নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আম্পায়ার প্যানেলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন মাসুদুর রহমান মুকুল ও গাজী সোহেল। পুরো আসরে নিজেদের দক্ষতা দেখিয়ে নজর কেড়ে নিয়েছেন এ দুজন। বিশেষ করে মাসুদুর রহমান মুকুল। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে শতভাগ সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি, পরিচালনা করেছেন ফাইনালও।
প্রথমবারের মতো বড় মঞ্চে আম্পায়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি এবং ভবিষ্যৎ আম্পায়ারদের জন্য পরামর্শের বিষয়ে নিউজক্রিকেট২৪-কে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত বলেছেন তিনি…
প্রশ্ন: ভারত-পাকিস্থান দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দুটি ম্যাচেই আপনি অনফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন। অনুভূতি এবং সেই সঙ্গে চাপ কেমন ছিল?
উত্তর: ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ। এই ধরনের একটা বড় ইভেন্টে ওদেরকে ম্যাচ পরিচালনা করাটা আসলেই দারুণ ব্যাপার। আমি যখন প্রথম এই ম্যাচের দায়িত্ব পাই, আমার মধ্যে দারুণ একটা অনুভূতি কাজ করছিল। ম্যাচের আগেও খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম। সফলভাবে ম্যাচ শেষ করতে পেরেছি, এটাই আমার জন্য অনেক বড় অর্জন। আর চাপ বলতে, ওইরকম কোন চাপই ছিল না।
একটা ব্যাপারে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, সেটা হলো মাঠের নয়েজ। গ্যালারির দর্শকদের থেকে এতো বেশি পরিমাণ নয়েজ আসছিল, আসলে অনেক সময় এইরকম নয়েজের জন্য কট-বিহাইন্ড সাউন্ড গুলো শুনতে পাওয়া যায়না। এটা ছাড়া আর তেমন কোন চাপ অনুভব করিনি।
প্রশ্ন: এই রকম বিগ ম্যাচ পরিচালনা করবেন আগে থেকে এমন কোন স্বপ্ন ছিল? এবং এই দুই ম্যাচ মিলিয়ে আপনার কাছে সেরা মুহূর্ত কোনটি?
উত্তর: মানুষ ছোট ছোট স্বপ্ন থেকেই আস্তে আস্তে বড় স্বপ্ন দেখার সাহস করে। আমিও তার ব্যতিক্রম না। আমিও স্বপ্ন দেখতাম, বড় মঞ্চে বড় দলগুলোর ম্যাচ পরিচালনা করবো একদিন। তবে এতো তাড়াতাড়ি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পরিচালনার মতো সুযোগ আসবে এটা ভাবিনি। তবে এই ম্যাচ পাওয়ার আগেও আমি আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম এটির জন্য। কারণ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই, ওই দুই দেশের কোন আম্পায়ার ম্যাচের দায়িত্বে থাকবে না এটা নিশ্চিত ছিল।
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান, এই তিন দেশের আম্পায়ারদের থেকে দায়িত্ব দেওয়া হবে এটা নিশ্চিত। তাই আমি আর গাজী সোহেলের প্রস্তুতিটা অনেক স্ট্রং ছিল। আমাদের কনফিডেন্স ছিল আমরা অন-ফিল্ড অথবা থার্ড আম্পায়ারিং, কোন একটা জায়গায় দায়িত্ব পাবো। আমরা দু’জন আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম। তবে সবমিলিয়ে এমন বড় একটি মঞ্চে, এমন হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ পরিচালনা করাটা অনেক বড় প্রাপ্তি আমার ক্যারিয়ারে।
প্রশ্ন: ভারত-পাকিস্থান ম্যাচ চলাকালীন অবস্থায় বা ম্যাচ শেষে দুই দলের কোন প্লেয়ারের কোন অভিযোগ ছিল?
উত্তর: না কোন অভিযোগই ছিল না। তারা খুবই ফ্রেন্ডলি ছিল এবং মাঠেও যথাসাধ্য সহযোগীতা করেছে৷ ম্যাচ শেষেও তারা আমাদের প্রতি এপ্রোশিয়েট ছিল। টিম ম্যানেজমেন্ট ও কোচরাও দারুণ আন্তরিক ছিল। ম্যাচ শেষের আনুষ্ঠানিকতার সময় আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছে। কোন দলের অভিযোগ ছিল না ম্যাচ নিয়ে।
প্রশ্ন: ভারত-পাকিস্থান সুপার ফোরের ম্যাচে একটা রিভিউ সিদ্ধান্ত আসার পর দেখলাম রোহিত শর্মা কী যেন বলছিলেন আপনাকে। কোন অভিযোগ?
