দেশের ক্রিকেটে আধুনিকতা এনেছিলেন যিনি!

সুফিয়ান আল হাসান »

জেমি সিডন্সকে মনে আছে? আপনি যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট এর একনিষ্ঠ ভক্ত হন তাহলে মনে থাকারই কথা। শুধু আমাদের নয় আমাদের ক্রিকেটাররাও মনে রেখেছে সিডন্সকে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন সিডন্সের ভূমিকা ছিলো প্রধান কোচের। ২০০৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হেড কোচের দায়িত্বে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান এই সাবেক ক্রিকেটার। ২০০৭ থেকে বাংলাদেশ দলের দায়িত্বে থাকলেও তার সোনালী সময় টা ছিলো ২০০৮ এর পর থেকে।আজকের সাকিব, তামিম ,মুশফিকদের পিছনে সিডন্সের অবদান যে কতোটা সেটা তাদের সাথে সিডন্সের বিষয়ে কথা বললেই বেড়িয়ে আসে। এখনো তো বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তারা বলে বেড়ায় সিডন্সের কৃতি গাঁথা।

আর বলবেই বা না কেন? সত্যকে তো আর অস্বীকার করা যায় না। আধুনিক ক্রিকেটের সাথে বাংলাদেশের পরিচয় তো এই সিডন্সের হাত ধরেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট এর বদলে যাওয়ার শুরু তো এই সিডন্সের হাতেই। একজন অস্ট্রেলিয়ান হয়েও তিনি খুব সহজে মিশে গিয়েছিলেন এদেশের ঐতিহ্যের সাথে। ২০০৭-১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সাফল্যের নকশা এঁকেছেন নিজ হাতে। ২০১১ সালে বিদায়ের সময় সিডন্স আরো থাকতে চাইলেও বিসিবি সাড়া দেয়নি তাঁর আহ্বানে, পড়ে তিনি ব্যাটিং কোচ হয়ে আসতে চাইলে তাতেও রাজি ছিলো না বোর্ড কর্তারা । এর কারণ ক্রিকেট ভক্তদের কাছে আজও অজানা।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সিডন্স অধ্যায়ের শুরু হয়েছিলো ২০০৭ সালে। কিন্তু তাঁর অধীনে সাফল্য আসতে শুরু করে ২০০৮ সালের অক্টোবরের পর থেকে। আইসিএলের লোভনীয় অফার বাংলাদেশ ক্রিকেটকে করে দিয়েছে লন্ডভন্ড। অর্থ লোভে আইসিএল খেলতে ভারতের পথে এদেশের ১৪ তারকা ক্রিকেটার। তবে কি কালের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট?

এমন প্রশ্ন তখন হাজারো ভক্তের মনে তখনই বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে আসে নিউজিল্যান্ড। তরুণ সাকিব, তামিম, মুশফিকদের নিয়ে আশরাফুলের নেতৃত্বে একটা দল গড়লেন সিডন্স। প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত। মাশরাফির গতি, রাজ্জাক সাকিবদের ঘূর্ণির সাথে আশরাফুল জুনায়েদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৩ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নবীন দলটি। তবে জেতা হয়নি সিরিজ পরের দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতে নেয় কিউইরা। টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশ পেয়েছিল একটি ড্র। এই সিরিজ থেকেই শুরু বাংলাদেশ ক্রিকেটের বদলে যাওয়া।

নিউজিল্যান্ড সিরিজে সিডন্স শিষ্যরা নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিলেও বাজিমাত করেছিলেন ২০০৯ সালে। সে বছর ১৯ ওয়ানডেতে মাঠে নেমে ১৪ টিতে জয় পায় সাকিব – তামিমরা। টেস্টে তো বাংলাদেশ ছিলো আরো উজ্জল, তিন ম্যাচে তিন টিতেই জয় তুলে নেয় টাইগাররা। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক সিরিজ জয়, ২০১০ সালে ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে জয়, ২০১১ বিশ্বকাপে আবারো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় ছিলো সিডন্সের আমলে বাংলাদেশের অন্যতম সাফল্য।

সিডন্সের সাফল্যের বিপরীতে কাটা ছিলো কেবল ২০১১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ ও সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানের অলআউট হওয়া। সিডন্সের সাফল্য আপনি কোন পরিসংখ্যানের পাতায় লেখা পাবেন না, সিডন্সের হাত ধরেই নতুন রূপ পেয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আধুনিক ক্রিকেট এর রূপকার তামিম – মুশফিকদের এই প্রিয় কোচই।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »