তামিমের সঙ্গে ওপেন করতে না পারার আক্ষেপ থেকে যাবেঃ নাফিস ইকবাল

সাকিব শাওন »

বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য নাফিস ইকবাল একটি বড় দীর্ঘশ্বাস, সাথে একটি বড় আক্ষেপের নাম। অথচ তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল চকচকা রঙিনের মতো কিংবা বলা যায় আলোর ঝলকানির মতো। একটা সময় জাতীয় দল ওপেনার সংকটে ভুগতে থাকে তখন নাফিসকে পেয়ে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলো। নাফিস ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুতেই যে বিখ্যাত সব ইনিংস খেলেছেন তা কিন্তু নয়। তবে তার খেলা সেসব ছোট্ট ছোট্ট ইনিংসের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল আগামী দিনের সম্ভাবনাময়ী এক ক্রিকেটার। কিন্তু ভাগ্য আর ইঞ্জুরির কারণে ক্যারিয়ার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি নাফিস ইকবালের। ক্যারিয়ার জুড়ে করেছেন ৮২৭ রান। ফিফটি করেছেন চারটি সাথে সেঞ্চুরি রয়েছে একটি। চার মেরেছেন ১০৪ টি, ছয় মেরেছেন ৩টি।

বর্তমানে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর কারণে মাঠের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফরা সবাই ঘরবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। আর এই অবসর সময়টাতে
নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের প্রতিবেদক সাকিব শাওনের সাথে নিজের বর্তমান কোচিং ক্যারিয়ার এবং ক্রিকেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার নাফিস ইকবাল।

নিউজ ক্রিকেটঃ বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনের লম্বা এই সময়টা কিভাবে অতিবাহিত করছেন?

নাফিস ইকবালঃ সত্যি বলতে দিনগুলি খারাপ যাচ্ছে না, আমরা তো যৌথ পরিবার সেজন্য সবাই একসাথেই থাকছি বেশ ভালো যাচ্ছে সময়টা। আর বিকাল বেলায় নামাযের পর ছাদে ক্রিকেট অনুশীলন করি সাথে ছেলে থাকে। সবমিলিয়ে বেশ ভালো সময় কাটছে।

নিউজ ক্রিকেটঃ ২০০৪ সালের অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা রান সংগ্রাহক ছিলেন আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখেন?

নাফিস ইকবালঃ সেই বিশ্বকাপের আগে আমরা খুবই ভালো অনুশীলন করেছিলাম। তখনকার সময়ে সুযোগ সুবিধা একটু কম ছিলো। তারপরো আমরা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আর ভালো প্রস্তুতির কারণেই ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পেরেছিলাম। ৮ ম্যাচে ৩ ফিফটিতে ৫০.৮৩ গড়ে করেছিলামম ৩০৫ রান। এটা টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান ছিলো।

নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট কোনটি ছিলো?

নাফিস ইকবালঃ ২০০৫ ঢাকা টেস্টে জিম্বাবুয়ের সাথে ৪৭০ মিনিট ক্রিজে থেকে একটি সেঞ্চুরি করেছিলাম। ১২১ রানের ইনিংসটা খেলতে ৩৫৫ বল লেগেছিলো আমার। পরবর্তিতে ম্যাচটি ড্র হয় যার ফলে সিরিজটি আমরা জিতে নিয়েছিলাম। আর ঐই ম্যাচে আমি ম্যাচসেরা হয়েছিলাম। সুতরাং বলতেই পারি এই ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো।

নিউজ ক্রিকেটঃ দেশের মধ্যে প্রিয় ক্রিকেটার কে?

নাফিস ক্রিকেটঃ একেক বিভাগে একেক জনকে পছন্দ আমার। ব্যাটিং হিসেবে তামিম, মুশফিকের খেলা খুব উপভোগ করি। অলরাউন্ডারের ক্ষেত্রে সাকিবের খেলা আমার খুব ভালো লাগে। পেস বোলিংয়ে অবশ্যই মাশরাফি। কারণ সত্যিকারের মাশরাফি কেমন ছিলো সেটা আমি খুব কাছ থেকেই দেখেছি। তখন খুব জোরে বল করতো মাশরাফি।

নিউজ ক্রিকেটঃ ভালো শুরুর পরেও আপনার ক্যারিয়ার দীর্ঘ হলো না এর কারণ কি?

নাফিস ইকবালঃ ২০০৭ সালে মুখে ব্যাথা পেয়েছিলাম বেশ কিছুদিন মাঠের বাইরে ছিলাম। এরপর আবার পায়ে ইঞ্জুরি হয় যার কারণে অনেক পিঁছিয়ে গিয়েছিলাম। বছর দেড়েক মাঠের বাইরে ছিলাম তারপর আর ভালো কোন সুযোগ আসেনি। মূলত ইঞ্জুরির কারণেই দ্রতু আমার ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে।

নিউজ ক্রিকেটঃ কাচ্চি বিরিয়ানি নাকি তেহেরী পছন্দ?

নাফিস ইকবালঃ বিরিয়ানির জন্য কখনোই খুব একটা বেশি আগ্রহী আমি না। তবে পোলাও আর রোস্ট খুব পছন্দ আমার।

নিউজ ক্রিকেটঃ ছেলেকে কি ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে চান?

নাফিস ইকবালঃ দেখেন আমি আমার ছেলেকে ভবিষ্যতে একজন ক্রিকেটার হিসাবে দেখতে চাই বিষয়টা এমন না। এটা পুরোপুরি ছেলের উপরই ছেড়ে দিয়েছি। বাবা চাচারা ক্রিকেট খেলেছে বলে যে ওকেও ক্রিকেট খেলতে হবে এমনটি না। ছেলে যদি মনে করে ক্রিকেটার হতে চাই কিংবা যদি মনে করে অন্য কিছুও হতে চাই তাহলেও সমস্যা নেই সবকিছুতেই আমি ওকে সাপোর্ট করবো।

নিউজ ক্রিকেটঃ কোচিং ক্যারিয়ারের সময়টা কেমন উপভোগ করেন?

নাফিস ইকবালঃ আলহামদুলিল্লাহ্। ম্যানেজার হিসেবে বিপিএলে খুলনার হয়ে প্রথম এই পেশায় পথচলা শুরু হয়েছিলো আমার। এরপর এ টিমে কাজ করেছি, মুম্বাইতে কাজ করেছি সর্বশেষ বিপিএলেও আমি ম্যানেজার হিসেবে খুলনার দলে ছিলাম। বর্তমানে সাউথ জোনে কাজ করছি।

নিউজ ক্রিকেটঃ আপনার ব্যাটিং আইডল কে?

নাফিস ইকবালঃ মার্ক ওয়াহ। কেনো জানি ছোট বেলা থেকেই তাকে আমার খুবই ভালো লাগে। পরাবর্তিতে তাকে আমি অনুসরণ করতাম।

নিউজ ক্রিকেটঃ ছোট ভাই জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক বিষয়টি আপনার কাছে কতটা গর্বের?

নাফিস ইকবালঃ অবশ্যই এটা আমার কাছে অনেক বড় একটি গর্বের বিষয়, এমনকি আমার পরিবারের কাছেও। যেকোন ফরম্যাটে জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়া অনেক বড় একটি অর্জন। আমি আশাকরি তামিম এই দায়িত্বটি ভালোভাবে পালন করবে। আর সাথে বিশ্বাস ও করি অধিনায়ক হিসেবে সে ভালো কিছু করবে।

নিউজ ক্রিকেটঃ জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ কি?

নাফিস ইকবালঃ বড় আক্ষেপ দুই ভাই একসাথে আন্তজার্তিক ক্রিকেটে ওপেনিং করতে না পারার। যদি এক ম্যাচের জন্য হলেও একসাথে ওপেন করতে পারতাম তাহলেও খুব ভালো লাগতো। তবে ঘরোয়াতে অনেক বার একসাথে ব্যাটিং করেছি বেশ ভালো জুটিও আমরা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।

নিউজ ক্রিকেটঃ যদি ক্রিকেটার না হতেন তাহলে কি হতেন?

নাফিস ইকবালঃ আসলে এরকম কোন কিছুই তখন চিন্তা করিনি। খুব কম বয়সেই ত ক্রিকেটার হয়ে গিয়েছিলাম, এজন্য আলাদা করে কিছু ভাবনায় আসেনি। তবে ব্যবসায়ী হতাম হয়তো।

নিউজ ক্রিকেটঃ নিউজ ক্রিকেট ২৪ ডটকমের
পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

নাফিস ইকবালঃ আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ এবং একই সাথে নিউজ ক্রিকেটের সকল পাঠকদের জানাই শুভেচ্ছা।

নিউজটি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন »

মন্তব্য করুন »