সানিউজ্জামান সরল »
দিনের প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের মুখোমুখি হয়ে হারলেই প্লে অফের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে কুমিল্লার। বাঁচা-মরার এই লড়াইয়ে টস ভাগ্যটা লেখা ছিল কুমিল্লার নামেই। টস জিতে খুলনা টাইগার্সকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় সৌম্য-সাব্বিরদের কুমিল্লা।
টস হেরে আগে ব্যাট করা খুলনা টাইগার্সের উদ্বোধনী জুটি হিসেবে ২২ গজে নামেন দুই দেশীয় প্রতিভা শান্ত ও মিরাজ। এদিনই কোন ম্যাচে প্রথম বারের মতো এই দুজনকে ইনিংস শুরু করতে দেখা যায়। একসাথে ১ম বারের মতো ইনিংস শুরু করে মেরামতের কাজটা বেশ ভালোভাবেই পার করতে শুরু করেন দুজনে।
পাওয়ার প্লে শেষে মিরাজ-শান্তদের ব্যাট থেকে আসে ৪৪ রান। শুরু থেকে দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুজনে। ভালো বল গুলো ডিফেন্স অথবা সিঙ্গেলে পরিণত করা এবং বাজে বল গুলোকে বাউন্ডারিতে পরিণত করার কাজটা সহজেই করে যাচ্ছিলেন। তবে হঠাৎ করেই যেন হোঁচট খেল এ জুটি। নিজের দ্বিতীয় ওভারের ১ম বলে বিনা উইকেটে ৭১ রানের উড়ন্ত সূচনা করা খুলনা শিবিরে আঘাত হানে সৌম্য সরকার। ব্যক্তিগত ৩৮ রান করা শান্তকে ফিরে যেতে হয় সানজামুলের হাতে তালুবন্দী হয়ে।
শান্ত ফিরে যাওয়ার পর ৩ নম্বরে ব্যাট করতে আসেন রুশো। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ওপেনার মিরাজ। শান্ত ফিরে যাওয়ার পরপরই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তিনি। ব্যক্তিগত ৩৯ রান করে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরে যেতে হয় মেহেদি হাসান মিরাজকে। মিরাজ আউট হওয়ার পর খুলনার দলীয় রানে দেখা দেয় কিছুটা মলিনতা।
মলিনতা কাটাতে ব্যাটিংয়ে আসেন কাপ্তান মুশফিক। তবে রুশো-মুশফিক যেন নিজেদের জাত খেলাটা দেখাতে পারছিলেন না। কিন্তু হ্যাঁ, সময়ের সাথে সাথে প্রতিপক্ষ শিবিরে আক্রমণ চালাতে শুরু করেন তারা। দলীয় রান বাড়িয়ে নেওয়ার কাজটা বেশ ভালোভাবেই করে যান দুজনে।
ওয়ারিয়র্স বোলারদের তুলোধুনো করে দুর্দান্ত এক অর্ধশতক তুলে নেন জ্বলে উঠা রুশো। মাত্র ২৬ বলের বিনিময়েই অর্ধশত রান পূরণ করেন এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আসরের ৪র্থ অর্ধশতক তুলে নিয়ে রুশো যেন আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেন। রুশোর সাথে সাথে মুশফিকও নিজের কাজটা দারুণ করেছেন।
মুশফিক ও রুশো ইনিংস সমাপ্ত করে তবেই ড্রেসিং রুমে ফিরেন। তাদের কল্যানেই বিশাল সংগ্রহ পায় খুলনা টাইগার্স। ৭১* করে রুশো ও ২৪* রান করে মুশফিক অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করেন।
১৮০ রানের বিশাল এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন কুমিল্লা ওপেনার। এরপর ব্যাটিংয়ে আসেন কাপ্তান মালান। তবে মালানকেও ফিরে যেতে হয়ে খালি হাতেই। কাপ্তানের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন আগের ম্যাচে দুর্দান্ত অর্ধশতক করা সৌম্য সরকার। সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন শেষ ম্যাচে একাদশে না পাওয়া সাব্বির।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের উদীয়মান দু’জন প্রতীভা যেন নিজেদের সামর্থ্য উজাড় করে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কুমিল্লার ইনিংস। তবে হঠাৎ’ই ঘটলো ছন্দপতন। মিরাজের হাতে তালুবন্দী হয়ে ফিরে গেলেন সৌম্য। একই ওভারে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরে যেতে হয়ে ওয়ারিয়র্স ব্যাটসম্যান মাহিদুল ইসলামকে। ফলে দল পড়ে ভয়ংকর চাপে।
একই ওভারে সৌম্য-মাহিদুল ফিরে গেলেও, ইয়াসিরকে সাথে নিয়ে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান সাব্বির। চাপের মধ্যে দুর্দান্ত এক অর্ধশতকও তুলে নেন তিনি। মাত্র ৩৩ বল থেকে আসরের ১ম অর্ধশতক তুলে নেন সাব্বির। অর্ধশতকের পর যেন আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন ‘ব্যাড বয়’ খ্যাত সাব্বির রহমান।
সাব্বিরকে দেখে যেন ইয়াসির অনুপ্রাণিত হলেন এবং তিনিও শুরু করলেন তাণ্ডব। ধীরে ধীরে বেশ শক্ত পোক্তই এক জুটি গড়ে উঠলো সাব্বির ও ইয়াসিরের মধ্যে। সাব্বিরের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখা কুমিল্লার মাথায় যেন হঠাৎ করেই আকাশ ভেঙে পড়লো। ৩৯ বলে ৬২ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে রুশোর হাতে তালু বন্দি হয়ে ফিরে যেতে হয়ে সাব্বিরকে।
কুমিল্লা সমর্থকরা সাব্বিরের আউটের পর একরাশ হতাশা নিয়ে ইয়াসিরের ব্যাটে জেতার স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করবে করবে ভাব, তার মধ্যেই সেই স্বপ্নের গুড়ে বালি। আলিসের হাতে তালু বন্দি হয়ে ফিরে যান ইয়াসির। ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
অবশেষে হলোও তাই। ৩৪ রানে হেরে যায় সাব্বির-সৌম্যদের কুমিল্লা। আশা জাগিয়েও পারলো না কুমিল্লা। সেই সাথে প্লে অফের স্বপ্নও যেন ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। আজকের ম্যাচ জিতলে টিকে থাকতো প্লে অফে যাওয়ার সুযোগ। কিন্তু তা আর হলো কই?
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
টস- কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স
খুলনা টাইগার্সঃ- ১৭৯/২ (২০)
রুশো ৭১* (৩৬), মিরাজ ৩৯ (৩৯)
সৌম্য ৩৯/১ (৪)
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সঃ- ১৪৫/১০ (১৮.২)
সাব্বির ৬২ (৩৯), ইয়াসির ২৭ (১৫)
রবি ফ্র্যাইলিঙ্ক ১৬/৫ (৪)
ফলাফল- ৩৪ রানে জয়ী খুলনা টাইগার্স।