নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
যারা বেশ আগে থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনুসরণ করেন, মোহাম্মদ নূর বকস তাদের কাছে বেশ পরিচিত নাম। যেখানেই লাল সবুজের প্রতিনিধিরা সেখানেই উপস্থিত মোহাম্মদ নূর বকস। মাঠে ওরা ১১ জনের পাশাপাশি গ্যালারীতে বাংলাদেশের আরেক নিবেদিত প্রাণ মোহাম্মদ নূর বকস। মোহাম্মদ নূর বক্স পেশায় সাবেক সেনাবাহিনীর সদস্য, বাড়ি ঝিনাইদহের ডুমুরতলা। গত ৩২ বছর ধরে পেনশনের টাকা দিয়ে কোনভাবে জীবন পাড় করছেন নূর বকস। জীবন চলার পথটা কঠিন হলেও থেমে থাকতে পারেনি ক্রিকেট খেলা দেখা থেকে। স্টেডিয়াম থেকে স্টেডিয়াম কিংবা দেশ থেকে বিদেশ সব জায়গাতেই বিচরণ করেন মোহাম্মদ নূর বকস।
গত ৩০ অক্টোবর তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ ও ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে ভারত গেছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ দল যখন ভারত সফরে নূর বকস কিভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। লাল সবুজের ক্রিকেটের আসক্ততায় বাংলাদেশ থেকে কলকাতা আর কলকাতা থেকে দিল্লি ঝকঝক শব্দ করা ট্রেনটা নিয়ে গেছে দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামের দুয়ারে। মাথায় লাল সবুজের ব্যান্ডেনা আর টি-শার্টে সেনাবাহিনীর কার্ড। স্টেডিয়ামের দুয়ারে দাঁড়াতে পারলেও কড়া নিরাপত্তার জোরে ব্যর্থ হয়েছেন মাঠে ডুকতে। এখনো জানেন না কোথায় থাকবেন, কিভাবেই বা খেলা দেখবেন। তবে আশা ছাড়েননি বিশ্বাস আছে মাঠে ডুকবেন আর লাল সবুজের পতাকা উড়াবেন অরুন জেটলিতে।
বিডিক্রিকটাইমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান কিভাবে তার ক্রিকেটের প্রতি এমন নেশার জন্ম হলো। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে তো ফ্রিতে খেলা দেখার সুযোগ পেতাম সাথে ফ্রি টিকিট, ভিআইপি খাবার। প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে খেলা দেখ আসছি বাংলাদেশে সব খেলা দেখাই আমার জন্য ফ্রি। শ্রীলঙ্কায় খেলা দেখতে গিয়ে আমি আমার সব কাগজপত্র হারিয়ে বসি। এখন আসছি দিল্লিতে জানি না কোথায় থাকবো তবে যেখানে রাত হবে সেখানেই থেকে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘খেলা দেখা এটা আমার নেশায় পরিণত হয়ে গেছে। টিকিট যদি কোন ক্রমে না পাই তাহলে কালোবাজারির কাছ থেকে নিয়ে নিবো। খেলা যখন দেখতে এসেছি খেলা তো দেখতে হবেই। কোনভাবে একটা টিকিট ম্যানেজ করবো।’
খেলোয়াড়দের কাছে থেকে তিনি কোন সুযোগ সুবিধা পান কি না জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি জানিয়েছেন দলের মধ্যে বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কাছ থেকে সব চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন৷ এই সিরিজে মাশরাফি না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাকে। তিনি বলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম এরা সবাই আমাকে চিনে। একবার তাদের সাথে দেখা করতে পারলেই হবে৷ শ্রীলঙ্কা যাওয়ার সময় মাশরাফি আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলো। শ্রীলঙ্কার মুদ্রার তো আবার দাম কম অন্যান্য দেশের তুলনায়।’
খেলোয়াড়দের কাছে টিকিট চাওয়া কিংবা কালোবাজারির কাছ থেকেই কেন টিকেট নিতে হবে? টিকেট তো অনলাইনে হরহামেশাই পাওয়া যাচ্ছে এমনটা প্রশ্ন করা হলে, প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, ‘অনলাইন সম্পর্কে আমার ধারণা কম আর হোটেলে থাকতে গেলে তো খরচ অনেক বেশি যা আমার পক্ষে সম্ভব না। খেলোয়াড়দের সাথে একবার দেখা হলে ওরাই সব ব্যবস্থা করে দিবে। তখন আমার আর কোন অসুবিধা থাকবে না।’
আর যদি খেলোয়াড়দের সাথে দেখা করতে না পারেন তাতেও নাকি অসুবিধা নেই নূর বকসের। রাতটা কাটিয়ে দিবেন অরুন জেটলির গেটের আশেপাশে আর রাতে শীতের প্রকোপ বাড়লে লাল সবুজের পতাকাকে গায়ে জড়িয়ে রাতটা কোন রকম পার করে দিবেন। নূর বকসদের মত স্বার্থহীন সমর্থকদের জন্যই আজকের বাংলাদেশ, আজকের লাল সবুজ ।