নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৫ আইসিসি কর্তৃক পরিচালিত ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার একাদশ আসর। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ মার্চ, ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড যৌথভাবে আয়োজন করে। এই বিশ্বকাপে নিজেদের ৫ম বারের মতো শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিয়ে ছিলো ফুল বিতর্ক। নিয়মিত আয়োজনে আজ থাকছে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ।
তাসমান পাড়ের দুই দেশে এটি দ্বিতীয় আসর। ১৪ ভেন্যুতে হয় ৪৯ ম্যাচ। ফাইনালসহ ২৬ ম্যাচ হয় অস্ট্রেলিয়ায়, ২৩টি নিউজিল্যান্ডে।
২০১৫ বিশ্বকাপকে বলা যায় রেকর্ডের বিশ্বকাপ। এই আসর হয়ে উঠেছিল ব্যাটসম্যানদের দাপট দেখানোর মঞ্চ। সব মিলিয়ে হয় ৩৮ সেঞ্চুরি। ছক্কা হয়েছিল ৪৬৩টি।
ম্যাচের ৩০তম ওভারে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স খেলেন ৬৬ বলে ১৬২ রানের ইনিংস। দ্রুততম দেড়শ রানের আগের রেকর্ড থেকে তার লাগে ১৯ বল কম! জেসন হোল্ডার ১ উইকেট নিতে খরচ করেন ১০৪ রান, বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরুচে বোলিং।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে পার্থে ৬ উইকেটে ৪১৭ রান করে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। সেই ম্যাচে ২৭৫ রানে জেতে স্বাগতিকরা, যা বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও হয় সেবার। সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা ম্যাচে ওঠে ৬৮৮ রান। ক্রিস গেইলের হাত ধরে বিশ্বকাপ দেখে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যানবেরায় ক্যারিবিয়ান ওপেনার করেছিলেন ২১৫ রান। ওয়েলিংটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ২৩৭ রান করেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল। বিশ্বকাপে যা সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড।
টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরির ইতিহাস গড়েন কুমার সাঙ্গাকারা। বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডে ক্রিকেটেই প্রথম। মাহমুদউল্লাহর হাত ধরে নিজেদের পঞ্চম আসরে এসে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেন মাহমুদউল্লাহ।
‘এ’ গ্রুপে দুই স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড।
সব ম্যাচ জিতে সেরা দল হিসেবে শেষ চারে যায় নিউজিল্যান্ড। তাদের বিপক্ষেই আসে অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র হারটি। দুই স্বাগতিক ও বাংলাদেশের সঙ্গে কোয়ার্টার-ফাইনালে যায় শ্রীলঙ্কা।
‘বি’ গ্রুপে আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতের সঙ্গী ছিল পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চার কোয়ার্টার-ফাইনালই ছিল একপেশে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯৪ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেমে যায় ২৫০ রানে। শ্রীলঙ্কাকে ১৩৩ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা পায় বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে নিজেদের প্রথম জয়। পাকিস্তানকে ২১৩ রানে থামিয়ে অস্ট্রেলিয়া জেতে ৬ উইকেটে। ওয়াহাব রিয়াজের দুর্দান্ত স্পেল উত্তেজনা ছড়ালেও ম্যাচের ফলে এর প্রভাব ছিল সামান্যই।
ভারতের বিপক্ষে আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। ২৮ ওভারে ১১৫ রানে ফিরিয়ে দিয়েছিল তিন ব্যাটসম্যানকে। সুরেশ রায়নাকে নিয়ে জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন রোহিত। কিন্তু রুবেল হোসেনের করা ৪০তম ওভারের চতুর্থ বলটি ছিল ফুলটস। ডিপ মিডউইকেট দিয়ে উড়ানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন রোহিত। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ারের সঙ্গে কোনো আলোচনায় না গিয়ে সরাসরি ‘নো’ বল ডাকেন আম্পায়ার। রিপ্লেতে দেখা যায়, ‘নো’ ছিল না রুবেলের বলটি। ‘জীবন’ পান রোহিত। সেই কাণ্ডের পর বোলিংয়ে ছন্দ হারানো বাংলাদেশ পায় তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য। পরে ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরে যায় ১০৯ রানের বড় ব্যবধানে।
‘সেমি-ফাইনালের দল’ নিউজিল্যান্ড এবার থামেনি শেষ চারে। অকল্যান্ডে ডি ভিলিয়ার্সের দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পৌঁছায় ফাইনালে কিউইরা।
অন্য সেমি-ফাইনাল জমেনি মোটেও। সিডনিতে ভারতকে ৯৫ রানে হারিয়ে এক আসর বাদে ফাইনালে পৌঁছায় অস্ট্রেলিয়া।
২৯ মার্চ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মুখোমুখি হয় টুর্নামেন্টের সেরা দুই দল নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।
ফাইনালটাও হয় একপেশে। ফকনার-জনসন-স্টার্কের বোলিং তান্ডবে ১৮৩ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। দলকে টানেন কেবল এলিয়ট। খেলেন ৮২ বলে ৮৩ রানের দাপুটে ইনিংস।
রান তাড়ায় দলকে শুরুতে পথ দেখান ডেভিড ওয়ার্নার। শতরানের জুটিতে অস্ট্রেলিয়াকে টানেন মাইকেল ক্লার্ক ও স্টিভেন স্মিথ। ৭ উইকেটের জয়ে পঞ্চম শিরোপা জয়ের উৎসবে মাতে অস্ট্রেলিয়া।
এক নজরে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ
আয়োজক দেশ : অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড
অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা : ১৪
মোট ম্যাচ : ৪৯
টুর্নামেন্টের ধরণ : রাউন্ড রবিন ও নক আউট পর্ব
চ্যাম্পিয়ন : অস্ট্রেলিয়া
রানার আপ : নিউজিল্যন্ড
সর্বোচ্চ রান : নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল (৫৪৭)
সর্বোচ্চ উইকেট : ২২ উইকেট করে নেন অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ও নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট
ফাইনালে ম্যাচ সেরা : অস্ট্রেলিয়ার জেমস ফকনার
টুর্নামেন্ট সেরা : অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক।