নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে বইছে অন্ধকারের কালো ছায়া। বিশ্বকাপে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেনি বাংলার টাইগাররা। তার মধ্যে ছিলো খেলোয়াড়দের মাঝে দ্বন্দের সুর। যদিও সাকিব ও রিয়াদ দুজনেই তা অস্বীকার করেছেন। বিশ্বকাপে খারাপ পারফরম্যান্সের দুঃখ ভুলার মিশন নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলো লংকায়। সেখানেও খায় ধাক্কা। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ছিলো খুব-ই নাজুক। সব ব্যর্থতা ভুলার জন্য বাংলাদেশ দল বেছে নিয়েছিলো আফগানিস্তানের সাথে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি। টেস্ট অধিনায়ক সাকিবও চেয়েছিলেন ব্যার্থতার গ্লানি কিছুটা হলেও মোচন করতে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনাও সাজিয়েছিলেন। কিন্তু হলো পরিকল্পনার উল্টো।
প্রথমত, তিনি যেমন উইকেটে খেলতে চেয়েছিলেন তেমন উইকেট পাননি। আবার, তেমন উইকেট যে তিনি পাবেন না তা-ও নাকি জানতেন না। এতে ব্যর্থতার পাল্লা হলো আরো ভারী। এ ব্যর্থতার পেছনের কারণ খুজতে গিয়ে অনেকে মনে করেন বাংলাদেশের পরিকল্পনায় ভুল ছিলো। কিন্তু, সাকিব মনে করেন, “পরিকল্পনায় কোনো ভুল বলে কিছু থাকেনা। পরিকল্পনা কাজে আসলে বাহবা পাওয়া যায় আর না আসলে বলা হয় পরিকল্পনায় ভুল ছিলো। আমরা যেমন উইকেট চেয়েছিলাম তা যে পাচ্ছি না সেটা মাঠে গিয়ে জানলে তো কিচ্ছু করার থাকেনা।”
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেমন উইকেট চেয়েছিলেন সাকিব ? আর চাইলে কেন-ই বা পেলেন না ? স্বাগতিক দলের অধিনায়ক হিসেবে সাকিব যেমন উইকেটে খেলতে চাইবেন তাকে তেমন উইকেটই তো দেওয়া উচিৎ। স্বাগতিক টিম হিসাবে সব দলই এ ধরনের সুযোগ কাজে লাগায়। ঘরের মাঠে খেলার সুযোগটা কাজে লাগাতে না পারার দায়টা কে নেবে ? ক্যাপ্টেন না কি ম্যানেজমেন্ট ?
টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে ২০ বছরের ইতিহাসে আমরা মাঠের পারফরম্যান্স এবং মাঠের বাহিরের পারফরম্যান্স সব দিক থেকেই পিছিয়ে যাচ্ছি। এটা মূলত ম্যানেজমেন্টের দূর্বলতা। সাকিবের কথাও ম্যানেজমেন্টের দূর্বলতা স্পষ্ট। আর তাইতো তিনি ম্যানেজমেন্টের উপর বিরক্ত হয়েই অধিনায়কত্ব নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেছেন। আর যদি দলের দায়িত্ব নিতে হয় তাহলে ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলার ব্যাপার আছে বলে উল্লেখ করেন। এতে করে তিনি যেনো ম্যানেজমেন্টের দূর্বলতার দিকেই ইঙ্গিত করতে চাইলেন।
একটা দল ২০ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলে যেখানে দলের উন্নতির লেখচিত্রটা উপরের দিকেই নেওয়া উচিৎ ছিলো সেখানে দলের পারফরম্যান্স যাচ্ছে-তাই। এমনকি কূটকৌশলেও পিছিয়ে যাচ্ছে দল।
আবারও আসি আফগানিস্তান বনাম বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ নিয়ে। যে ম্যাচের ভাগ্যটা আসলে গড়ে দিয়েছিলো টস-ই। এ ধরনের উইকেটে যারা টসে জিতে তাদের দিকে ম্যাচের ফলাফল অনেক খানিই হেলে যায়। তার উপর ওদের আছে কিছু মানসম্পন্ন রিস্ট স্পিনার। আমাদের আছে ফিঙ্গার স্পিনার। বলে রাখা ভালো, যে ধরনের উইকেটে খেলা হয়েছে সে ধরনের উইকেটে ফিঙ্গার স্পিনারের চেয়ে রিস্ট স্পিনাররাই বেশি কার্যকর। তার মানে আমরা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছি। এটাই কি ছিলো আমাদের কৌশল ? সাকিব কি এ ধরনের উইকেটে খেলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন ? সাকিবের কথায় তো স্পষ্টই যে তিনি এ ধরনের উইকেট চান নি। তাহলে এ ধরনের উইকেট কেনো হলো ? কারা করলো ?
আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের কিউরেটর সাহেবের বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ উঠেছিলো। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের মাঠিতে নাকি সমস্যা। চাহিদা অনুযায়ী উইকেট বানানো দুষ্কর। যাই হোক, আমাদের কোচিং স্টাফে অনেক পরিবর্তন দেখেছি কিন্তু কিউরেটর সাহেব আছেন বহাল তবিয়তে। আমাদের ম্যানেজমেন্ট যদি মনে করেন উনার থাকার প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী উইকেট না পেলেও চলবে, তবে চলুক। তবে এটাও সত্য যে, এভাবে চলতে থাকলে আরো কঠিন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকাটাই শ্রেয়।