উত্তর: না না, কোন অভিযোগ ছিল না। মুলত মাঠে ওরা ক্রিকেটের বাইরের কোন প্রসঙ্গ নিয়ে কোন কথা বলে না কখনো। তখন যে রিভিউটা নিয়েছিল রোহিত, সেটার ডিসিশন আসতে সময় নিচ্ছিলো, খুব সম্ভবত চার মিনিটেরও বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছিল তখন। সেসময় রোহিত আমার কাছে এসেছিল আর আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, তোমার কি মনে হয়? আমার এটা স্পাইক ছিল কিনা।
তখন আমি ওকে বলছিলাম, এটা আসলে টিভি আম্পায়ারের ডিসিশন, তিনিই সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। রিভিউর সময়ে মুলত রোহিত শর্মার সাথে আমার কথোপকথন আলাদাভাবে সবার নজরে আসার কারণ হচ্ছে নয়েজ। মুলত গ্যালারীর শোরগোলের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে আমরা ২-৩ ফিট দুরত্বে থেকেও একে অপরের কথা ক্লিয়ার শুনতে পাচ্ছিলাম না। আর তাই, আমরা কিছুটা ক্লোজ হয়ে কথা বলছিলাম। এটাই হয়তো আপনাদের নজরে ভিন্ন কিছু মনে হয়েছে।
প্রশ্ন: ক্রিকেটারদের মত আপনিও তো দেশকে দারুন ভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এটা কতটা বড় প্রাপ্তি ও সম্মানের মনে করেন?
উত্তর: আসলে আমরা যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আম্পায়ারিং করি, আমরাও সবসময় সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করি, আমরাও ক্রিকেটারদের মতো দেশকে রিপ্রেজেন্ট করি। কিন্তু সেটা প্রমাণ করার জন্য আমরা ক্রিকেটারদের মতো প্লাটফর্ম পাইনা সেটা প্রমাণ করার। আল্লাহর রহমতে আমরা এবার এমন একটি প্লাটফর্ম পেয়েছি নিজেদের প্রমাণ করার জন্য এবং আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।
এর ফলে, আপনারা মিডিয়া, দেশের ক্রিকেটপ্রেমী সাধারণ জনগণ, ক্রিকেটাররাও বুঝতে পেরেছে আমরা আম্পায়াররাও দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে সক্ষম। এই যেমন বাংলাদেশের জনগণ আমাদের নিয়ে গর্ববোধ করছিল, মাশরাফি-মুশফিকদের মতো তারকা আমাদের নিয়ে গর্ব করে পোস্ট দিয়েছে! এগুলো আমাদের জন্য অনেক বড় সম্মানের। যদি এক কথায় উত্তর দিতে যাই, তাহলে বলবো এটি আমার পুরো ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত ছিল।
প্রশ্ন: ক্রিকেট বিশ্বে আপনার সবচেয়ে প্রিয় আম্পায়ার কে? এমন কেউ আছে যাকে নিজের আইডল মনে করেন?
উত্তর: আমি যখন থেকে আম্পায়ারিং শুরু করি, তখন থেকেই আমার আইডল ব্রুস অক্সেনফোর্ড।
শুধুমাত্র একজন আম্পায়ার হিসেবে নয়, একজন ভাল মানুষও তিনি। তিনিই আমার আম্পায়ারিং জীবনের আইডল।
প্রশ্ন: নানা রকম প্রযুক্তির ব্যবহারে মাঠে আম্পায়াররা বেশ চাপে থাকেন। এ বিষয়ে আপনি কতটা একমত?
উত্তর: আমি যেটা মনে করি, এই প্রযুক্তি গুলো আম্পায়ারিং এর অনেক বিতর্ক থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে। আমি যদি ২ টা ভুল ডিসিশন দিই, এই যেমন কট-বিহাইন্ড বা এলবিডাব্লিউ’র সিদ্ধান্ত, সেটা কিন্তু এই প্রযুক্তির ব্যবহারের কল্যানে শুধরে যাচ্ছে। যার ফলে কোন দলকে সাফার করতে হয়না আমাদের কোন সিদ্ধান্তের জন্য। আর সবচাইতে বড় ব্যাপার হচ্ছে, আম্পায়ার ভুল সিদ্ধান্ত দিলেও সেটা শুধরে যাচ্ছে, তাই খেলা শেষে কেউ বলতে পারবে না, আম্পায়ারের ভুল ডিসিশন এর জন্য ম্যাচ হেরেছে। তাই আমার কাছে মনে হয় প্রযুক্তির ব্যবহারটা অবশ্যই ভাল।
প্রশ্ন: দেশীয় আম্পায়ারদের জন্য কোন পরামর্শ বা বার্তা, যা তাদের সফল আম্পায়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে..
উত্তর: এখানে উদাহরণ হিসেবে আমি লিজেন্ডারি আম্পায়ার সায়মন টাফেলের একটি বক্তব্যকে সামনে নিয়ে আসবো। এক সাক্ষাৎকারে সাইমন টাফেল বলেছিলেন, আপনি যদি একজন ভাল মানুষ না হন, তাহলে আপনি কোনদিন একজন ভাল আম্পায়ার হতে পারবেন না। তাই আপনাকে সবার প্রথমে একজন ভালো মানুষ হতে হবে, সৎ হতে হবে এবং অবশ্যই সাহসী হতে হবে। এই গুন যাদের মধ্যে থাকবে, নিঃসন্দেহে তারা সফল হবে বলে আমি মনে করি।