নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডেস্ক »
স্বপ্ন দেখেছেন কখনো? আমি ঘুমন্ত স্বপ্নের কথা বলছি নাহ। আমি বলছি সেই স্বপ্নের কথা যেটা আমরা জেগে জেগে দেখি। প্রতিদিন হাজারো স্বপ্ন বুনা হয়, আবার হাজারো স্বপ্ন নিভে যায়। ঠিক তেমনি আজ শোনাবো এক স্বপ্নবাজের কথা, যার স্বপ্ন আজ সত্যি হতে চললো কঠোর সাধনার মধ্য দিয়ে। আজ এক কিশোরের গল্প শোনাই। যার জন্ম উত্তর প্রদেশের এক ছোট গ্রাম ভাদোহি তে। ছোটকাল থেকেই বেড়ে উঠেছিলো ক্রিকেট উন্মাদনায়। ক্রিকেটের প্রতি অন্যরকম একটা আকর্ষণ ছিলো তার।
সে এক রূপকথার নায়ক, স্বপ্ন যার বড় ক্রিকেটার হওয়া। জয় করবে ক্রিকেট রাজ্য। কিন্তু পথটা যে বিশাল, আর সেই পথ পাড়ি দিতে হলে যেতে হবে সুদূর মুম্বাই। স্বপ্ন মানব শচীনের দেশে। ক্রিকেটের জাদু শহর বললেই বোধহয় বেশি মানায়৷ সঙ্গে ছিলো বাবার সাহচর্য। বাবার হাত ধরে ছোট কিশোর চললো স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে। এসে পড়লো মহা বিপদে। থাকার জন্য যে তার বাসস্থান চাই। এ-ই অচেনা শহরে কে করবে সাহায্য?
কিছুদিন একটা ডেইরী ফার্মে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু ভাগ্যদোষে জায়গা হাতছাড়া হলো। এরপর গেলো এক কাকার বাড়ি। সেখানেও বেশিদিন ভাগ্য সহায় হলোনা। অবশেষে কাকার দেখানো পথ ধরে ঠাঁই মিললো আজাদ ময়দানে। কখনো তাঁবুতে,কখনোবা খোলা আকাশের নিচে এভাবেই কাটতে লাগলো সময়। ময়দান সংলগ্ন একটি স্কুলে ভর্তি হলো সে। ক্রিকেট যার মনে-প্রাণে বাস করে, তাকে কি ক্লাসের চার দেয়ালে আটকে রাখা যায়? যশস্বী ও তেমনি ক্লাসের চাইতে মাঠে বেশি সময় দিতো। সারাদিন কিশোর মন ক্রিকেটেই পড়ে থাকতো।
কিন্তু এখানেও বাঁধলো এক বিপত্তি। বাবা ফিরে গেলেন। একা যশস্বী ক্ষিধের তাড়নায় শুরু করলো পানি পুরি বিক্রির কাজ। কি আর করা? ক্ষুধাতো মিটাতেই হবে,ক্রিকেটে অন্তরের জ্বালা মিটলেও কি ক্ষুধার জ্বালা মিটে? তাই সারাদিন ক্রিকেট খেলার পর সাঁঝের বেলা শুরু হতো তার জীবিকার তাগিদে সংগ্রাম। পাশাপাশি যখন ময়দানে খেলা হতো তখন কখনো বা স্কোরকার্ড লেখা,আবার কখনো বা ‘বল বয়’ হিসেবে কাজ করতো।
ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা যশস্বীকে কতদূর নিয়ে যাবে সে ব্যাপারে তখনো সে ছিলো অজ্ঞাত। জীবনের চাকা ঘুরে যায় গুরু জ্বালা সিং এর নজরে আসার পর। ২০১৩ সালে এক শীতের সকালে আজাদ ময়দানের ‘এ’ ডিভিশনের বোলারদের বিপক্ষে ব্যাটিং করছিলো যশস্বী। স্যাঁতসেঁতে উইকেটে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের দারুণ সব স্ট্রোকের প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ হলেন জ্বালা সিং। কাছে ডেকে সব শুনলেন। এ যেন নিজের শৈশবকে দেখছেন জ্বালা সিং। ঠিক করলেন এ-ই কিশোরের স্বপ্নপূরণের পথ সুগম করবেন।
