খুব একটা নজর দিইনি, প্রথমবার বলে লাইন-ল্যান্থ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। প্রথম ম্যাচ ব‌লে ভয়ে ছিলাম তাই খুব বেশি দিতে পারি নি। পরেরবার হয়তো আরও বেশি গ‌তি দিতে পারব।”

সর্বোচ্চ কত গ‌তি‌তে বল ক‌রে‌ছি‌লেন এমন প্রশ্নে মু‌কিদুল ব‌লেন, “আমার স‌র্বোচ্চ গ‌তি ছিল ১৪৩।”

কাউকে অনুসরণ করে নয়, নিজের সামর্থ্য ও চেষ্টায় ভরসা রেখে আগামী টি-২০ বিশ্বকা‌পে খেলার স্বপ্ন দে‌খেন মু‌কিদুল।‌ তি‌নি ব‌লেন, “কাউ‌কে অনুসরণ ক‌রে নয়, নি‌জেই ভা‌লো করার চেষ্টা কর‌ছি। করা বলতে নিজে ভালো করার চেষ্টা করছি। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তাই বিশ্বকাপেই নজর।”

অথচ এই বিপিএলের শুরুতে মুকিদুলের স্বপ্ন শেষ হ‌য়ে যেতে বসেছিল। প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট ‌‘এ’ মিলিয়ে মাত্র ৯ ম্যাচ খেলা এ পেসার শুরুতে ছিলেন ঢাকা প্লাটুনের নেট বোলার। কিন্তু ঢাকায় কপাল খোলেনি। তাঁকে না রেখে মোহাম্মদ শহীদকে দলে নেয় ঢাকা।

শেষ পর্যন্ত রংপুরের টেকনিক্যাল উপদেষ্টা ও জাতীয় দ‌লের নির্বাচক হাবিবুল বাশারের মাধ্যমে জায়গা পেয়ে যান রংপুর রেঞ্জা‌র্সে। সংবাদ সম্মেলনে শুরু‌তেই কথাটা মনে ক‌রেন মুকিদুল, “প্রথমে দল পাইনি, পরে হাবিবুল বাশার স্যার সুযোগটা দিয়েছেন। প্রথম ম্যাচ যেহেতু, তাই একটু বিচ‌লিত ছিলাম, সতীর্থরা অনেক সাহায্য করছেন।”

মুকিদুলের ডাকনাম মুগ্ধ। রংপুরের এই ছেলে ক্রিকেট কে কতটা ভালোবাসেন তা বোঝা যায় পড়াশোনার পাশপাশি তাঁর খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা শুন‌লে। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দি‌য়েও খেলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। তখন মু‌কিদুল জানিয়েছিলেন, “পরীক্ষার আগের দিনটা শুধু অনুশীলন করি না। আবার পরীক্ষা শেষ করে এসে বেশি করে অনুশীলন করার চেষ্টা করি। কষ্ট হয় তবুও আমি দুটিই ‌বেশ উপভোগ করি। কষ্টের ফল সব সময় ভালো হয়।”

অতি‌রিক্ত প‌রিশ্রম করতে গিয়ে মুকিদুল চোটেও পড়েছেন। পেসাররা চোটে পড়লে ফিরে আসা কঠিন। হারানো ছন্দ ফি‌রে পাওয়ান এবং ঘুরে দাঁড়ানোও অনেক চ্যালেঞ্জের।অল্প বয়সে-ই সেসব ক‌ঠিন পথ চেনা হয়ে গেছে মুকিদুলের। তি‌নি ব‌লেন, “ইনজুরিতে পড়লে একটা খে‌লোয়াড় অনেক পিছিয়ে যায়। ফি‌রে আস‌তে করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। ইনজুরিতে তো কেউ ইচ্ছে করে পড়ে না। হয়তো কোনো ভা‌বে প‌ড়ে যায়, তবে সবাই ইনজুরিমুক্ত থাকতে চায়।”

দে‌শের ক্রি‌কেটে পেসার‌দের সঙ্ক‌টে মু‌কিদুল ইসলাম মুগ্ধ’র ম‌তো পেসার যেন মরুভূ‌মির বু‌কে এক পশলা বৃ‌ষ্টির ম‌তো।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »