নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
মাশরাফি বিন মর্তুজাকে বলা হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক। অনেকেই হাবিবুল বাশার সুমনকে সেরা অধিনায়ক হিসেবে আখ্যা দিলেও স্বয়ং হাবিবুল বাশার সুমন মনে করেন মাশরাফিই বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক। কিন্তু সেই মাশফিই যেন এখন এক ঘরকোনা মাশরাফিতে পরিণত হয়েছে। মিডিয়া ও মানুষের সামনে একসময়ের সদা হাস্যৌজ্জ্বল মাশরাফিই যেন হয়ে গেছেন এক নিরব নিথর মাশরাফী। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে মাঠের ক্রিকেট থেকে অনেকটা দূরে মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে শুধু মাঠের ক্রিকেটের বাহিরেই নয় এক সময়ে মিডিয়ার সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ মাশরাফিই এখন দূরে মিডিয়া থেকে। নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন মাঠের বাহিরেও ক্রিকেটের সকল কার্যক্রম থেকে।
ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা মাশরাফি আসন্ন বিপিএলকে সামনে রেখে মাঠে ফিরেছেন গত ৩০ নভেম্বর। দীর্ঘ ৫ মাসের বেশি ক্রিকেট ও মিডিয়া থেকে দূরে থাকা মাশরাফিকে মাঠে পেয়ে হাসি ফুটেছিলো ক্রীড়া প্রেমীমানুষ ও সাংবাদিকদের মুখে। তবে সেই খুশির হাসিতে ধূসর আলো দেখা গেলো পরক্ষণেই। দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে ফেরার দিনে এক সাংবাদিককে বলে বসলেন ক্রিকেট নিয়ে কোন কথা নয়। সেই একজন থেকে পরোক্ষণেই এই বার্তা ছড়িয়ে পড়লো বাকি সব সাংবাদিকদের মাঝে। ইতিমধ্যেই সাংবাদিকেরা বুঝে নিয়েছেন কোন ইস্যুতেই কোন বলবেন না মাশরাফি। মিডিয়া ফ্রেন্ডলি ও হাস্যৌজ্জ্বল মাশরাফির এমন অবস্থা দেখে ফিসফাস শুরু হয়ে গেলো সাংবাদিকদের মাঝে৷ প্রশ্ন উঠলো কবে এমন অবস্থা থেকে মুক্ত হবেন মাশরাফি আর কবেই বা দেখা মিলবে প্রাণবন্ত মাশরাফিকে।
যে অবস্থা নিয়ে ফিসফাস শুরু হয়েছে সে অবস্থাটা আসলে কেমন? মাশরাফিকে যারা খুব কাছে থেকে দেখেছে তারা অবশ্য বলতে পারবেন তিনি কেমন। রিপোর্টের প্রয়োজনে যারা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের শরণাপন্ন হয়েছেন তাদের কাছে আজকের মাশরাফি ও সেই আগের মাশরাফি পুরোটাই ভিন্ন। যে মাশরাফিকে সবসময় প্রাণবন্ত ও হাস্যৌজ্জ্বল দেখতো সেই মাশরাফিকেই কি দেখছে তারা ঘরমুখো ও আড্ডা থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে। গত কয়েক মাসে মাশরাফিকে খেয়াল করলেই দেখা যাবে এখনকার মাশরাফি ও পূর্বের মাশরাফির মাঝে পার্থক্য।
দীর্ঘ ৫ মাসের মতো হলো, মাঠের ক্রিকেটে মাশরাফির বিচরণ নেই। এমনকি মাঠের ক্রিকেটের পাশাপাশি মাঠের বাহিরেও ক্রিকেটীয়, কোন কার্যক্রমে তাঁর বিচরণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পরে ক্রিকেট থেকে মোটামুটি নিজেকে গুটিয়েই নিয়েছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো বাংলাদেশের কোন ওয়ানডে ম্যাচ না থাকা। কোন ম্যাচ না থাকায় পরিবারকে বেশ ভালোভাবেই সময় দিয়েছেন মাশরাফি। এছাড়া নিজের নতুন গন্তব্য রাজনীতির মাঠেও সময় দিয়েছেন মাঝে মাঝে। তবে সেটা হয়তো দুই একবার কিন্তু তবুও কেমন জানি রংহীন এক মাশরাফিকে দেখা গেছে গত কয়েক মাসে।