নিজের বাসায় আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি ক্রিকেটের পাঠ শেখালেন নিজ হাতে। যশস্বীর নতুন জীবন শুরু হলো। অনুশীলন শুরু করার সপ্তাহ দুয়েক পরই জাইলস শিল্ডের এক ম্যাচে ব্যাট হাতে ৩১৯ এবং বোলিংয়ে ১২ উইকেট নেন যশস্বী। টুর্নামেন্টে এরপর আরও একটি ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি আসে তার ব্যাট থেকে। জীবনধারা পাল্টে গেলো একেবারেই। দারুণ সব পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে সবার নজরে আসে। জায়গা করে নেয় শ্রীলংকা সফরের ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। প্রথম সফরেই করে সেঞ্চুরি।
এরপর ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের দলেও। বাংলাদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ রান করে জেতে টুর্নামেন্ট সেরার খেতাব। গত জানুয়ারিতে মুম্বাইয়ের হয়ে অভিষেক হয়ে যায় রঞ্জি ট্রফিতে। ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে যুব টেস্টে খেলে ১৭৩ রানের ইনিংস। যুব ওয়ানডেতে তার গড় এখন ৫৩.১৬।
বিজয় হাজারে ট্রফির পারফরম্যান্সে আসে বিরাট সাফল্য । এই টুর্নামেন্ট দিয়েই গত ২৮ সেপ্টেম্বর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক। প্রথম ম্যাচে করলো ৪৪। পরের ম্যাচেই ১১৩ রান, পাশাপাশি ১টি উইকেট। তৃতীয় ম্যাচে ২২ করার পর টানা দুই ম্যাচে ১২২ ও ২০৩। এ যেন নতুন রত্ন পেলো ভারত।
খুশিটা দিগুণ হয় যখন প্রিয় গুরু বললেন, ‘তুই এখন গগলস পড়তে পারিস’। এর আগে গুরুর নিষেধাজ্ঞা মেনে কখনো চোখে গগলস পড়েন নি। নিজের সব কৃতিত্ব লিখে দিলো গুরুর নামে। গুরু জ্বালা সিং সবসময় সবকিছুর উর্ধ্বে বালকের কাছে।
গুরুর ব্যাপারে সম্প্রতি ক্রিক ইনফো ও ভারতীয় পত্রিকায় দেওয়া তার বক্তব্য :
‘তিনি আমার সবকিছুর দেখভাল করতেন। আমার কাছে তিনি ঈশ্বরের মতো এবং আমি তাকে সবসময় তাই ভেবে যাব। আমার এই পর্যন্ত আসার পেছনে একমাত্র কারণ তিনি। তবে আমার জন্য এটা শুধুই শুরুর মঞ্চ। উপরে উঠতে গেলে আমার সামনে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।”
জিতে গেলো স্বপ্ন। স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে গেলো কয়েক ধাপ এ-ই তরুণ। সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে ভারতের সেরা রত্ন দের একজন হয়ে উঠবে এ-ই স্বপ্নবাজ। প্রিয় আইডল লিটল মাস্টার শচীন। তার সম্পর্কে বলেন –
‘ উনাকে আমার ভালো লাগে। তাই উনার স্টেট ড্রাইভ ফলো করি’।
আগামীর জন্য রইলো শুভ কামনা। স্বপ্নগুলো এভাবেই সত্যি হোক বারে বারে। তরুণ প্রজন্ম ও দীক্ষা নিক যশস্বীর কাছ থেকে।