বিশ্বকাপের পর কোন ওয়ানডে ম্যাচ না থাকায় অনুশীলনেও দেখা যায়নি মাশরাফিকে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এই কয় মাসে কোন মিডিয়াকে কাছে ভিড়তে দেননি মাশরাফি। বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরেছেন গত ৭ জুলাই এর পর কোন মিডিয়ার সামনে মুখ খুলেননি মাশরাফি। প্রতিটি সিরিজ শেষে দল নিয়ে কথা বলেন অধিনায়ক কিন্তু এবার বিশ্বকাপ শেষেও কি না কোন কথা বলেননি মাশরাফি। শত চেষ্টা করেও কোন ইস্যুতেই মিডিয়ার দিকে ভেড়াতে পারেননি মাশরাফিকে। মিডিয়ার সামনে কথা বলানো তো দূরের কথা মাশরাফিকে খুঁজে পাওয়াই ছিলো যেন আধাঁরে চোখ বেঁধে কাউকে খোঁজার মত।
বিশ্বকাপে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা। পুরো বিশ্বকাপে পেয়েছেন কেবল একটি মাত্র উইকেট। বিশ্বকাপে এমন অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে ওয়ানডে কাপ্তানকে। বিশ্বকাপের এই অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের সাথে বিশ্বকাপের পর নতুন করে যোগ হয়েছিলো মাশরাফির অবসর ইস্যু। আর যেখানে অনেক বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় মাশরাফিকে। কারন অবসর নিয়ে এখনো ভাবছেন না মাশরাফি। অনেকেই সমালোচনা করেন মাশরাফির, তবে এসব সমালোচনা কিংবা কথা একটুও গায়ে মাখেননি মাশরাফি। বরং এসব থেকে নিজেকে একদমই আড়াল করে রেখেছিলেন।
এখানেই শেষ নয় এরপর পড়তে হয় আরও বিব্রতকর অবস্থায়। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের পর মাশরাফির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তিনি নাকি বিশ্বকাপ চলাকালীন ড্রেসিং রুমের কথা ফাঁস করেছিলেন সাংবাদিকদের কাছে। এ নিয়ে খবরও প্রকাশ করেছিলো একটি সংবাদপত্র। এমন খবরের পর বেশ হতাশ হয়েছিলেন মাশরাফি নিজে। বিশ্বকাপে অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সও এমন সব অভিযোগের পর একদম হতশ্রী সময় পার করছিলেন মাশরাফি। এমন অচেনা সময়ের মাঝে এর আগে কখনো মাশরাফিকে পড়তে হয়েছিলো কি না হয়তো মাশরাফি নিজেও জানে কি না সন্দেহ আছে। আর তাই তো ক্রিকেট কার্যক্রম, মাঠের ক্রিকেট ও মিডিয়াকে একদমই দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন মাশরাফি। লম্বা সময় পর মাঠে ফিরলেও দেখা মিলছে না সেই পুরানো মাশরাফিকে।
ক্রিকেট মাঠে না থাকা, অনুশীলনে না আসা ও জিমে না আসায় ওজন বেড়ে গিয়েছিলো মাশরাফির। রাজনীতি ও পরিবারকে সময় দেয়ার কারণে ফিটনেসের অবস্থা হয়েছিলো একদমই নাজেহাল। তবে আসন্ন বিপিএলকে সামনে রেখে অনুশীলনে ফিরেছেন মাশরাফি। ইতিমধ্যে নিজেকে ফিট করতে ১০ কেজি ওজনও কমিয়েছেন তিনি। এবারের বিপিএলে ঢাকা প্লাটুনের হয়ে মাঠ মাতাবেন তিনি। ঢাকা প্লাটুনের অধিনায়কের দায়িত্বের ভারও পড়েছে মাশরাফির কাঁধে। তবে অনুশীলনে ফিরে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেট নিয়ে কোন কথা হবেনা। হাজারও ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ ও সাংবাদিকদের মাঝে এখন প্রশ্ন, এমন অবস্থা থেকে কবে মুক্ত হবেন মাশরাফি, কবেই বা দেখবো একজন প্রাণবন্ত মাশরাফিকে। আদৌ কি প্রানবন্ত মাশরাফির দেখা মিলবে?